এমন কিছুরই অপেক্ষায় ছিলেন সাবরিনা

সাবরিনা কার্পেন্টার। ছবি: রয়টার্স

‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ওটা আপাতত খাচ্ছি না,’ ক্যাপাচিনো অর্ডার করে বললেন ‘এসপ্রেসো’ গায়িকা। কফি দিবস চলে গেছে, তবু আলাপের শুরুতেই কফির কথা বলার কারণটা বিশ্বসংগীতের শ্রোতারা বুঝে যাবেন। হচ্ছিল এ সময়ের আলোচিত গায়িকা সাবরিনা কার্পেন্টারের কথা। চলতি বছর বিশ্বসংগীতে নাটকীয় উত্থান ঘটেছে ২৫ বছর বয়সী এই মার্কিন গায়িকার। তাঁর গান ‘এসপ্রেসো’কে এ পর্যন্ত বছরের সবচেয়ে আলোচিত গান বললে কি ভুল বলা হয়? তাই সাবরিনার সঙ্গে আলাপের শুরুতেই কফির প্রসঙ্গটা তুলল টাইম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী এই সাময়িকীর ‘টাইম ১০০ নেক্সট ২০২৪’-এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন সাবরিনা, সে উপলক্ষেই সাময়িকীটির সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এক ‘এসপ্রেসো’ দিয়েই অনেক রেকর্ড ওলটপালট করে দিয়েছেন সাবরিনা। গত ১১ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া গানটি যুক্তরাষ্ট্রসহ ২০টি দেশের টপ চার্টের শীর্ষে ছিল। মিউজিক স্ট্রিমিং সাইট স্পটিফাইতে এক বিলিয়ন স্ট্রিমিং হওয়া প্রথম গান এটি। গানটির জন্য এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে বর্ষসেরা গানের পুরস্কার জেতেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর আরেকটি গান ‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ’ও টপ চার্টগুলোয় ঝড় তোলে।

সাবরিনা কার্পেন্টার। ছবি: রয়টার্স

এটি মূলত ‘এসপ্রেসো’র সিকুয়েল গান। এ গানের ভিডিওতে দেখা যায়, সাবরিনা গ্রেপ্তার হয়েছেন, ‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ’ তাই শুরু হয় জেল থেকে। গানটির মিউজিক ভিডিও নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়। কারণ, ভিডিওতে সাবরিনার সঙ্গে জুটি হন তাঁর বাস্তব জীবনের প্রেমিক আইরিশ অভিনেতা ব্যারি কিয়োগান। আলোচিত এ দুই গানই তাঁর ষষ্ঠ স্টুডিও অ্যালবাম ‘শর্ট অ্যান্ড সুইট’-এর। ২৩ আগস্ট মুক্তি পায় অ্যালবামটি।

২৫ বছর বয়সেই এমন সাফল্য পেলেও অবাক নন সাবরিনা। তিনি মনে করেন, শৈশব থেকে নিজেকে এভাবেই তৈরি করেছেন; এমন কিছুরই অপেক্ষায় ছিলেন। ‘ছোটবেলায় কত কিছুই না করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের পারফরম্যান্স দেখতাম, মনে মনে একদিন নিজেকেও সেখানে দেখার স্বপ্ন দেখতাম। আজকের এই সাফল্য আমার দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফল,’ বলেন সাবরিনা। এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস দেখে বড় হওয়া সাবরিনা এবারের আসরে পুরস্কার পেয়েছেন, পারফর্মও করেছেন; এ তথ্যও এত দিনে অনেকের জানা।

সাবরিনা কার্পেন্টার। ছবি: রয়টার্স

১০ বছর বয়স থেকেই গান গেয়ে ইউটিউবে দিতেন সাবরিনা। মূলত গাইতেন ক্রিস্টিনা অ্যাগুইলেরা ও অ্যাডেলের গান। তাঁর গানের সুবিধার জন্য বাড়িতে স্টুডিও তৈরি করেন বাবা। ব্যস, এরপর গান নিয়ে স্বপ্ন দেখতে আর দ্বিতীয়বার চিন্তা করেননি। সাবরিনা গানকে পুরোদস্তুর পেশা হিসেবে ভাবতে থাকেন ২০০৯ সালে। সে বছর সংগীত প্রতিযোগিতা ‘দ্য নেক্সট মাইলি সাইরাস’-এ তৃতীয় হন। এ প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ছিলেন গায়িকা মাইলি সাইরাস।

টাইম-এর ‘টাইম ১০০ নেক্সট ২০২৪’ তালিকায় সাবরিনাকে নিয়ে লিখেছেন তাঁর শৈশবের তারকা ক্রিস্টিনা অ্যাগুইলেরা। সেখানে ‘হোয়াট আ গার্ল ওয়ান্টস’ গায়িকা সাবরিনাকে নিয়ে লিখেছেন, ‘তাঁর মধ্যে একটা নির্ভার ব্যাপার আছে, এটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। গান গাওয়া, মঞ্চে পারফর্ম করা, এমনকি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও তাঁর মধ্যে একটা অনায়াস ভঙ্গি আছে; এটা দারুণ।’ ক্রিস্টিনা অ্যাগুইলেরা, অ্যাডেলসহ সাবরিনাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন ম্যাডোনা, ব্রিটনি স্পিয়ার্স, বিয়ন্সে ও রিয়ানা।

গানের পাশাপাশি অভিনয়ও শুরু করেছিলেন সাবরিনা। ২০১২ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি টিভি সিরিজ, মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্রে তাঁকে দেখা গেছে। তবে গানের মতো অভিনয়ে সেভাবে নিজের ছাপ রাখতে পারেননি। তবে তাঁর সাম্প্রতিক জনপ্রিয়তার কারণে অনেক প্রযোজক ও প্ল্যাটফর্ম তরুণ এই গায়িকাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর মধ্যেই জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে নেটফ্লিক্সের জন্য শো ‘আ ননসেন্স ক্রিসমাস উইথ সাবরিনা কার্পেন্টার’ নিয়ে আসছেন তিনি।

আরও পড়ুন

টাইম-এর সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ট্রলসহ নানা প্রসঙ্গেই কথা বলেন সাবরিনা। জানান, অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য থেকে দূরে থাকতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এড়িয়ে চলেন, তবে তিনি ব্যতিক্রম। তাঁর সম্পর্ক সব ধরনের নেতিবাচক খবর পড়েন, এটা তাঁকে প্রভাবিত করে না। আর সব সময় মনে করেন, তাঁর বয়স কম। মনে মনে তরুণ থাকার এই মন্ত্র তাঁকে মানসিকভাবে চাঙা রাখে।