ভূপেন হাজারিকার বাড়ি নিয়ে কোন্দল

কলকাতায় ভূপেন হাজারিকার বাসভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতায় ভূপেন হাজারিকার বাসভবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কলকাতার টালিগঞ্জের বাড়ি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে। কলকাতায় ছিল এই সংগীতশিল্পীর একটি বাড়ি। মুম্বাই যাওয়ার আগে তিনি এই বাড়িতে ১৯৫৬ সাল থেকে বসবাস করেছেন। বাড়ির তৃতীয় তলায় ছিল তাঁর বাসস্থান। এখানে বসেই তিনি সংগীত চর্চা করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জের গলফ ক্লাব রোডের ৭৭/বি নম্বরের বাড়িটি ছিল তাঁর কলকাতার ঠিকানা।

এই বাড়িতেই পা পড়েছিল বলিউড আর কলকাতার নামি সব শিল্পীর। গত শতকের ষাট ও সত্তর দশকে এ বাড়িটি ছিল গমগমে। শাবানা আজমি, অপর্ণা সেন, লতা মঙ্গেশকরসহ বহু শিল্পীর আগমন ঘটেছিল এই বাড়িতে। সেই বাড়ি থেকে একসময় ভূপেন হাজারিকা পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। সেই থেকে বাড়িটি তালাবদ্ধ।

আজ ভূপেন হাজারিকা নেই। আছে কলকাতায় তাঁর স্মৃতিবাহী বাড়িটি। এই বাড়ি এখন আসাম সরকার কেনার জন্য চেষ্টা করছে। আসাম সরকার চায়, বাড়িটি ঘিরে ভূপেন হাজারিকার স্মৃতি সংরক্ষণ করতে। কিন্তু তা দিতে রাজি নয় পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের মানুষ চায় বাড়িটি ঘিরে কলকাতায় ভূপেন হাজারিকা স্মৃতিবাহী ভবন গড়ে উঠুক। কিন্তু আসাম সরকার তা চায় না। আসাম সরকার বাড়িটি কেনার জন্য এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল। রাজনৈতিক এই সংগঠনের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ভূপেন হাজারিকার মতো মনীষীদের নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। আসাম সরকার এভাবে ভূপেন হাজারিকার বাড়ি কিনতে পারে না। আমরা দেখছি।’

আর বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘মনীষীদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছুই করেনি। তাই আসাম সরকার ভূপেন হাজারিকার বাড়ি নিয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ বর্তমানে আসামে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এই প্রথিতযশা শিল্পী যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।

ভূপেন হাজারিকার জন্ম আসামের সাদিয়ায়, ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। আর প্রয়াত হন ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ে। ভূপেন হাজারিকা আসামের হলেও তিনি প্রচুর বাংলা গান গেয়েছেন। গেয়েছেন হিন্দি গান। পেয়েছেন নানা পুরস্কার আর সম্মান। পেয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২), ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী (১৯৭৭), পদ্মভূষণ (২০০১), পদ্মবিভূষণ (২০১২), বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মুক্তিযোদ্ধা পদক (২০১১), সংগীত নাটক একাডেমি পদক, আসাম সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান অসম রত্ন, ঋত্বিক ঘটক সম্মানসহ বহু পুরস্কার এবং পদক পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন সেরা সংগীত পরিচালকের সম্মান।