চল মন টরন্টো

প্যারাসাইট
প্যারাসাইট

ঝকমকে রোদের দিন ফুরিয়ে এল বলে। কদিন পরপর হানা দিচ্ছে বৃষ্টি। কোটর ছেড়ে এদিক–সেদিক বিরতিহীন ছুটছে কালো কাঠবিড়ালির দল। মানুষের মতো ওরাও জানে হাতে আর সময় অল্প। ঝপ করে তুষারকন্যা নেমে এল বলে। কানাডার টরন্টোজুড়ে তাই যেন জীবনের খুশি নিংড়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতা। ইতালির ভেনিস থেকে ব্যাগ গুছিয়ে হলিউড–কর্তারা এখন টরন্টোমুখী। সারা বিশ্ব থেকে তুলে আনা প্রায় সাড়ে তিন শ ছবির জোর লড়াই কানাডার ব্যস্ততম এই শহরে। উত্সব শুরুর আগেই জোরদার প্রচারণা সবখানে। এবারের টরন্টো উত্সবে দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কিছু ছবির কথা থাকছে এখানে।

ভয়াল হাসিমুখ

জোকারের সবচেয়ে কাছাকাছি শব্দ সম্ভবত ভাঁড়, লোক হাসানো যাঁদের কাজ। কিন্তু দিনকাল কী পড়েছে! ডিসি কমিকসের পাল্লায় পড়ে ‘জোকার’ শব্দের মানেই পাল্টে যাওয়ার জোগাড়। জ্যাক নিকলসন আর হিথ লেজারের মতো শক্তিমান অভিনেতার পর এবার অধিকতর জটিল চরিত্র নিয়ে হাজির ওয়াকিন ফিনিক্স।

এরই মধ্যে তাঁর অভিনীত জোকার শোরগোল ফেলে দিয়েছে ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবে। ভ্যারাইটির খবর বলছে, সেখানে টানা আট মিনিটের ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ (দাঁড়িয়ে অভিবাদন) জিতে নিয়েছে এই ছবি। কেউ কেউ তো পারলে আগেভাগেই সেরা অভিনেতার অস্কার ওয়াকিন ফিনিক্সের হাতে তুলে দেন। ইতালি ঘুরে এবার কানাডায় হবে জোকার–এর আরও বড় পরীক্ষা। টড ফিলিপস পরিচালিত এই ছবি টরন্টো উত্সবের দর্শকদেরও সমান আপ্লুত করে কি না দেখা যাক।

জো জো র‌্যাবিট
জো জো র‌্যাবিট

খেলার সঙ্গী হিটলার

ইতিহাসের পাতায় হিটলার এক রক্তপিপাসু রাষ্ট্রনায়ক। তবে জো জো র​্যাবিট ছবিতে সেই হিটলার হাজির ঠিক উল্টো বেশে। এক বালকের কল্পনায় হিটলার বনে গেছেন সবার দোস্ত। মূলত কমেডি ধাঁচের এই ছবি নিয়ে তুমুল আগ্রহের একটা বড় কারণ তাইকা ওয়াতিতি। এই ছবিতে হিটলারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এ সময়ের আলোচিত নির্মাতা-অভিনেতা তাইকা।

শান্তির সন্ধানে

নাজারেথ থেকে প্যারিস। প্যারিস থেকে নিউইয়র্ক অথবা মন্ট্রিয়ল। শান্তি মিলবে কোথায়? ফিলিস্তিনি নির্মাতা এলিয়া সুলাইমান ইট মাস্ট বি হেভেন ছবিতে পুরোপরি তাঁর নিজস্ব কায়দায় তুলে এনেছেন এ সময়ের ফিলিস্তিনের গল্প। ছবির মূল চরিত্র একটুখানি শান্তির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কিন্তু শান্তি মিলল কি? 

জোকার
জোকার

স্বর্ণ পাম–শিকারি

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উত্সবে এশিয়ার বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে বং জুন হোর প্যারাসাইট। এবারের কান চলচ্চিত্র উত্সবে এই ছবি জিতে নিয়েছে স্বর্ণ পাম। মিশ্র ঘরানার এই ছবি নিয়ে তাই টরন্টো উত্সবের দর্শকদের আগ্রহও আকাশচুম্বী।

আলমোদাভার বনাম আমেনাবার

স্পেনের দুই প্রতাপশালী নির্মাতা এবার মুখোমুখি হচ্ছেন টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে, স্পেশাল প্রেজেন্টেশন বিভাগে। পেদ্রো আলমোদোভারের ছবি পেইন অ্যান্ড গ্লোরি এবার আলোকিত করবে টরন্টো উত্সব। এটিকে মনে করা হচ্ছে এই নির্মাতার আত্মজৈবনিক ছবি। ছবিতে বর্ষীয়ান এক নির্মাতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যান্থনিও বান্দেরাস। অন্যদিকে আলেহান্দ্রো আমেনাবার নিয়ে আসছেন হোয়াইল অ্যাট ওয়ার। স্পেনের গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি হয়েছে এই ছবি।

পেইন অ্যান্ড গ্লোরির নির্মাতা ও শিল্পীরা
পেইন অ্যান্ড গ্লোরির নির্মাতা ও শিল্পীরা

আওয়ার লেডি অব দ্য নাইল

আফগানিস্তানের কাবুলে জন্ম। তারপর এদিক–সেদিক ঘুরে ফ্রান্সে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়। একসময়ের দেশান্তরি আফগান আতিক রহিমি এখন আর্ট ফিল্মের দুনিয়ায় চেনা নাম। সেই আতিক রহিমি তাঁর সাম্প্রতিক ছবি আওয়ার লেডি অব দ্য নাইল নিয়ে আসছেন টরন্টো উত্সবে। ‘কনটেম্পরারি ওয়ার্ল্ড সিনেমা’ বিভাগের উদ্বোধন হবে এই ছবির প্রদর্শনী দিয়ে।

দুঃসাহসী রবার্ট ফিস্ক

ইরাক–যুদ্ধের কঠিন সময়ে সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক লড়ে গেছেন অসম সাহসিকতায়। বহু যুদ্ধ ময়দানের প্রত্যক্ষদর্শী ফিস্ক। দুঃসাহসী এই যুদ্ধবিষয়ক সাংবাদিকের (ওয়ার জার্নালিস্ট) অবিস্মরণীয় অভিযাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র দিস ইজ নট আ মুভি। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য অবশ্যই দ্রষ্টব্য। প্রদর্শিত হবে ‘টিফ ডকস’ বিভাগে।