বুলুবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননায় আপ্লুত এ টি এম শামসুজ্জামান
‘যদি কোনো ভালো মানুষ দেখতে চাও বুলবুল আহমেদকে দেখে এসো। শুধু ভদ্রলোক না, একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন। এখন যারা তাকে সরাসরি পাবে না, তারা তাঁর সিনেমা দেখো।’ প্রয়াত নায়ক বুলবুল আহমেদকে নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। তিনি এখন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন। আজ রোববার বিকেলে এখানে তাঁকে বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক দেওয়া হয়। প্রয়াত সহশিল্পীর স্মৃতি স্মারক পেয়ে আপ্লুত হন এ টি এম শামসুজ্জামান।
বুলবুল আহমেদ নেই ৯ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁকে পাওয়া যাবে না কোনো আয়োজনে, প্রয়োজনে। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং প্রবীণ বরণীয় শিল্পীদের স্মরণীয় করে রাখতে বুলবুল আহমেদের পরিবার ও বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রতিবছর সম্মাননা দেওয়ার আয়োজন করা হয়। ১৫ জুলাই বুলবুল আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনটি সামনে রেখে রোববার বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক দেওয়ার আয়োজন করেছে বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে অনাড়ম্বর কিন্তু নিখাদ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক দেওয়ার আয়োজনটি। যেখানে ফাউন্ডেশনের পক্ষে বুলবুল আহমেদের সহধর্মিণী ডেইজি আহমেদ ও কন্যা তাহসিন ফারজানা তিলোত্তমা পদক তুলে দেন এ টি এম শামসুজ্জামানের হাতে। সেখানে ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী রুনী জামান, মেয়ে, নাতনিসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় এ টি এম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান বলেন, ‘এখন তিনি (এ টি এম শামসুজ্জামান) যথেষ্ট ভালো আছেন। কথা বলছেন, স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। কেবল নার্সিং সেবার জন্য তাঁকে আমরা এখানে রেখেছি।’
কাল বুলবুল আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের সাড়া জাগানো এ নায়কের জন্ম ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকায়। দারুণ মেধাবী ছিলেন বুলবুল আহমেদ। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষ করার পর একটি ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরির পাশাপাশি বুলবুল আহমেদ টিভিতে অভিনয় শুরু করেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ছিল আবদুল্লাহ আল-মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’। বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হচ্ছে ‘মালঞ্চ’, ‘ইডিয়েট’, ‘মাল্যদান’, ‘বড়দিদি’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। ধারাবাহিক ও খণ্ড নাটক মিলিয়ে চার শতাধিক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত সর্বশেষ টিভি নাটক ছিল ২০০৯ সালে শুটিং করা ‘বাবার বাড়ি’। ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’র মাধ্যমে প্রথম সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। এর পরের বছর আবদুল্লাহ আল-মামুনের ‘অঙ্গীকার’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। দুটি চলচ্চিত্র সে সময় দারুণ হিট হয়। তবে বুলবুল আহমেদ ঢাকাই সিনেমার দর্শকের কাছে চিরদিন শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি দুই চরিত্র ‘শ্রীকান্ত’ ও ‘দেবদাস’- এ দুর্দান্ত রূপদান করে। ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ও ‘দেবদাস’-এই দুটি চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন সব শ্রেণির দর্শকের অন্তরে। এ ছাড়া ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্যকন্যা’ সিনেমাগুলোতে বুলবুল আহমেদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অনন্য উচ্চতায়। বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ধীরে বহে মেঘনা, জীবন নিয়ে জুয়া, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায়, জন্ম থেকে জ্বলছি, দি ফাদার প্রভৃতি। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘দুই নয়নের আলো’।