ব্যস্ত শিল্পী ছোট্ট শরিফুল
‘পর্দায় আমি পাকামো করলেই দর্শক বেশি পছন্দ করে। আমারও পাকামি করতে ভালোই লাগে।’—সহজ–সরল গলায় কথাগুলো বলল শিশুশিল্পী শরিফুল ইসলাম। আয়নাবাজি সিনেমা কিংবা ঢাকা মেট্রো ওয়েব সিরিজ দেখে থাকলে শরিফুলকে এক দেখাতেই দর্শকের চিনে ফেলার কথা। হ্যাঁ, সেই শরিফুলের কথাই বলছি।
ব্যস্ত শরিফুল
অমিতাভ রেজা নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্র ‘হু টোল্ড ইউ, ওয়েল ইয়োর ওন মেশিন’ সংলাপ বলা শিশুশিল্পীকে অনেকেই চেনে তার কাজ দিয়ে। এই খুদে শিল্পীর কিছু কিছু সংলাপ তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিম ও ট্রলের জনপ্রিয় উপাদান! আজ আমরা সেই শরিফুলের ব্যাপারেই জানব। এখন পুরোদস্তুর অভিনেতা সে। ওয়েব, টিভি প্রযোজনা আর বিজ্ঞাপনচিত্রে তার বেশ কদর। তাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হচ্ছে নাটক আর স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির গল্প। এ পর্যন্ত অভিনয় করেছে ২০টির মতো সিনেমায়। মাসের বেশির ভাগ সময়ই শুটিংয়ে তার শিডিউল দেওয়া থাকে। একবার ভুলবশত পরীক্ষার মধ্যেও শিডিউল দিয়ে ফেলেছিল এই খুদে তারকা। কী আর করার! পরীক্ষা দিয়ে ছুটেছে শুটিং সেটে।
গাজীপুরের ছেলে
শরিফুল দশম শ্রেণির ছাত্র। থাকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার মণিপুরে। তারা ছয় ভাই, দুই বোন। শরিফুল জানায়, ‘আমার শুটিং করতে ভালোই লাগে। ছোড মানুষ হইয়াও আমারে পরিচালকেরা এখন নায়ক হিসেবে ডাকতাছে। এটা আমার বড় পাওয়া।’ শরিফুল বিভিন্ন শুটিং ইউনিটে তার অভিনীত চরিত্রের নামেই পরিচিতি পায়। এই যেমন চার বছর আগে শেষ হওয়া ধারাবাহিক নাটক রেডিও চকোলেট টিমের অনেকেই তাকে এখনো আদর করে বল্টু বলে ডাকে। শরিফুল বলল, ‘আমার অভিনয়ে আসার পেছনে অমিতাভ রেজা আর রাশেদ জামানের অবদান সবচেয়ে বেশি।’ শরিফুল সম্পর্কে অমিতাভ রেজা বলেন, শরিফুল অসম্ভব মেধাবী অভিনেতা। যেকোনো দৃশ্য তাকে বুঝিয়ে দিলেই সে সহজে বুঝতে পারে, হুবহু ওভাবেই করে দেয়।
বাবার জন্য অভিনয়ে আসা
শরিফুলের অভিনয়ে আসা তার প্রয়াত বাবা আবদুর রশিদের জন্য। বাবা মনে মনে চাইতেন ছেলে অভিনয় করুক। হোতাপাড়ার খতিব খামারবাড়ি শুটিং হাউসে তার বাবার দোকান ছিল। হোতাপাড়ায় কোনো শুটিং ইউনিটে অভিনয়শিল্পীর প্রয়োজন হলেই শিল্পী সংগ্রহ করে দিতেন শরিফুলের বাবা। ছোটবেলা থেকেই পালিয়ে দূর থেকে শুটিং দেখত শরিফুল। এভাবেই পরিচয় হয় চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানের সঙ্গে। শরিফুল প্রথম রাশেদ জামানের মাধ্যমে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় অভিনয়ের সুযোগ পায়। এরপর বেশ কয়টি কাজ করলে অমিতাভ রেজা নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। অমিতাভ রেজা ও রাশেদ জামান তাকে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি অভিভাবকের দায়িত্বও পালন করেন।
ভাইকে ছাড়া চলেই না
শরিফুল মনোযোগী আড্ডাবাজ। একেবারেই সাদামাটা গ্রামের ছেলে শুটিং না থাকলে গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটে তার। বন্ধুদের মধ্যে কেউ তাকে ‘পিচ্চি’ বললে তার প্রচণ্ড রাগ হয়। শরিফুলকে শুটিংয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তার বড় ভাই আরিফুল ইসলাম। বড় ভাই-ই শরিফুলের সবচেয়ে কাছের মানুষ। সব সময় তাকে শরিফুলের সঙ্গে থাকতে হয়। একবার ঢাকার নিকেতনে রেদওয়ান রনির শুটিংয়ে এসে আরিফুল ছোট ভাইকে কিছু না বলে কেনাকাটা করতে বের হয়েছিলেন। সেদিন কিছু সময় ভাইকে না দেখে অস্থির হয়ে কান্না শুরু করেছিল শরিফুল। কিছুতেই শুটিংয়ে মন বসাতে পারছিল না। ঘণ্টা দুয়েক পর ভাই ফিরে এলে শরিফুল বড় ভাইকে জাপটে ধরে কান্না জড়ানো গলায় বলেছিল, ‘দাদাভাই, তুমি কোথায় গেছিলা কিছু না বইলা?’ ছোট ভাইয়ের এই স্মৃতি এখনো আরিফুল যত্ন করে রেখেছে।
শরিফুলের আয়
নির্মাতারা শরিফুলকে ভালোবেসে ‘পেমেন্ট’ বেশি দেন। অভিনয়ের সব উপার্জন আগে বাবার কাছে দিত শরিফুল। গত বছর বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক দিন এই খুদে শিল্পী শুটিংয়ে মন বসাতে পারেনি। এখন সব সে তুলে দেয় মায়ের হাতে। পরিবারের অনেক আর্থিক সংকট পূরণ করে তার অভিনয়ের এই টাকা। শরিফুলের ইচ্ছা বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। সমাজের মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করার জন্য কাজ করবে।