বেশির ভাগই লোকসানের ঘরে
গত ১০ মাসে প্রেক্ষাগৃহে দেশীয় প্রায় ৩৪টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই মুখ থুবড়ে পড়েছে। বছরের প্রথম ছবি আই অ্যাম রাজ থেকে লোকসানের খাতা খোলে, সব শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ডনগিরিও লাভের মুখ দেখেনি।
এ বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো হলো আমার প্রেম আমার প্রিয়া, দাগ হৃদয়ে, ফাগুন হাওয়ায়, অন্ধকার জগত, হৃদয়ে রংধনু, প্রেম আমার ২, যদি একদিন, বউ বাজার, কারণ তোমাকে ভালোবাসি, লিডার, লাইভ ফ্রম ঢাকা, তুই আমার রানী, প্রতিশোধের আগুন, বয়ফ্রেন্ড, রাত্রীর যাত্রী, আলফা, আবার বসন্ত, পাসওয়ার্ড, আব্বাস, আকাশ মহল, মনের মতো মানুষ পাইলাম না, মায়াবতী, পাগলামী, সাপলুডু, নোলক, বেপরোয়া ইত্যাদি।
এসব ছবির মধ্যে একমাত্র পাসওয়ার্ড ছবিটি লাভের মুখ দেখেছে। শাকিব খানের ওপর প্রযোজকদের ভরসা থাকলেও শাকিব অভিনীত অন্য দুটি ছবি নোলক ও মনের মতো মানুষ পাইলাম না থেকে বিনিয়োগ পুরোপুরি ফেরেনি। মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য ছবিগুলোর মধ্যে সাপলুডু, যদি একদিন, ফাগুন হাওয়ায়, বেপরোয়াসহ হাতে গোনা কয়েকটি ছবি কোনোমতে আলোচিত হয়েছে। এ ছাড়া স্বল্প বাজেটের ছবি আব্বাস শুধু বিনিয়োগ উঠাতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বাকি প্রায় সব ছবি বিনিয়োগও উঠিয়ে আনতে পারেনি।
রাত্রীর যাত্রী ছবির পরিচালক হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছবিতে বিনিয়োগ যা করেছি, তার ৩০ ভাগ টাকাও উঠে আসেনি।’অবতার ছবিটির নির্মাণ খরচ কোটি টাকার ওপরে। ছবিটির পরিচালক হাসান সিকদার বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহ থেকে যা এসেছে, তার সঙ্গে ডিজিটাল ও টেলিভিশন স্বত্বের টাকা যোগ করলে বিনিয়োগের ৫০ ভাগ টাকা উঠবে।’
মধুমিতা হলের মালিক ও প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ছবিতে ভালো গল্প নেই, ভালো গান নেই, নির্মাণশৈলীর অভাব, ভালো শিল্পীর অভাব। ফলে এসব নিম্নমানের ছবির কারণে নতুন দর্শক তো আসছেনই না, পুরানো দর্শকেরাও সরে পড়ছেন।’
এই প্রযোজকের কথা, সিনেমার সুদিন ফেরাতে হলে গল্প, চিত্রনাট্যে সময় দিতে হবে। গল্পই হবে সিনেমার নায়ক। পাশাপাশি শুটিংয়ের আগে কাহিনিকার, পরিচালক, ক্যামেরাম্যান, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে ছবির গান সংশ্লিষ্টদেরও একসঙ্গে বসতে হবে। টিমওয়ার্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘একসময় নতুন সিনেমা শুটিংয়ের আগে পুরো টিম নিয়ে আলোচনা হতো, গ্রুমিং হতো, তারপর শুটিংয়ে যেত সবাই। তা ছাড়া এ সময়ে কিছু নতুন প্রযোজক ফুর্তি করতে আসেন এখানে। তাঁদের সরাতে হবে। ফেরাতে হবে পেশাদার প্রযোজকদের। আরেকটি বিষয়, দেখতে সুন্দর হলেই একটা নতুন মেয়েকে ধরে এনে নায়িকা বানিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দূর করতে হবে।’
গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘রুচি নিয়ে আমাদের দর্শকেরা সিনেমা দেখতে চায়। কিন্তু সেই অনুযায়ী হলও নেই, সিনেমাও নেই। সময়োপযোগী সিনেমা বানাতে পারছি না, চেষ্টাও নেই আমাদের। এখানে কোনো ক্রিয়েটিভ প্রযোজক নেই। নেই সিনেমার প্রজেক্ট পরিকল্পনাও।’
এই পরিচালকের কথা, সিনেমার দিন ফেরাতে হলে পেশাদার প্রযোজক লাগবে। তিনি বলেন, ‘এসব ঠিকঠাক করতে হবে, পাশাপাশি সব কটি জেলায় মাল্টিপ্লেক্স থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর যেকোনো দেশের সিনেমা এ দেশে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এভাবেই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমরাও ভালো ছবি বানাতে পারব।’