ভেসপার বিক্রি বাড়িয়েছিল যে ছবি

রোমান হলিডে ছবিতে গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্ন
রোমান হলিডে ছবিতে গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্ন

রাজকুমারীর সঙ্গে সাংবাদিকের প্রেম! বড় পর্দায় এমন প্রেম দেখা গেছে অনেক আগেই—সেই ১৯৫৩ সালে। সে বছরের ২৭ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল বিখ্যাত মার্কিন ছবি রোমান হলিডে। উইলিয়াম ওয়াইলারের পরিচালনায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন হলিউডের দুই নামকরা অভিনয়শিল্পী—অড্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেক। প্রিন্সেস আনের সঙ্গে রিপোর্টার জো ব্র্যাডলির সেই রসায়ন এখনো ভোলেননি চলচ্চিত্রপাগল দর্শক ও সমালোচকেরা। পৃথিবীর অন্যতম এই রোমান্টিক কমেডি ছবির ১০টি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। 

১. 

গ্রেগরি পেক রোমান হলিডের আগে ১৮টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফেলেছিলেন, এর মধ্যে চারটিতে তিনি অস্কার মনোনয়নও পান। অন্যদিকে অড্রে হেপবার্ন ছিলেন হলিউডে প্রায় নতুন। গ্রেগরি পেকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ ছিল, ছবির নামের আগে তাঁর নামটি বড় করে থাকবে। কিন্তু কিছুদিন শুটিং করার পরই গ্রেগরি নিজের এজেন্টকে ডেকে বলেন, তাঁর নামের সঙ্গে অড্রের নামটিও বড় করে রাখতে হবে। এজেন্ট অবাক! গ্রেগরি বললেন, ‘এই মেয়েটি তাঁর প্রথম পারফরম্যান্সেই অস্কার পেতে যাচ্ছে।’ বলা বাহুল্য, গ্রেগরি পেকের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল।

২.

উইলিয়াম ওয়াইলার স্ক্রিন টেস্টেই বুঝে গিয়েছিলেন, প্রিন্সেস আনের চরিত্রে অড্রে হেপবার্নই সেরা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অড্রে মিউজিক্যাল ব্রডওয়ে প্লে জিজির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওয়াইলার তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে চাইলেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচার্সও অড্রের স্ক্রিন টেস্ট দেখে অপেক্ষা করতে রাজি হলো। কেউই জানত না এই প্লে কবে শেষ হবে। প্রায় ছয় মাস পর প্লে শেষ হলো। তার মাসখানেকের মধ্যেই রোমান হলিডের শুটিং শুরু হলো।

৩. 

রোমান হলিডের মূল চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ডাল্টন ট্রাম্বো। কিন্তু ছবির ক্রেডিটে নাম গিয়েছিল ইয়ান ম্যাকলেলান হান্টারের। কারণ, ট্রাম্বো কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন। অভিযোগ ছিল, তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি সহানুভূতিশীল। পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তখন এটা বড় অপরাধ। অস্কারে ট্রাম্বোর চিত্রনাট্য সেরা হয়, কিন্তু পুরস্কার হাতে নেন হান্টার। 

৪. 

ওয়াইলারের আগে এই ছবি পরিচালনার কথা ছিল ফ্র্যাঙ্ক কাপরার। ১৯৪৯ সালে ছবিটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চিত্রনাট্যকার ট্রাম্বো কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় আর এগোননি। সে সময় প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল হলিউডের ক্যারি গ্র্যান্ট ও এলিজাবেথ টেলরের। পরে কাপরা ছবির স্বত্ব বিক্রি করে দেন প্যারামাউন্ট পিকচার্সের কাছে।

৫. 

পরে যখন ছবিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনো ক্যারি গ্র্যান্টকে জো ব্র্যাডলির চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ক্যারি মানা করে দেন। তাঁর মনে হয়েছিল, অড্রে হেপবার্নের বিপরীতে তাঁকে বেশ বুড়ো দেখাবে। তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায় আরও ১০ বছর পর শারেড ছবিতে।

৬. 

প্রথমে ছবিটি রঙিন করার কথা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, এর শুটিং হবে স্টুডিওর বাইরে ব্যাকলটে (যেখানে স্থায়ী কিছু স্থাপনা তৈরি থাকে)। কিন্তু পরিচালক ওয়াইলার ইতালির রোমের বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং করতে চাইলেন। প্যারামাউন্ট অত খরচ করতে রাজি নয়। তাই খরচে কুলোতে সাদাকালোতে ছবির শুটিং হয়। পরে ওয়াইলার বলেন, তিনি সব সময় চেয়েছিলেন, ছবিটি রঙিন হোক। 

৭. 

গ্রেগরি পেক এই ছবির শুটিংয়ের ঠিক কিছুদিন আগে তিনি দেখা পান তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ভেরোনিক পাসানির। মজার ব্যাপার হলো, রিপোর্টার হিসেবে ভেরোনিক গিয়েছিলেন গ্রেগরি পেকের সাক্ষাৎকার নিতে। তখনই দুজনের পরিচয় ও ভালো লাগা। আর কিছুদিন পরেই রোমান হলিডেতে পেক অভিনয় করছেন সাংবাদিকের চরিত্রে। ১৯৫৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। 

৮. 

অড্রে হেপবার্নও তাঁর প্রথম স্বামীর দেখা পেয়েছিলেন রোমান হলিডের সূত্রেই। ছবি মুক্তির পর গ্রেগরি পেকের বাড়িতে আয়োজিত এক পার্টিতে অড্রের দেখা হয় অভিনেতা মেল ফেরারের। ১৯৫৪ সালে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

৯. 

ইতালির মোটর স্কুটার ভেসপা বাজারে এসেছিল ১৯৪৬ সালে। রোমান হলিডের পর এটি আন্তর্জাতিক বাজার পেতে শুরু করে। ছবিতে দেখা যায়, গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্নের ভেসপা করে রোম ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য। ভেসপা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি বড় বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৬ এই তিন বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ভেসপা বিক্রি হয়।

১০. 

১৯৫৪ সালে আয়োজিত অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণার পর অড্রে হেপবার্ন আবেগে এতই ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েন যে হুড়োহুড়িতে ভুল পথে মঞ্চে ওঠেন। একনিশ্বাসে বক্তব্য দেন। পরে লেডিস রুমে অস্কার ট্রফিটি ফেলে চলে আসেন। পরে অবশ্য ট্রফিটি খুঁজে পাওয়া যায়। আমৃত্যু সেটি তাঁর কাছেই ছিল।

গ্রন্থনা: প্রণব ভৌমিক