কনসার্টে বিশৃঙ্খলায় কারা
‘হঠাৎ করে ২০-৩০ জনের দল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। কনসার্টটি বাতিল হলে গেল। আমরা পারফর্ম করতে পারলাম না,’ ফেসবুকে লিখেছেন নেমেসিসের ভোকালিস্ট জোহাদ রেজা চৌধুরী।
১৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘গণজোয়ার’ কনসার্টে নেমেসিস, অ্যাভয়েড রাফা, ক্রিপটিক ফেইট, কনক্লুশন ও বে অব বেঙ্গলের গাওয়ার কথা ছিল। কনসার্টটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না, টিকিট শো ছিল। তবে একদল কিশোর টিকিট ছাড়াই কনসার্টে ঢুকতে চায়, নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে গেট ভেঙে ফেলে তারা।
এর আগে বাকি তিন ব্যান্ড গাইলেও নেমেসিস ও অ্যাভয়েড রাফা মঞ্চে ওঠার আগেই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কনসার্ট বাতিল হয়েছে। গেট ভেঙে কনসার্টে ঢুকে পড়ার কয়েকটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ‘লেজেন্ডস অব দ্য ডিকেড’ কনসার্টেও টিকিট ছাড়াই অনেকে ঢুকে পড়েন। বিশৃঙ্খলার কারণে ঘণ্টাখানেকের মতো গান বন্ধ থাকে। এই সপ্তাহে নিরাপত্তার শঙ্কায় ‘ঢাকা রেট্রো’ কনসার্ট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্লু ব্রিক কমিউনিকেশন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছর তিন হয় কনসার্টে টিকিট ছাড়া ঢুকে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বছর পাঁচেক হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কনসার্ট।
কবে থেকে শুরু
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছর তিন হয় কনসার্টে টিকিট ছাড়া ঢুকে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বছর পাঁচেক হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কনসার্ট। এর আগে কনসার্টে সাধারণ মানুষ খুব একটা আসতেন না, মূলত ব্যান্ড সংগীতের অনুরাগীরাই থাকতেন।
এই বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার এক্সপো জোনে ‘রক অ্যান্ড রিদম ৪.০: রেজারেকশন অব ব্ল্যাক’, গত বছরের আগস্টে ‘দ্য স্কুল অব রক-ভলিউম ১’ কনসার্টেও গেট ভেঙে ঢুকে পড়েছিল অনেকে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তবে এর বিরুদ্ধে কখনোই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে দিন দিন গেট ভেঙে ঢুকে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। ইদানীং তা আরও বেড়েছে।
১৯ অক্টোবর শেরেবাংলা নগর থানায় ২০ বছর বয়সী একজনসহ অজ্ঞাতনামা ৩০–৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ‘গণজোয়ার’ কনসার্টের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ম্যাভিক্স গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা ফারহান ফুয়াদ।
এরা কারা?
জোহাদ ফেসবুকে লিখেছেন, বিগত বেশ কয়েকটি কনসার্টে এই একটি জিনিসই হচ্ছে। এরা কারা? এরা কি আসলেই গান শুনতে আসে নাকি খুবই পূর্বপরিকল্পনা করে শো পণ্ড করতে কর্মকাণ্ড চালায়?
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ‘গণজোয়ার’ কনসার্টের গেট ভাঙার ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের বেশির ভাগই কিশোর–তরুণ। ১৯ অক্টোবর শেরেবাংলা নগর থানায় ২০ বছর বয়সী একজনসহ অজ্ঞাতনামা ৩০–৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ‘গণজোয়ার’ কনসার্টের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ম্যাভিক্স গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা ফারহান ফুয়াদ। এতে আয়োজকদের মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
মামলাটি তদন্ত করছেন শেরেবাংলা নগর থানার সাব–ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) সামিউল হক। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ যাচাই করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হবে।
অ্যাভয়েড রাফার ভোকালিস্ট রাফা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি কনসার্টেই কমন কয়েকটা ছেলেকে দেখা যায়। এটা মজা থেকে করে নাকি ওদের কেউ করতে বলে, এখনই সেটা বলা যাচ্ছে না। সেটা বের করা দরকার। এটা একধরনের সংগঠিত অপরাধ।’
এটা একধরনের সংগঠিত অপরাধ।
সংকট কতটা
অ্যালবামের যুগ ফুরিয়েছে। ইউটিউব ও স্পটিফাই থেকেও খুব একটা উপার্জন নেই। ফলে ব্যান্ডের উপার্জনের জন্য কনসার্টকেই ভরসা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
নেমেসিসের ভোকালিস্ট জোহাদ রেজা চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চাকরি করি না। আমার উপার্জন মিউজিক ও লাইভ শো। লাইভ শো বন্ধ হলে আমি সমস্যায় পড়ব। আরও অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।’
তারা ভাঙচুর করে পার পেয়ে যাচ্ছে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে ওরা পেয়ে বসছে।
সুরাহা কোন পথে?
‘তারা ভাঙচুর করে পার পেয়ে যাচ্ছে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে ওরা পেয়ে বসছে,’ বলছিলেন জোহাদ রেজা চৌধুরী। ‘সামনে কী হবে জানি না, তবে এটা জানি যে খুব তাড়াতাড়ি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। আজ কনসার্টে হামলা দিচ্ছে, কাল যেকোনো আয়োজনে হামলা দিতে পারে। বাংলাদেশের জনগণ গানপাগল, আমরা এটা খুব ভালো করে জানি, এই দেশে গান কখনো থামবে না।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশি কার্যক্রমে খানিকটা ভাটা পড়েছে। কনসার্টে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের বিকল্প নেই।