এখন আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এটা পরিবর্তনের ভালো একটা লক্ষণ: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

প্রদর্শনী শেষে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর  সঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জয়ী গীতিকার কবির বকুল। ছবি: প্রথম আলো

৮ মার্চ নিউইয়র্কে উড়াল দেওয়ার আগেই জেনেছি, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি উত্তর আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। ১০ মার্চ শুক্রবার জামাইকা মাল্টিপ্লেক্স সিনেমাসে যাই সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে প্রথম শোটি দেখার জন্য। এর বিশেষ কারণ, প্রথম শোতে নির্মাতা ফারুকীও উপস্থিত থাকবেন। তিন বছর সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা এই সিনেমা দেশে প্রদর্শনের অনুমতি না পাওয়ায় আমেরিকা ও কানাডায় ছবিটি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে সিনেমাটির যৌথ প্রযোজক।
পর্দায় সিনেমাটি শুরুর আগে ১১৮ জন দর্শকের সামনে মাইক হাতে এলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমা আমেরিকান মেইনস্ট্রিমে খুব যে রেগুলার তা কিন্তু না। মাঝেমধ্যে দু-একটা ছবি রিলিজ হয়। কিন্তু এখানে আমেরিকা ও কানাডায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আছেন। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটা নতুন জেনারেশন ফিল্ম মেকার হিসেবে বের হয়ে আসছে। ২০০২ সালে আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন আমরা ছিলাম সংখ্যালঘু, কিন্তু এখন আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এটা পরিবর্তনের ভালো একটা লক্ষণ। এই পরিবর্তনের সময় আসলে আমেরিকা ও কানাডার দর্শকদের একটা দায়িত্ব আছে, এখানে মেইনস্ট্রিম থিয়েটারে আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের সংখ্যা যে কম না, সেটা বলতে হবে।

সেটা যেকোনো বাংলাদেশি ছবির ক্ষেত্রেই, শুধু আমার ছবির ক্ষেত্রে না। যেকোনো ছবি এখানে মুক্তি পেলে আমি মনে করি সবারই সেই সিনেমাটি দেখতে যাওয়া উচিত। আপনারা প্রত্যেকেই কিন্তু একটা মিডিয়া হাউস হয়ে উঠতে পারেন। তাই আমি বলব, আমার ছবিটা দেখার পর যদি আপনাদের ভালো লাগে, তবে আপনারা আপনাদের সোশ্যাল মিডিয়া, হোয়াটসআপ গ্রুপ, ফ্যামিলি গ্রুপে ছবিটি সবাইকে দেখার জন্য বলবেন।’
‘শনিবার বিকেল’ ওয়ান শট পলিটিক্যাল থ্রিলার। এটাকে সমালোচকের দৃষ্টিতে বিচার করলে এটুকুই বলব, এটি গতানুগতিক কোনো সিনেমা নয়। আবার আর্ট ফিল্মও নয়। সরল উপস্থাপন। ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার যে ট্র্যাজিক, সেই ঘটনার ছায়ায় ‘শনিবার বিকেল’–এর গল্প। সিনেমা শেষে নির্মাতার প্রতি দর্শকদের যে প্রশ্নগুলো ছিল।

সিনেমাটি শুরুর আগে ১১৮ জন দর্শকের সামনে মাইক হাতে এলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
সংগৃহীত

সেখানে এক দর্শক তাঁর কাছে জানতে চান, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমায় ফারুকীর প্রধান বার্তা কী ছিল? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে আমার জন্য বলা মুশকিল। আমরা একটা ছবি বানাই, এই ছবিটাকে একেকজন একেকভাবে গ্রহণ করেন এবং এটাই আর্ট। সিনেমা আর্টের একটা ভালো নিদর্শন। একটা ছবির মধ্যে বার্তা থাকে অনেক রকম—একেকজন একেকটা গ্রহণ করে। আপনারা আমার ছবিটা দেখে সেই বার্তা পেয়ে গেছেন। মুখে আর বলতে হবে না।’

সিনেমাটির মুক্তির আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রবাসী দর্শকদের আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। অগ্রিম টিকিটও বিক্রি হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন শপিং মল, বাঙালি কমিউনিটি, নিউইয়র্ক, জ্যামাইকা, টরন্টো শহরে দেখা গেছে ‘শনিবার বিকেল’–এর পোস্টার। প্রবাসী বাঙালিরা সিনেমাটি নিয়ে কথা বলছেন।

আমেরিকা ও কানাডায় ছবিটি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে সিনেমাটির যৌথ প্রযোজক
সংগৃহীত
‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার একটি দৃশ্য
সংগৃহীত

প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফারুকী বলেন, ‘“শনিবার বিকেল” আমার ও আমাদের টিমের কাছে একটা আবেগের নাম। আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, আমরা বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে আজ এইখানে!’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন