বৃশ্চিক রাশির অর্ষা তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। ভীষণ আড্ডাপ্রিয়। এখনো সময় পেলেই ছুটে যান ধানমন্ডির বিভিন্ন কফি শপে, নইলে ৩২ নম্বরের সেতুর ধারে আর না হলে রবীন্দ্রসরোবর তো আছেই।
বৃশ্চিক রাশির এই কন্যা
দু চোখে স্বপ্ন আঁকা। মনে অনেক আশা। কিন্তু নতুন, তাই সুযোগ হয় না। তবু চেষ্টার কমতি ছিল না। একদিন পেয়ে গেলেন পোশাকের মডেল হওয়ার সুযোগ। পত্রিকায় ছবি ছাপা হবে। তাতেই খুশি অর্ষা। অর্ষা মানে দুরবিন। দুরবিনের মতো করেই অর্ষা সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বিনোদনের অঙ্গনকে দেখার চেষ্টা করেন। দূরের তারাদের কাছ থেকে দেখতে চান, নিজেই একজন তারা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। সে সময়ই সুযোগটি চলে আসে হাতের মুঠোয়। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। ‘আসলে এই প্রতিযোগিতায় যখন আমি এলাম, তখন আমার লক্ষ্য ছিল একটাই—আমি যেন সেরা ২৫ জনের একজন হতে পারি। যখন এই আশাটা পূরণ হলো, তখন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে গেল। ভীষণ খুশি লাগছিল দুটো কারণে। প্রথমত, আমি একটি গ্রুমিংয়ের সুযোগ পাব। খ্যাতিমান অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে। দ্বিতীয়ত, সেরা ১০ জনের একজন হওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। আবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।’ বলছিলেন অর্ষা।যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে রীতিমতো সেরা ১০ জনের একজন তো হয়েছেনই, সেই সঙ্গে তিনি হয়েছেন সেরা চারজনের একজন। বললেন, ‘গালা রাউন্ডে আমার পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিল। চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। তার পরও সেরা তিনের মধ্যে আসতে পারিনি বলে কোনো দুঃখবোধ নেই আমার।’ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানেই কাপড় পরিষ্কার করার একটি গুঁড়ো সাবানের বিজ্ঞাপনচিত্রের বিলবোর্ডে অর্ষাকে দেখা যায়। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই অর্ষার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে বড় বড় বিলবোর্ডে। ‘আগামী বেশ কিছুদিনের জন্য আমি চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এরই বদৌলতে আমি দুটি নাটকেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। চ্যানেল আইতে ২৬ মার্চ প্রচারিত হলো আমার অভিনীত নাটক দ্বন্দ্ব। এখন ফারিয়া হোসেনের পরিচালনায় মেগা ধারাবাহিকে কাজ করছি। সামনে আরও কিছু কাজ করার ব্যাপারে কথা চলছে। তাই আমি মনে করি, আমার দুচোখে যে স্বপ্ন এঁকেছিলাম, তা আস্তে আস্তে পূরণ হচ্ছে।’ বললেন অর্ষা।গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অর্ষা। জানালেন, বিনোদন জগতে কাজ করার পর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আড্ডা মিস করেন। খুদে বার্তা পাঠিয়ে তখন আড্ডার শরিক হন। তবে বাড়িতে তাঁর একটা আলাদা মূল্যায়ন হয়েছে। পরিবারের কেউ কিছু করতে গেলে অর্ষার মতামত নেয়। ‘আমি পিচ্চি একটা মেয়ে, কিন্তু যখন মুরব্বিরা এসে বলেন, এটা কী করব? তখন আমার খুবই হাসি পায়।’ বৃশ্চিক রাশির এই কন্যা তিন বোনের মধ্যে বড়। ভীষণ আড্ডাপ্রিয়। এখনো সময় পেলেই ছুটে যান ধানমন্ডির বিভিন্ন কফি শপে, নইলে ৩২ নম্বরের ব্রিজের ধারে, আর না হলে রবীন্দ্রসরোবর তো আছেই। বান্ধবীরা এলে নানা বিষয়ে চলে তাঁদের আড্ডা। অবশ্য দুই বান্ধবী এখন দেশের বাইরে। তাঁদের খুব মিস করেন—জানালেন অর্ষা। ‘আমার বাসার দেয়াল বান্ধবীদের ছবি দিয়ে ভরা। মাঝেমধ্যেই আমি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি, পুরোনো স্মৃতিগুলো খুঁজে বেড়াই।’চায়ের মগে চুমুক দিয়ে বন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে যখন নানা কথা মনে পড়ে, তখন সিডিপ্লেয়ারে গান ছেড়ে দেন অর্ষা। একাকী কিছুটা সময় এভাবে কাটানোও তাঁর ভীষণ পছন্দ।বিশেষ কোনো বন্ধু আসেনি জীবনে? অর্ষা সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বললেন, ‘এখনো তেমন কেউ আসেনি। একজনকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাকে আমি বলেছিও। কিন্তু সে তার মতামত জানায়নি। যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তবে খুব খুশি হব। নইলে বাকিটা নিয়তির হাতেই ছেড়ে দেব। এসব নিয়ে আসলে বেশি ভাবতে চাই না। তাহলে সামনের দিকে এগোনোর ভাবনাগুলো ভাবব কখন?’এখন লক্ষ্য কী?‘পড়াশোনা শেষ করার পাশাপাশি অভিনয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সেটা হতে পারে টিভি অথবা চলচ্চিত্রে। তবে চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। হয়তো ভালো কোনো গল্প পেলে সেখানেও কাজ করব। আমি বাণিজ্যিক ছবিতেই কাজ করতে চাই, কিন্তু সেই ছবি যেন আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করে। পুরোনো দিনের রূপকথার ছবিগুলোতে অভিনয় করতে চাই। আমার বিশ্বাস, নতুন প্রজন্মে আমাদের মতো যারা আছে তাদের কাছে এসব ছবি ভালো লাগবে।’