জাতীয় পুরস্কারের জন্য খারাপ লাগে যে ও আমাকে পায়নি

>
জিরো সিনেমায় সালমানের সঙ্গে নেচেছেন শাহরুখ
জিরো সিনেমায় সালমানের সঙ্গে নেচেছেন শাহরুখ
আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখ খান, ক্যাটরিনা কাইফ ও আনুশকা শর্মা অভিনীত জিরো সিনেমাটি। মুম্বাইয়ের মেহবুব স্টুডিওতে জিরোর এই তিন অভিনয়শিল্পী সাক্ষাৎকারে বলেছেন জিরো এবং তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে। সেখানে ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

প্রশ্ন: ‘জিরো’ সিনেমায় আপনি বাওয়া সিং নামের এক বামনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু দর্শক আপনাকে রোমান্টিক হিরো হিসেবে দেখতে বেশি ভালোবাসে…

শাহরুখ খান: আমি এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছি, যার মধ্যে কিছু বিশেষত্ব আছে। আমরা কয়েক বছর ধরে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ মার্কা হিরো বিক্রি করে এসেছি। ‘স্মলার দ্যান লাইফ’ মার্কা হিরোদের নিয়ে আমরা সিনেমা বানাই না। কিন্তু আসল জীবনে এরাই হিরো। আমি রাজ, রাহুল হয়ে অনেক মনোরঞ্জন করেছি। ভালো জামা পরে, চোখে সানগ্লাস পরে অনেক নাচ, গান করেছি। কিন্তু এবার চেয়েছি অন্য রকম কিছু। এই ছবিতেও আমি নাচ করেছি। কিন্তু ছোট্ট বাওয়া হয়ে।

প্রশ্ন: সিনেমাটি মানুষের অসম্পূর্ণতাকে উদ্‌যাপন করেছে। ব্যক্তি শাহরুখের জীবনে কি কিছু অসম্পূর্ণতা আছে?

শাহরুখ খান: অনেক কিছু আছে। নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি না। অনেকবার আমার জন্মদিনের দিন আমার পরিবার আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি ওদের একটু সময় দিতে পারব কি না। ভাবুন, আমার জন্মদিনে আমার কাছ থেকে ওরাই সময় চায়! আমার বাড়ির বাইরে রোজ তিন–চার শ ভক্ত দাঁড়িয়ে থাকেন। আমার কোনো সিনেমা যখন চলে না, তখন তাঁদের জন্য খারাপ লাগে। মনে হয়, ওঁরা আমাকে এত ভালোবাসে, আর আমি ওদের বঞ্চিত করছি। শুধু ওদের জন্য যেন সিনেমাটি ভালো চলে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি বলিউডের নির্মাতা আনন্দ এল রাই বলেছেন, শাহরুখকে কঠিন জিনিস বেশি উৎসাহিত করে…

শাহরুখ খান: নাম, যশ আর অর্থ দিয়ে নিজেকে বারবার উৎসাহিত করা যায় বলে আমি মনে করি না। মা আমাকে বলতেন, রুপার থালার খাবার কি বেশি সুস্বাদু হয়? মানুষ কি সব অর্থ বুকে বেঁধে নিয়ে যায়? আর কতই–বা খ্যাতি ছড়াবে? এরপর কী হবে? ২৫–৩০ বছর আগে অভিনেতা হওয়ার খিদে আমাকে উৎসাহিত করত। সেই খিদেটা এখন বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাকে এমন কাজ করতে হবে, যা আমি আগে কখনো করিনি।

প্রশ্ন: আপনার অভিনীত গত কয়েকটি সিনেমা বক্স অফিসে সেভাবে ব্যবসা করেনি। নানান জনের নানান মন্তব্য আপনাকে হয়তো শুনতে হয়েছে। কীভাবে নেন এসব মন্তব্য?

শাহরুখ খান: আমরা নেতিবাচক মন্তব্য ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে ফেলি। ফ্যান সিনেমাটি বানানোর সময় আমি জানতাম যে এটা সবার জন্য নয়। দশজনের মধ্যে যেন তিনজন মানুষ সিনেমাটি পছন্দ করে। যখন সেই তিনজনও পছন্দ করে না, তখন খারাপ লাগে। তবে আমি কখনোই তা ব্যক্তিগতভাবে নিই না। মনে মনে ভাবি, এই সিনেমা চলেনি তো কী হয়েছে, আরও সিনেমা বানাব। আমি মনে করি, মানুষ যখন আপনাকে খুব ভালোবাসে, তখন অনেক পরামর্শ দিতে থাকে। আমি শুধু বলতে পারি যে সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত।

প্রশ্ন: ‘জিরো’ সিনেমায় সালমান খানের সঙ্গে নাচলেন। দুই বন্ধু আবার একসঙ্গে। কেমন লাগল?

শাহরুখ খান: গানের এই দৃশ্য আগেই শুট করা হয়েছিল। সালমানের কোনো একটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল সে সময়, আর সেই সিনেমা ভালো চলেনি। তখন ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিল। তবে সালমান শুটিংয়ে আসার পর থেকে আমিও আরামে ছিলাম। সালমান অতিথি ছিল, তাই ও শুটিংয়ে দেরিতে এলেও কেউ কিছু বলতে পারত না। আমিও সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি। আমরা দুজনেই তখন শুটিংয়ে দেরিতে যেতাম। আমাদের সময়জ্ঞানের কথা ইন্ডাস্ট্রির সবারই জানা। তবে সালমান ও আমি—দুজনই শুটিং দারুণ উপভোগ করেছি।

প্রশ্ন: শ্রীদেবী জীবনের শেষ কাজটা আপনার সঙ্গে করলেন…

শাহরুখ খান: তিনি আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। জিরো সিনেমায় তাঁর কাজ ছিল খুবই স্বল্প পরিসরে। শুটিংয়ের পরদিন বনিজি আবারও ডাবিং করতে চেয়েছিলেন। আসলে তিনি সব সময় সেরাটা দিয়ে এসেছেন। আমি তাঁকে বলতাম, আপনি আগেই নিজের সেরাটা দিয়ে দিয়েছেন।

প্রশ্ন: আপনার মেয়ে সুহানা এই সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মেয়েকে পাশে পেয়ে কেমন লাগল?

শাহরুখ খান: সুহানা অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করছে। লন্ডনে পড়াশোনা শেষ করে এবার যুক্তরাষ্ট্রে যাবে। ছুটিতে ওকে অভিনয়সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে ইন্টার্ন করতে হতো। আমি ওকে আমার সেটেই আসতে বলি। পরিচালক আনন্দ এল রাই সুহানাকে আমার সহপরিচালক বানিয়ে দিলেন। ওর কাজ ছিল আমাকে সেটে নিয়ে যাওয়া। আর আমিও চেয়েছিলাম আনুশকা ও ক্যাটরিনার কাজের ধারা সুহানা যেন সামনে থেকে দেখতে পারে।

প্রশ্ন: কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসবে আপনি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আপনি কি মনে করেন, ‘বাওয়া সিং’ আপনার এই অপূর্ণতা পূরণ করবে?

শাহরুখ খান: আমি মজার ছলে কথাটা বলেছিলাম। মমতা দিদির সঙ্গে আমার ঘরোয়া সম্পর্ক। দিদি কখনোই মুখ্যমন্ত্রীর মতো ব্যবহার করেন না। তিনি আমাকে জিরো সিনেমারট্রেলার ওখানে দেখানোর কথা বলেন। সত্যি বলতে, আমি জাতীয় পুরস্কারের জন্য সিনেমা বানাই না। আর্টিস্টিক সিনেমা আমি বানাই না। মঞ্চ থেকে নামার পর অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, জাতীয় পুরস্কার পাইনি বলে আমার দুঃখ আছে কি না। সত্যি বলতে, জাতীয় পুরস্কারের জন্য খারাপ লাগে যে ও আমাকে পায়নি। আমি যা যা পেয়েছি তাতেই খুশি। আমি যার সঙ্গে দেখা করি তাকেই আনন্দ দিই। আর যার সঙ্গে দেখা করি না, সে বঞ্চিত হয়।