একাধিক জুটির ছবি নেই, আসছেন না তারকা শিল্পী
২০০৮ সালের আগেও অনেক ছবিতেই একসঙ্গে কয়েকটি জুটি কাজ করতেন। এমনকি এক ছবিতে তিন জুটিরও অভিনয় দেখা গেছে। প্রযোজক-পরিচালকেরা ভাবতেন, জনপ্রিয় জুটির ছবি দেখতে গিয়ে নতুন জুটির অভিনয় দেখে তাঁদেরও পরিচয় পাবেন দর্শকেরা। একপর্যায়ে ওই নতুন জুটিই দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠতেন ধীরে ধীরে। এভাবেই একাধিক জুটি নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে নতুন তারকা শিল্পী তৈরি হতেন দেশীয় চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রপাড়ায় পরিচালক, প্রযোজকেরা এখন প্রায়ই অভিযোগ করেন, প্রায় ১০ বছর ধরে ঢালিউডে একাধিক জুটির সিনেমা নেই বললেই চলে। এখন বেশির ভাগ ছবিই একজন নায়ক ও একজন নায়িকাভিত্তিক। এতে অভিনয়শিল্পী তৈরির পথ থেমে গেছে।
পরিচালক সাফি উদ্দিন বলেন, ‘আমার সুখের স্বর্গ ছবিতে শাবানা-আলমগীর জুটির সঙ্গে ছিলেন মৌসুমী-ওমর সানী, বিদ্রোহী বধূ ছবিতে শাবানা-আলমগীরের সঙ্গে বাপ্পা-মৌসুমী, কন্যাদান ছবিতে শাবানা-আলমগীরের সঙ্গে সালমান শাহ-লিমা অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া সমাধি, তোমার জন্য মরতে পারি, সাত খুন মাফ, বিশ বছর পর ইত্যাদি ছবিতে ফেরদৌস, রিয়াজ, শাকিব খান, আমিন খান, আরমান, মৌসুমী, নদী, সাদিয়াসহ একাধিক নায়ক–নায়িকা মিলে কাজ করেছেন। এভাবে শিল্পীও এসেছে, ছবিও ব্যবসা করেছে।’
এই পরিচালক আরও জানান, তারকা শিল্পীর অভাবে এখন সিনেমা কম তৈরি হচ্ছে। ছবিতে নতুন অভিনয়শিল্পীদের জুটি না থাকায় নতুন তারকাও তৈরি হচ্ছে না। ফলে এক জোড়া নায়ক-নায়িকা ও ভিলেন মিলেই সিনেমা। কোনো কোনো ছবিতে মা–বাবাকেও খুঁজে পাওয়া যায় না।
পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন জানান, ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রুস্তম ছবিতে নায়ক মান্নার সঙ্গে আরও দুজন নায়ক শাহিন আলম ও মেহেদী অভিনয় করেছেন। নায়িকা ছিলেন পূর্ণিমা, ঝুমকা ও নদী। ২০০৫ সালের ধর শয়তান ছবিতে আলেকজান্ডার বোর সঙ্গে দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে ছিলেন শাকিব খান। এমন আরও অনেক ছবিতেই নতুন ও পুরোনো মিলে একাধিক জুটি কাজ করে ঢালিউডে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন অনেক নায়ক-নায়িকা। খোকন বলেন, এভাবেই ধীরে ধীরে শাকিব খান তৈরি হয়েছেন। এখন তিনি দেশের শীর্ষ নায়ক। ২০০৭–০৮ সালের আগের ছবিগুলোতে একাধিক জুটি ছিল। ফলে সেই সময় তারকা শিল্পীরও অভাব ছিল না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত পাসওয়ার্ড ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে ইমন অভিনয় করেন। ইমনের একক ছবি হলে তিনি এত দর্শক পেতেন না। এভাবে শাকিব খানের সঙ্গে আরও কয়েকটি ছবিতে কাজ করলে শাকিব খানের ভক্তরাও ইমনের ছবি দেখায় অভ্যস্ত হবেন। একসময় ইমনও দর্শকপ্রিয় নায়ক হবেন।
এই অবস্থার জন্য পরিচালকদেরও দায়ী করলেন বদিউল আলম খোকন। তিনি জানান, যখন থেকে চলচ্চিত্রে শাকিব খান ‘ওয়ান ম্যান শো’ হয়ে গেলেন, তখন থেকেই একাধিক জুটির ছবি কমে গেছে। কারণ, শাকিব খান ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া শুরু করলে প্রযোজকেরা বাড়তি খরচ করে আর কোনো জুটি নিতে চাননি। তিনি বলেন, এখন আরও ভয়াবহ অবস্থা। প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীরা এ পেশার প্রতি ভরসা রাখতে পারছেন না। এখন ছবি থেকে বিনিয়োগ ফিরছে না। অভিনয়শিল্পীরাও এটিকে পেশা হিসেবে নিতে ভয় পাচ্ছেন।
কুলি ছবিতে ওমর সানী-পপি জুটির সঙ্গে আমিন খান-সংগীতা জুটি, প্রেমের প্রতিশোধ ছবিতে ওমর সানী-সোনিয়া জুটির সঙ্গে শাহিন আলম-অরুণা বিশ্বাস জুটি কাজ করেছিলেন। ঢালিউডে এমন উদাহরণ শত শত। নায়ক ওমর সানী বলেন, ‘কোনো ছবিতে রুবেল, কোনো ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দ্বিতীয় জুটির নায়ক হিসেবে আমি অভিনয় করেছি। এ কারণে তাঁদের ভক্ত-দর্শকদেরও আমি পেয়েছি। এভাবে একটা সময় প্রথম সারির নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়েছে। এখন অনেকগুলো জুটির সিনেমা তৈরি না হওয়ার ব্যর্থতা আমাদের শিল্পীদেরও। এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউই এক ছবিতে দুই নায়ক, দুই নায়িকা থাকলে অভিনয় করতে চান না। তাহলে একাধিক অভিনয়শিল্পী তৈরি হবে কীভাবে?’