নায়কের কান্না, সান্ত্বনা নায়িকার
প্রেক্ষাগৃহে পাশাপাশি দুটি আসনে বসা নায়ক সিয়াম ও নায়িকা পূজা। মধ্যাহ্নবিরতি পর্যন্ত দর্শকের সঙ্গে হাসি-আনন্দে ছবিটি উপভোগ করেন তাঁরা। বিরতি শেষ দুজনেই চুপ। পুরো প্রেক্ষাগৃহে তখন পিনপতন নীরবতা। নায়ক-নায়িকা দুজনের চোখ পর্দা থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরছে না। কেউ কারও দিকে তাকানোর সময় নাই। ছবি শেষে যখন পর্দায় কলাকুশলীদের নাম দেখানো হচ্ছিল, তখন কাঁদছিলেন ছবির নায়ক সিয়াম। পাশে থাকা নায়িকা পূজা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে যান। নায়কের বাম পাশে বসেছিলেন পরিচালক রায়হান রাফি। তিনিও এগিয়ে এলেন। সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘অসাধারণ অভিনয় করেছ। এবার কান্না থামাও।’ পরিচালকের এমন কথায়, আরও বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নায়ক। এরপর পরিচালক আর নায়িকা দুজনই সিয়ামকে নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় চোখ মুছতে মুছতে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হন সিয়াম। দর্শকের সঙ্গে নিজের অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা দেখতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৪৭টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে রায়হান রাফি পরিচালিত ‘দহন’। আজ শুক্রবার সকালের প্রদর্শনীতে ঢাকার বলাকা প্রেক্ষাগৃহে হাজির হন সিয়াম, পূজা, ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, জাহিদ হোসেন শোভন, শিমুল খান এবং ছবিটির প্রযোজক আবদুল আজিজসহ আরও অনেকে।
নায়ক-নায়িকা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আগেই জানা গেছে, ‘দহন’ তাদের স্বপ্নের একটি সিনেমা। অনেক পরিশ্রম, ত্যাগ আর ভালোবাসার একটি সিনেমা। যদিও ছবিটি মুক্তির আগে ‘হাজির বিরিয়ানি’ শিরোনামের একটি গানের জন্য এই সমালোচনামুখর ছিলেন গানের জগতের অনেকে। সবকিছু মিলিয়ে ছবিটি নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। সেই আলোচিত ছবিটি আজ শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।
‘দহন’ ছবিতে সিয়ামের চরিত্রের নাম ‘তুলা’ আর পূজার ‘আশা’। ছবিতে তুলা বখাটে যুবক, বস্তিতে থাকে। একই বস্তিতে থাকে আশা, গার্মেন্টসে চাকরি করে। দুজনের প্রেম আর ভালোবাসার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন পরিচালক রায়হান রাফি। ছবির গল্পের ভাবনা প্রযোজক আবদুল আজিজের।
বলাকা প্রেক্ষাগৃহের ছাদে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন সিয়াম, ‘এ বছর একটা বড় সময় “দহন” ছবির টিমের সঙ্গে কেটেছে। ছবিতে আমার সম্পৃক্ততা ছিল অনেক বেশি। আমার প্রথম ছবি “পোড়ামন ২” তে এতটা সম্পৃক্ত ছিলাম না, যতটা ছিলাম “দহন”-এ। বলতে গেলে, সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছি আমি। এই ছবিতে আমি নায়ক না, সমাজের একটা চরিত্র নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে ধারণ করেছি মাত্র। তুলা এমন একটা ছেলে, আমরা কেউ চাই না, সমাজে কেউ তুলা হয়ে উঠুক। ব্যাপারটা দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তাই তো দর্শক তুলার জন্য কেঁদেছেন। এসব কান্না আমাকে বেশি আবেগতাড়িত করেছে।’
‘দহন’ ছবির শুটিংয়ের সময় নাকি সিয়াম ভেবেছিলেন, এটাই হয়তো তাঁর জীবনের শেষ ছবি। সেভাবেই মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করেছেন। সিয়াম বললেন, ‘জানি না, এই জীবনে কয়টা সিনেমা করতে পারব। ভেবেছিলাম, “দহন”ই হয়তো আমার শেষ ছবি। তুলার মতো একজন যুবকের চরিত্র আর পাব কি না, জানি না। যতটা সম্পৃক্ত থাকার, তার চেয়ে বেশি থাকার চেষ্টা করেছি। কারণ আমার সময়ের অভাব ছিল না, আগ্রহের কমতি ছিল না। আজ যখন ছবিটি দেখে সবাই হেসেছেন, কেঁদেছেন; তখন মনে হয়েছে পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক।’
পূজা বলেন, ‘এই ছবিতে সিয়াম যে চরিত্রে অভিনয় করেছে, তা খুব চ্যালেঞ্জিং। তাঁকে ছবিতে অভিনয় করার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পী যাঁর যাঁর জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। সে কারণেই দর্শক গল্পের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় দেখে কেঁদেছেন।’
‘দহন’ ছবির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাকিয়া বারী মম। ছবিতে তিনি একজন সাংবাদিক। ছবির অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন তারিক আনাম খান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, রাশেদ মামুন অপু, সুষমা সরকার, একে আজাদ সেতু প্রমুখ।