ক্যামেরাবন্দী ঘুমাতে না দেওয়ার গল্পগুলো

‘হাজত’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘হাজত’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

‘আমি বোধ হয় কোনো ফিল্মমেকার নই। আমাকে বলা যেতে পারে একজন অশিক্ষিত চিত্রশিল্পী। রাস্তায় দেখেন না, উষ্কখুষ্ক চুলের এলোমেলো একটা লোক ইটের টুকরা বা চক পেলে পিচের রাস্তাটাকেই ক্যানভাস বানিয়ে নিজের মনে আঁকতে, লিখতে শুরু করে, আমি ওই রকমই একজন। সিনেমা বানানোর সময় আমি দর্শকদের কথাও মাথায় রাখি না। আমি কেবল নিজের জন্য সিনেমা বানাই। যে গল্পটা দিনের পর দিন আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না, একটু স্বস্তির জন্য আমি সেটাকে ক্যামেরাবন্দী করি।’

নির্মাতা যুবরাজ শামীমের সঙ্গে কথার এক ফাঁকে নিজের আর নিজের সিনেমা সম্পর্কে এভাবেই বললেন তিনি। তাঁর প্রথম ছবি ‘আদিম’–এর পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শেষের পথে। এরই মধ্যে করোনাকালে শেষ করলেন আদিমের সিকুয়েল ‘হাজত’–এর শুটিং। শিগগিরই ছবিটির সম্পাদনার কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে ‘আদিম’–এর কাজ শেষ করে ছবিটি বিশ্বচলচ্চিত্রের আসরগুলোতে পাঠাবেন বলে মনস্থির করেছেন এই তরুণ নির্মাতা।

প্রথম ছবি আদিমের শুটিংয়ের জন্য ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বস্তিতে থাকা শুরু করেন শামীম। ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যত দিন শীতকাল ছিল, শুটিং করেছেন। আবার ২০১৯ সালের শীতে এক দিন শুটিং করে শেষ করেছেন সিনেমার শুটিং। অন্যদিকে করোনাকালেই শেষ করেছেন ‘হাজত’–এর শুটিং। প্রথম ছবিটা মুক্তি না দিয়েই পরের ছবি কেন? উত্তরে শামীম জানান, প্রতি শেয়ার ৫০০০ টাকা, ১২০টি শেয়ার বিক্রি করে প্রাথমিকভাবে ‘আদিম’–এর শুটিং শেষ করেন তিনি। দীর্ঘদিন হয়ে যাচ্ছিল, তা–ও এই ছবির কাজ শেষ হচ্ছিল না। একধরনের চাপা হতাশা কাজ করছিল। সেটি ঝেড়ে ফেলতেই নতুন ছবির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া। গল্পটা নাকি তাঁকে খুব ভাবাচ্ছিল।

নির্মাতা যুবরাজ শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নির্মাতা যুবরাজ শামীম। ছবি: সংগৃহীত

গল্পটা কী নিয়ে? উত্তরে যুবরাজ বললেন এক মজার গল্প: ‘এমনিতে আমি কিম কি দুকের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত। অল্প কয়েকটা চরিত্র। তাঁদের জটিল মনস্তাত্ত্বিক গল্প। ছোটবেলায় আমি যখন বাংলা সিনেমা দেখতাম, দেখতাম, রিয়াজ–পূর্ণিমার বিয়ের হলো, সিনেমা শেষ করে দিল। আমি ভাবতাম, এখান থেকে কী হলো? ওরা কি সংসারে ঝগড়া করত? ওদের কয়টা বাচ্চা হলো? আদিম ছবিটা আমি শেষ করেছিলাম, মানুষের অপরাধপ্রবণতার প্রবৃত্তি থেকে একটা খুন করা দিয়ে। যে খুনের কথা ওই খুনি ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু খুন করে সে ওই যে স্টেশনের পাশে ঘুমিয়ে পড়ল, পরদিন ঘুম থেকে উঠে সে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারল না। একটা তীব্র অপরাধবোধ তাঁকে তাড়া করে নিয়ে বেড়াতে লাগল। সেই মানুষটা অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হতে, একটা স্বাভাবিক দিনের আশায় কী করে, সেই অনুসন্ধান করা হয়েছে “আদিম”–এর পরের ছবি “হাজত”–এ। তাকে কেউ লোহার গারদে বন্দী করেনি, সে নিজের মনের হাজতে বন্দী।’

‘হাজত’ ছবিটির গল্প, চিত্রনাট্যও যুবরাজ শামীমের লেখা। চিত্রগ্রহণ করেছেন আনন্দ সরকার ও যুবরাজ শামীম। অভিনয়ে সাদেক, বাদশা, দুলাল, সোহাগী, স্বপনসহ আরও অনেকে। অভিনয়শিল্পীরা প্রত্যেকেই অপেশাদার। ‘আদিম’ ছবিটি তিনজনের ছোট ইউনিট নিয়ে বানানো। আর ‘হাজত’ ছবিটির ক্ষেত্রে ছবির দলের সদস্য একজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারজনে। করোনার দিনে যথাযথ সতর্কতা নিয়েই শুটিং করেছেন বলে জানিয়েছেন এই নির্মাতা।