আমরা প্রবাসী বাঙালি, কিন্তু বাঙালি: জয়া বচ্চন

তৃণমূলের রাজ্য দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে রাজ্যসভার সদস্য, সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়াএএনআই

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ থেকে কয়েকটা লাইন শোনালেন জয়া বচ্চন। ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন—/ এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান...।’ ‘ধন্যি মেয়ে’ এ-ও জানালেন, এ দুটি চরণ তাঁর খুব প্রিয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। গতকাল সোমবার বিকেলে কলকাতার টালিগঞ্জে আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসের পক্ষে একটি রোড শোতে অংশ নেন তিনি। এর আগে তৃণমূলের রাজ্য দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে রাজ্যসভার সদস্য, সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বলেন, ‘আমি ছবি করতে আসিনি। এসেছি বাংলার গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের প্রধান যোদ্ধা ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে।’

তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে জয়া বচ্চন
এএনআই

সংবাদ সম্মেলনে জয়া বলেন, ‘আমার নাম জয়া বচ্চন। তার আগে আমার নাম জয়া ভাদুড়ি ছিল। আমার বাবার নাম তরুণ কুমার ভাদুড়ি। আমরা প্রবাসী বাঙালি, কিন্তু বাঙালি। এখানে অভিনয় করতে আসিনি।’ বক্তব্যের একপর্যায়ে বাঙালি আবেগ উসকে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের ভয় দেখিয়ে কেউ সাফল্য পায়নি। এটা আপনাদের চিন্তা করতে হবে, ভাবতে হবে।’

প্রায় ১০ মিনিটের বক্তৃতার বেশির ভাগ সময় জয়া কথা বলেছেন স্পষ্ট বাংলায়। দু-একবার ইংরেজিতেও বলেছেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমি সব সময় এভাবেই কথা বলি, হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি মিলিয়ে।’ উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী দলের সাংসদ জয়া বচ্চন নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গেও তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের প্রশংসা করে বলেন, ‘দেশের মধ্যে মহিলাদের জন্য সব থেকে নিরাপদ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। এটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে গত রোববার কলকাতায় এসে পৌঁছান জয়া বচ্চন।
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবকে ধন্যবাদ জানিয়ে জয়া বচ্চন বলেন, ‘আমাদের পার্টির নেতা অখিলেশজি আমাকে জানালেন মমতাজিকে আমরা সমর্থন করছি, আমাদের পক্ষ থেকে আপনি গিয়ে সেই বার্তা জানাবেন। খুব ভালো লাগল। কেননা, কাজটি তিনি আমাকে দিলেন।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য একা একজন মহিলা লড়ছেন, সেই মমতাজির পাশে এসে দাঁড়ানোর দায়িত্ব পেয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। গর্বিত বোধ করেছি এই দায়িত্ব পেয়ে। তাঁর মাথা, পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সিংহহৃদয় এ মহিলার, লড়াই করার ক্ষমতায় একবিন্দু চিড় ধরাতে পারেনি।’

জয়ার মাথায় ছিল সমাজবাদী পার্টির ‘লাল টুপি’
এএনআই

জয়ার মাথায় ছিল সমাজবাদী পার্টির ‘লাল টুপি’। আগাগোড়া নিজের মতো করেই বলে গেলেন তিনি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে আমার অনেক বন্ধু বলেছেন, এই বলবেন, ওই বলবেন। আমি বলতে চাই, আমার ধর্ম আমার থেকে হাইজ্যাক করবেন না। আমার গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার হাইজ্যাক করবেন না। এখানে আমি আসলে আমরা সবাই, আর ঠিক সেই কারণেই এখানে এসেছি। কঠোর পরিস্থিতির মাঝেও অবিচলচিত্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সবার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়ছেন। দেশ ও বিশ্বের অনেক আগে বাংলা এসব নিয়ে ভাবে।’

জয়া বচ্চন ও অমিতাভ বচ্চন

জয়ার সঙ্গে হয়তো লিখিত বক্তব্য ছিল। কিন্তু দেখা গেল, পুরোটা সময় তিনি নিজের মতো করেই বক্তব্য দিয়ে গেলেন। সংবাদকর্মীদের দিকে তাকিয়ে অভিভাবকের মতো করে বললেন, ‘এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে বসে আছে। মাস্ক পরো বাবা!’ বললেন, ‘আসার আগে ভাবছিলাম কী বলব? আমি আসলে পরিকল্পনা করে কিছু বলতে পারি না। যা মনে আসে, বুদ্ধিতে কুলায়, সেটাই বলি। মনের মানুষ তো!’

উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সত্য লিখবেন, সত্য বলবেন। আপনারা বাংলার মাটির লোক, যেটা বস বলবে, সেটা করলে চলবে না। যেটা মন বলবে, বুদ্ধি বলবে, সেটা করবেন। বাঙালি চিরকালই সেটা করেছে, বাঙালিকে ভয় দেখিয়ে কেউ সফল হতে পারেনি, এখনো পারবে না।’

স্ত্রী জয়া বচ্চন ও ছেলে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে অমিতাভ বচ্চন।
ইনস্টাগ্রাম

তৃণমূল ভবনে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘ধন্যি মেয়ে’কে সংবর্ধনা দেন পশ্চিম বাংলা রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও সাংসদ দোলা সেন। নিজের বক্তব্য শেষ করার আগে দোলার সঙ্গে খুনসুটিও করলেন জয়া, ‘“দোলা রে দোলা রে”, ওকে সংসদে এভাবেই ডাকি আমি।’ পাশাপাশি বিরোধীদের উদ্দেশে ‍মৃদু কটাক্ষ করে বলেন, ‘মমতাকে যাঁরা পছন্দ করেন না, তাঁদের বলব, লজ্জা লজ্জা!’

জয়া বচ্চন

জয়া ভাদুড়ি ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জবলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা খ্যাতিমান সাংবাদিক তরুণকুমার ভাদুড়ি, মায়ের নাম ইন্দিরা ভাদুড়ি। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে জয়া অভিনয় করেন সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘মহানগর’ ছবিতে। সেই অভিষেক তাঁকে এগিয়ে নেয় অনেক দূর। পরে জাতীয় পুরস্কার পদ্মশ্রীসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। জয়া বচ্চন সমাজবাদী পার্টির হয়ে রাজ্যসভার সদস্য সেই ২০০৪ সাল থেকে।