ইলিয়াস কাঞ্চনকে কেউ ভুল বুঝবেন না
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে ২৫ বছরের বেশি সময় একা লড়ছেন একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তাঁর সংগঠনের নাম এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। তাঁর আন্দোলনের সূত্রে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকরের পর ধর্মঘটকারী বাস-ট্রাকের শ্রমিকেরা ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়াসহ তাঁর ছবি অসম্মানজনকভাবে রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা হয়। আজ সোমবার গুণী এই চলচ্চিত্র তারকার অপমান ও হামলার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এফডিসির সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করেন এসব সংগঠনের সদস্যরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান, মহাসচিব বদিউল আলম, পরিচালক সোহানুর রহমান, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, ইমন, আলেকজান্ডার বো, মারুফ, শাহিন সুমন, অপূর্ব রানা, ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি আতিকুর রহমানসহ চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠনের নেতারা।
মানববন্ধনে মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ যাতে পথে নিরাপদে চলতে পারে, তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। যাঁরা পরিবহনশ্রমিক, সবার নিরাপত্তার জন্যও তাঁর দাবি ভূমিকা রাখবে। তাহলে তাঁকে কেন অপমান করা হচ্ছে? আমরা চাই ইলিয়াস কাঞ্চনকে কেউ ভুল না বোঝে তাঁর দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নে সহমত পোষণ করুন। আমরা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তাঁর পাশে আছি।’
মিশা সওদাগর বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদের কাছে একজন সম্মানিত শিল্পী। দেশের মানুষের নিরাপদের কথা মাথায় নিয়ে ২৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের কল্যাণেই নিবেদিতপ্রাণ। তাঁকে অপমান করা মানে পুরো শিল্পীসমাজকে অপমান করা। আমরা তাঁর অপমান সহ্য করব না। শিল্পীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। নামলে দেশের মধ্যে অনিয়ম হয়ে যাবে।’
মিশা বলেন, ‘২৫ বছর ধরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে আছেন কাঞ্চন সাহেব। দেশের মানুষেরও তা প্রাণের দাবি। অবিলম্বে সড়ক পরিবহনের নতুন আইন বাস্তবায়ন করা হোক।’
যাঁরা ইলিয়াস কাঞ্চনকে অসম্মান করে যাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে মিশা বলেন, ‘আমরা শিল্পীসমাজ ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশে আছি। তিনি ন্যায়ের পক্ষে কাজ করছেন। প্রয়োজন হলে আমরাও রাস্তায় নামব। দয়া করে বাংলার শিল্পীসমাজকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না।’
অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘ সময় ধরে এই আন্দোলন করে যাচ্ছেন। আমরা সব সময়ই তাঁর সঙ্গে ছিলাম, আছি। এটি তো দেশের কাজ। শিল্পীরা তাঁর নেতৃত্বে কাজ করছেন।’
১৯৯৩ সালের কথা। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে যায় গত শতকের নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের জীবন। কারণ, ওই বছরের ২২ অক্টোবর তাঁর একটি ছবির শুটিং দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। শোকার্ত ইলিয়াস কাঞ্চন এরপর সিদ্ধান্ত নেন, আর সিনেমা করবেন না। একসময় শুরু করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। সাড়াজাগানো অনেক ছবির নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। এভাবে কেটে গেছে ২৫ বছরের বেশি সময়। তাঁর সংগঠনের নাম এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে।