বিক্রি হচ্ছে মৃণাল সেনের ফ্ল্যাট
শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার পদ্মপুকুর রোডে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের ফ্ল্যাট। এখানে বসেই মৃণাল সেন লিখেছেন কালজয়ী কয়েকটি ছবির চিত্রনাট্য। ছবি পরিচালনাও করেছেন এখানে থেকেই। চলচ্চিত্রের নানা ঘটনার সাক্ষী সেই ঐতিহ্যবাহী ফ্ল্যাট এখন আর দেখাশোনা করার কেউ নেই। একমাত্র ছেলে কুণাল সেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থাকেন। স্ত্রী গীতা সেন মারা গেছেন ২০১৭ সালে।
কুণাল সেনের মতে, এই ফ্ল্যাট রেখে আর লাভ কী? দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাই এটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এখন চারতলার তিন রুমের এই ফ্ল্যাট দেখাশোনা করেন মৃণাল সেনের পারিবারিক চিকিৎসক অধৃশ্য কুমার। তিনি বলেছেন, তাঁর পক্ষে নিয়মিত সেখানে যাওয়া সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে যান। ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। চাবি আছে তাঁর কাছেই।
পদ্মপুকুর রোডের এই ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে থাকতের মৃণাল সেন। এই ফ্ল্যাটেই ছিল মৃণাল সেনের অধিকাংশ চিঠি, ছবির পাণ্ডুলিপি, সিনেমার স্টিল ছবিসহ দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া নানা পদক, উপহার, স্মারক ইত্যাদি। মৃণাল সেন তৈরি করেছেন ২৭টি কালজয়ী চলচ্চিত্র। পেয়েছেন ভারতের চলচ্চিত্রের সেরা সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ।
এদিকে মৃণাল সেনের মৃত্যুর পর তাঁর চিঠি, ছবির পাণ্ডুলিপি, চিত্রনাট্যসহ নানা কিছু বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চলচ্চিত্রের পড়ুয়াদের গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর সংগ্রহে থাকা বইগুলো। এ ছাড়া মুম্বাইয়ের একটি সংগ্রহশালায় দেওয়া হয়েছে মৃণাল সেনের ব্যবহার করা বিভিন্ন স্মৃতিবাহী স্মারক। তাঁর ব্যবহার করা চশমা ও টেলিফোন নিয়েছে বহরমপুরের সিনে সেন্ট্রাল। কলকাতার সল্টলেকের আল আমিন মিশনেও দেওয়া হয়েছে কিছু বই। আর যে খাটে তাঁর জীবনাবসান হয়, সেই স্মৃতিবাহী খাটসহ আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস দেওয়া হয়েছে বিমান বসুর হাতে। তিনি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও কলকাতার পিপলস রিলিফ কমিটির সভাপতি।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর এই ফ্ল্যাটেই মারা যান মৃণাল সেন। মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন না কুণাল সেন ও তাঁর পরিবার। মৃত্যুর খবর পেয়ে কুণাল সেন শিকাগো থেকে কলকাতায় আসেন। বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ফিরে যান কর্মস্থলে।
মৃণাল সেনের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়, ১৯২৩ সালের ১৪ মে। আর প্রয়াত হন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তিনি সাংসদও ছিলেন।