সালমানের সঙ্গে মায়ের শেষবার যে কথা হয়েছিল
সালমান শাহ মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তার আগের দিন ৫ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর সঙ্গে তাঁর মা নীলা চৌধুরীর শেষবার কথা হয়। সেদিন ছেলের সঙ্গে শেষ কথা বলার স্মৃতি এখনো স্পষ্ট নীলা চৌধুরীর কাছে। সোমবার প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সেই স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সালমান শাহর মা। বারবার তিনি শুধু ‘আমার ইমন’ ‘আমার ইমন’ বলতে থাকেন। একটু সময় নিয়ে নীলা চৌধুরী ছেলের সঙ্গে শেষ কথা বলার স্মৃতি বলে চলেন।
সেদিন ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সাল। নায়ক সালমান শাহ জীবিত। সেদিনের সেই স্মৃতি স্মরণ করে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আগের দিন আমি ইমনকে বলেছিলাম, ইমন, তুমিও আমাদের সঙ্গে সিলেট চলো। তাহলে তোমার একটু বিশ্রাম হবে। দুই–তিন দিন সিলেটে কাটিয়ে আসলে তোমার ভালো লাগবে। ইমন আমাকে বুঝিয়ে বলল, “মা, এত মানুষের লগ্নি আমার কাছে। বিশ্রাম তো দূরে থাক, আমার মরারও সময় নেই আম্মা। তুমি সিলেট থেকে ঘুরে আসো। পরে তোমাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক যাব। এক মাসের ভ্রমণে যাব। তখন এক মাস শুধুই বিশ্রাম নেব।’”
কথাগুলো একনিশ্বাসে বলেই টেলিফোনের ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। বেশ কিছু সময় কথা বলতে পারেন না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নীলা চৌধুরী জানান, ‘যে ছেলে আগের দিন বলে মরারও সময় নেই, সেই ছেলে পরের দিন সকালে আত্মহত্যা করে ফেলে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে? ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না। এত কিছু বলার পর কি আমি ঘুমাইতে পারি? ছেলেকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না।’
সালমানের সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। সালমান তাঁর জীবনের সব ঘটনাই মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতেন। মাকে না বলে থাকতে পারতেন না সালমান শাহ। একদিন সালমান শাহর হাতে–পিঠে অনেক কামড়ের দাগ দেখে মা নীলা চৌধুরী জিজ্ঞাসা করেন, কিরে ইমন, এগুলো কিসের দাগ? সালমান শিশুর মতো মায়ের কাছে সবকিছু বলে দিয়েছিলেন সেদিন। মায়ের সব কথা শুনতেন সালমান। এ প্রসঙ্গে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সাদামনের মানুষ বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই ছিল ইমন। কারও কষ্ট সে দেখতে পারত না। মিডিয়ার পরিচিত সবার নিয়মিত খবর নিত। কার কী সমস্যা জিজ্ঞাসা করত, সাহায্য করত। কে তারকা কে এক্সট্রা, ইমন কোনো দিন ভেদাভেদ করত না। কাউকে ছোট করে দেখেনি। একবার ইমনকে বললাম, কিরে ডলি জহুর আমার বন্ধু, ওকে তোর ছবিতে নিস না কেন? পরে ডলিকে ওর ছবিতে নিয়েছে। অনেক গরিব মেয়ে ছিল যারা অভিনয় করতে না পারলে খেতে পারে না। তাদেরও ইমন কাজের ব্যবস্থা কিরে দিয়েছে। যাকে দরকার, তাকে দিয়েই ইমন কাস্টিং করিয়ে নিত।’
ইমন একসময় কাজ করতে গিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে যায়। সে সময় শপিং দূরে থাক, খাবার টাইমও পেত না ইমন। তখন আমি নিজে ওর শপিং করে দিতাম—বললেন সালমানের মা। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে সালমানের পছন্দের খুবই মিল ছিল।’ কথা থামিয়ে দেন নীলা চৌধুরী। আবারও গলা জড়িয়ে আসে। সালমান শাহর মায়ের অনেক কথা বেশ কিছু সময় বুঝতে পারি না। শুধু এটুকু বোঝা যায়, ‘অল্প বয়সে আমার ছেলেকে কেন যেতে হবে। কেন কিছু মানুষ তাকে হত্যা করল। কারও তো কোনো ক্ষতি করে নাই সালমান।
‘প্রযোজকদের সব ছবি নিয়ে সমানভাবে ভাবত সালমান শাহ। নিজেই ছবির দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিত ইমন। প্রতিটা ছবির জন্য সালমানের কত যে পরিশ্রম, সেটা তার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি দেখলেই বোঝা যায়।’ সালমানের মা বলেন, ‘মিডিয়ার কেউ বলতে পারবে না সালমানের মধ্যে এতটুকু বেয়াদবি ছিল। আমার বোকা ছেলেটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’ সালমানের সর্বশেষ স্মৃতি নিয়ে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘ইমনের গলা থেকে ৪ ভরি স্বর্ণের চেনটা আমি নিয়েছিলাম। সেই চেন সব সময় আমি সঙ্গে সঙ্গে রাখি। এটাই আমার ইমন।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পিবিআই আবারও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। এই প্রতিবেদনেও বলা হয়, সালমান–শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই প্রতিবেদন সালমানের পরিবার এবং ভক্তরা নাকচ করে দিয়েছে। মিথ্যা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সালমান ভক্তরা দেশব্যাপী মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন। সালমানের মা তদন্ত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করে ১০ মার্চ লন্ডন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেন তাঁর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।