এই তো, খুব বেশি দিন আগের কথা বলছি না। মাত্র এক বছর আগেই তিনি গান গাইতেন ছোটখাটো পরিসরে, স্বল্প কিছু দর্শকের সামনে। গুটিকয়েক গানপাগল মানুষ ছাড়া তখন তাঁর নামও হয়তো অনেকেই শোনেননি। কিন্তু বেশ কয়েক মাসে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন স্টেজ থেকে স্টেজে, মন জয় করেছেন পৃথিবীজোড়া সংগীতপ্রেমী মানুষের। বলছি যুক্তরাজ্যের কৃষ্ণকেশী গায়িকা দুয়া লিপার কথা। ২২ আগস্ট তিনি পা দেবেন ২২ বছরের কোঠায়। এই তরুণ বয়সেই অনন্য গায়কির মুনশিয়ানায় একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।
দুয়া লিপার জন্ম লন্ডনে হলেও আদি শিকড় কসোভোতে। আলবেনিয়ান বাবা-মা নব্বইয়ের টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থায় কসোভো ছেড়ে লন্ডনে এসেছিলেন, সেখানেই আরও দুই ভাইবোনের সঙ্গে ছেলেবেলা কাটিয়েছেন লিপা। বয়স যখন ১৩, তখন তাঁর বাবা-মা আবারও আদি নিবাস কসোভোতে ফিরে যান। সেখান থেকেই ১৬ বছর বয়সে আবার লন্ডনে ফিরে আসেন এই শিল্পী; উদ্দেশ্য আর কিছুই না, গান নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া। খুব বেশি দিন এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি, মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, ওই বছরেই বের হয় তাঁর প্রথম গান ‘নিউ লাভ’। এই গানটি গাইতে তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন আরেক পপ গায়িকা লানা ডেল রয়। এরপর একে একে ‘বি দ্য লাভ’, ‘লাস্ট ড্যান্স’, ‘হটার দ্যান হেল’-এর মতো জনপ্রিয় গান দিয়ে শ্রোতাদের মন কেড়েছেন তিনি। তাঁর ‘স্কেয়ারড টু বি লোনলি’ শুধু স্পটিফাইতেই শোনা হয়েছে ৩০০ মিলিয়নের বেশি বার। এ বছরের জুন মাসে তিনি রিলিজ করেছেন তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম দুয়া লিপা, বিভিন্ন দেশের শীর্ষ অ্যালবামের তালিকায় যেটি আছে সেরা দশে।
১৪ বছর বয়স থেকেই দুয়া লিপা গান গাওয়া শুরু করেন; তখন পিংক, নেলি ফারটাডো, ক্রিস্টিনা আগুইলেরার গান নিজের গলায় গেয়ে ইউটিউবে আপ করতেন। গানের নেশা যখন আরও বাড়ল, তখনই সিদ্ধান্ত নেন লন্ডনে ফিরে যাবেন। দুয়া লিপার বাবা দুকাজিন লিপাও গান করতেন। বাবার থেকেই গানের উৎসাহ পেয়েছেন তিনি। বাবা-মাকে ছেড়ে একা যখন লন্ডনে এলেন, তখনো তাঁরা সাহস জুগিয়ে গেছেন। লন্ডনে এসে নাইট ক্লাবের ওয়েট্রেসিং থেকে মডেলিং, কোনটি করেননি! পাশাপাশি গানের চর্চাও চালিয়ে যেতে ভর্তি হয়েছিলেন সিলভিয়া ইয়ং থিয়েটার স্কুলে, যেখান থেকে পড়াশোনা করেছেন রিটা ওরা ও এমি ওয়াইনহাউজের মতো নামকরা শিল্পীরা। তারপরেই তিনি চোখে পড়েন লানা ডেল রয়ের ব্যবস্থাপক বেন মসনের, যিনি লিপাকে সপ্তাহে ৫ দিন একটি স্টুডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন।
দুয়া লিপা পপ ঘরানার গান করেন, তিনি নিজে যে ঘরানার নাম দিয়েছেন ডার্ক পপ, যেটি মূলত পপ আর হিপ-হপের মিশেল। নিজের গান নিজেই লেখেন তিনি। তাঁর গানের কথা যেমন সাহসী, নিজেও তিনি ঠিক তেমনি আত্মবিশ্বাসী। পপ রাজ্য কি তবে দেখা পেল নতুন রানির? সময়ই বলে দেবে!
আনন্দ ডেস্ক
রোলিং স্টোন, গ্ল্যামার ইউকে, আইহার্ট রেডিও, ইনডিপেনডেন্ট অবলম্বনে