প্রযোজক-পরিবেশকদের সিদ্ধান্ত, মেশিন ভাড়া গুনবেন হল মালিকেরা

খোরশেদ আলম খসরু ও শামসুল আলম
খোরশেদ আলম খসরু ও শামসুল আলম

‘প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখানোর প্রজেকশন মেশিনের ভাড়া এখন থেকে আর প্রযোজকেরা দেবেন না। দিতে হবে হল-মালিকদের। ব্যবসা যেহেতু তাঁদের, যন্ত্রের ভাড়াও তাঁদেরই দেওয়া উচিত’—বলছিলেন প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম। গতকাল সোমবার দুপুরে সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৯টি পোর্টফোলিও পদের নির্বাচন শেষে দৃঢ়কণ্ঠে এ সিদ্ধান্ত দেন তাঁরা।

নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। সেগুলোর মধ্যে প্রথমে প্রেক্ষাগৃহের দিকে নজর দিতে চায় এই কমিটি। নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘যুগ বদলেছে। তাই দেশজুড়ে সিনেপ্লেক্স স্থাপনের দিকে এগোতে চাই। এ বিষয়ে দুটি প্রকল্প ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে সরকার। প্রকল্প দুটি যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত হয়, সে বিষয়ে কাজ করব আমরা।’

প্রায় সাড়ে সাত বছর পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০১৯-২১ মেয়াদি নির্বাচন হয় ২৭ জুলাই। নির্বাচনে প্রযোজকদের ভোটে ১৯ জন সাধারণ সদস্য, ২ সহযোগী সদস্যসহ মোট ২১ জন নির্বাচিত হন। ২৯ জুলাই বিজয়ী ১৯ জন সাধারণ সদস্যের ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ জনের পোর্টফোলিও কমিটি গঠনের কথা ছিল। কিন্তু সভাপতি পদে খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে শামসুল আলমের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা ভোটে নির্বাচিত হন তাঁরা। বাকি সাত পদের জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

চলচ্চিত্রের অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে ছবির সংখ্যা কমে যাওয়া। কমছে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা। এসব কারণে দাঁড়াতেই পারছে না ঢালিউড। এত দিন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, চলচ্চিত্রের মূল খুঁটি প্রযোজক পরিবেশক সমিতি। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি এলেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

শিগগিরই দায়িত্ব নেবে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটি। এবার কি তবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সিনেমা? কমিটির কাছে কী প্রত্যাশা করছেন চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রযোজক ও পরিচালকেরা? এ ব্যাপারে নায়ক শাকিব খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন অকার্যকর ছিল সমিতি। সবার দাবি ছিল ভোটের মাধ্যমে সেটি কার্যকর হোক। কেননা, এই সমিতি চলচ্চিত্রের অভিভাবক সংগঠন। বর্তমান চলচ্চিত্রের কী কী সমস্যা তা সবারই জানা। সুতরাং নতুন কমিটির কাছে দাবি, সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করে চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিক। তাহলেই ঘুরে দাঁড়াবে আমাদের চলচ্চিত্র।’

পরিচালক সমিতির সভাপতির মুশফিকুর রহমানের প্রত্যাশা, ধাপে ধাপে সব সমস্যার সমাধান হোক। তিনি বলেন, ‘প্রথমে হলের মেশিন ভাড়াসহ হল থেকে সুষ্ঠুভাবে প্রযোজকের টাকা না আসার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হোক। তারপর চলচ্চিত্র নির্মাণের ত্রুটিগুলো নিয়ে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসা। তারপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কী কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করতে হবে।’ এসব দাবিদাওয়া নিয়ে পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সঙ্গে থেকে কাজ করতে চায়।

প্রযোজক ও অভিনেত্রী জয়া আহসানের চাওয়া, নিজেদের মধ্যে যেন কোনো রকমের দলাদলি, রেষারেষি না থাকে। নিজের স্বার্থ ভুলে চলচ্চিত্রের স্বার্থে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রের অবস্থা যে করুণ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এই কমিটির মাধ্যমে আমরা আশায় বুক বাঁধতেই পারি। তারা চলচ্চিত্রের জন্য ভালো কিছু করবে। মূল সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সামনে এগোবে।’

প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিনেমা হল ও ভালো ছবি নির্মাণ বাড়াতে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি বড় যে প্রযোজকেরা এখন আর কাজ করছেন না, তাঁদের পুঁজির নিশ্চয়তা দিয়ে ছবি প্রযোজনায় ফিরিয়ে আনতে চাই।’

প্রযোজক–পরিবেশক সমিতির ২০১৯–২১–এর নবনির্বাচিত কমিটি
সভাপতি: খোরশেদ আলম
সাধারণ সম্পাদক: শামসুল আলম
সহসভাপতি: কামাল মো. কিবরিয়া, মো. শহীদুল আলম
সহকারী সাধারণ সম্পাদক: মো. ইকবাল, আলিমুল্লাহ খোকন
কোষাধ্যক্ষ: মেহেদী হাসান সিদ্দিকী
সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক: মোর্শেদ খান
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: ইলা জাহান

কার্যকরী সদস্য
এম এন ইস্পাহানী
মোহাম্মদ হোসেন
ড্যানি সিডাক
এ জে রানা
নাদির খান
রশিদুল আলম
জাহিদ হোসেন
ইয়ামিন হক ববি
কামাল হাসান
অপূর্ব রায়
আজিজ আহমেদ
মো. আসিকুর রহমান নাদিম