জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এর কারণ ইতিহাস নিয়ে দুই দেশের মূল্যায়ন ও আরও কিছু অমীমাংসিত বিষয়। দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সম্পর্ক উন্নত করে নেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও তিনি কতটা সক্ষম হবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কেননা, নাগরিক পর্যায়ে বহমান বৈরী স্রোতের বাধা তাঁকে পার হতে হবে বলে লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ থেকেই যায়।
রাজনৈতিক সম্পর্ক ও সামাজিক অবস্থানের বেলায় দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলতে থাকলেও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের দিক থেকে নীরব একটি ইতিবাচক ধারা সব সময় বহমান ছিল। যার সবশেষ নজির সদ্য শেষ হওয়া ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসব।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয় দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানে এদের জোরালো উপস্থিতি বজায় রেখে আসছে। ২০১৮ সালে স্বর্ণপামজয়ী ‘শপলিফটারস’ নির্মাতা হিরোকাজু কোরে-এদা এবারের উৎসবে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর নতুন ছবি ‘ব্রোকার’ বা ‘দালাল’ নিয়ে। কোরে-এদাকে গণ্য করা হয় জাপানি সমাজের অবক্ষয়ের নানা রকম দিক অনেকটা কাব্যিক ধাঁচে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার দক্ষ এক কারিগর হিসেবে। প্যারাসাইটে যেমন অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে উপার্জনের উপায় হারিয়ে ফেলা কিছু মানুষের অনেকটা একই পরিবারভুক্ত হয়ে উঠে দোকানের পণ্য চুরি করতে দেখা গেছে।
এবারের ছবিতেও সমাজের ভিন্ন আরেকটি নেতিবাচক প্রবণতা তিনি তুলে এনেছেন। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নেওয়া সেই ছবির কাহিনির মূলে আছে সদ্যোজাত শিশু চুরি করে এদের বিক্রি করে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কিছু মানুষ। জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা মিয়াজাকি শহরে কিছুদিন আগে সেখানকার প্রধান শহর মিয়াজাকি সিটির একটি হাসপাতালে সদ্যোজাত সন্তান ফেলে যাওয়ার জন্য বিশেষ একটি বাক্স-‘বেবি বক্স’ বসিয়ে নিয়েছিল। উদ্দেশ্য অনাহূত সন্তানের জন্মের কারণে বিব্রত বোধ করা মা কিংবা অভিভাবকেরা যেন লোকচক্ষুর আড়ালে সদ্যোজাত শিশুর বেঁচে থাকার একটি ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। শহর কর্তৃপক্ষ সেই সব শিশুসন্তানের পরিচর্যার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। এদের পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে চাওয়া কোনো পরিবার আগ্রহী হলে সেই ব্যবস্থাও কর্তৃপক্ষ করে দেয়। সে রকম বেশ কয়েকটি শিশু সেই বেবি বক্সে জমা পড়ার খবর জাপানের সংবাদমাধ্যম দিয়েছে। পরিচালক কোরে-এদা সেই ঘটনাকে বেছে নিয়েছেন তাঁর ছবির কাহিনির পটভূমি হিসেবে, যদিও বিষয়টিকে আরও কিছুটা সম্প্রসারিত করে নিয়ে সেই সব শিশুকে নিয়ে আড়ালে চলতে থাকা একধরনের বাণিজ্য হচ্ছে তাঁর ছবির মূল বিষয়বস্তু।
সেরা ছবির পুরস্কার কোরে-এদা না পেলেও সেই ছবিতে অভিনয় করার জন্য এবারের উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিনেতা সং কাং-হো। ৫৫ বছর বয়সী সং হলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার বিজয়ী দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম অভিনেতা। একই সেই উৎসবে ‘ডিসিশন টু লিভ’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পাক চান-উক। ফলে উৎসবের প্রধান নয়টি পুরস্কারের মধ্যে দুটি দক্ষিণ কোরিয়া পেলেও এর একটির সঙ্গে জাপানের যোগ অনেক বেশি।
সং অবশ্য এর আগে বং জুন-হো পরিচালিত ‘প্যারাসাইট’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করার পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিনেতা বলেছেন, ‘পরিচালক কোরে-এদা কোরীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হওয়ায় তার সঙ্গে কাজ করা ছিল আনন্দের এক অভিজ্ঞতা।’