অভিনেত্রী মায়া ঘোষ মারা গেছেন
দীর্ঘদিন পর্দার অন্তরলেই ছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন নানা রোগের সঙ্গে। কিন্তু এবার চলে গেলে সবকিছুর অন্তরালে। দুরারোগ্য কর্কট ব্যাধির সঙ্গে লড়তে লড়তে অবশেষে হার মানলেন মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। আজ রোববার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে দীপক ঘোষ।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন মঞ্চ, নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। তাঁর ছেলে দীপক ঘোষ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ২০০০ সালে মায়ের ক্যানসার ধরে পড়ে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে চলে চিকিৎসা। ২০০৯ সালের দিকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর কিডনি, লিভার ও হাঁটুর সমস্যা দেখা দেয়। তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আবারও ক্যানসার ধরা পড়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যানসার হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। মার্চে আবার যেতে বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। ১৩ মার্চ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর ২২ মার্চ তাঁকে কলকাতায় নেওয়া হয়। প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছিল মায়ের স্বাস্থ্য। এর মধ্যে মা দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। গত ১৫ এপ্রিল তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে যশোর কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শেষ হয় তাঁর ইহজগতে পথচলা। আজ বিকেলে যশোরের নীলগঞ্জ শ্মশানে তাঁকে দাহ করা হবে।
১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোরের মণিরামপুর উপজেলার প্রতাপকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মায়া ঘোষ। বাবার নাম শংকর প্রসাদ গাঙ্গুলি। পরবর্তী সময়ে একই উপজেলার মাছনা-খানপুর গ্রামের দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। দিলীপ ঘোষ মারা গেছেন ২০০২ সালে। এই দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে।
ছেলে দীপক ঘোষ বললেন, মা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার শরণার্থীশিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের রেঁধে খাওয়ানোসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে তাঁর সার্টিফিকেট ছিল না। এসব নিয়ে ভাবতেন না। বলতেন, দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছি, সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য না।
১৯৮৪ সাল থেকে মায়া ঘোষ–দিলীপ ঘোষ দম্পতি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। জীবনের অর্ধেকটা সময় তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্র অঙ্গনে কাটিয়েছেন। তিনি দুই শতাধিক সিনেমা ও নাটকে অভিনয় করেছেন। মঞ্চনাটক, টিভি ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে ছিল সরব উপস্থিতি। ১৯৮১ সালে ‘পাতাল বিজয়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় শুরু তাঁর।