২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মাজিদ মাজিদি, চুয়ান আর অঞ্জনে জমজমাট উৎসব

মাস্টারক্লাসের দ্বিতীয় পর্বে ছিলেন ইরানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মাজিদ মাজিদিসংগৃহীত

৯ দিনের ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শেষ দিকে এসে দারুণ জমে উঠেছে। উৎসবের সপ্তম দিন শুক্রবার ভারতীয় অভিনয়শিল্পী শর্মিলা ঠাকুর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আর শনিবার ছিল বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে মাস্টারক্লাস। জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে আয়োজিত মাস্টারক্লাসে অংশ নিয়েছেন দেশের সিনেমাপ্রেমী তরুণ-তরুণীসহ বিদেশি অতিথিরাও।
শনিবার প্রথমে ক্লাস নেন সাংহাই ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার, সাংহাই থিয়েটার একাডেমি এবং ম্যাকাউ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক শি চুয়ান। বেইজিংকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার বাইরে চীনের নানা প্রদেশে ছড়িয়ে থাকা বিস্তৃত সমাজব্যবস্থায় বৈষম্য, নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ নানা বৈসাদৃশ্য চীনা চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও অন্যান্য কনটেন্টে তুলে ধরা হলে তা নিয়ে দেশটির সরকারের মনোভাব কেমন হয় কিংবা সেসব সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হয় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শি চুয়ান বলেন, ‘চীনের সামাজিক পরিস্থিতির চেহারা সত্যিই বিস্তৃত। এসব তুলে ধরা হচ্ছে। চীন সরকারের এসবে মনে করার কিছু নেই।’

চুয়ানের কাছে প্রশ্ন ছিল, চীনের বাজার কেন বিদেশি চলচ্চিত্রকে আরও বেশি স্বাগত জানানো হয় না। প্রশ্নকর্তার দাবি, বাংলাদেশের ১টিসহ মাত্র ১৭টি সিনেমা গত বছর চীনে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রশ্নটি শুনে চুয়ান প্রশ্নকর্তার ভুল ভাঙান। তিনি বলেন, ‘তথ্যটি ঠিক নয়। গত বছর শতাধিক সিনেমা চীনের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে। চীনে সিনেমার বাজার তৈরি রয়েছে। সেখানে নানা ভাষার চলচ্চিত্র দেখানো হয়।’
বাংলাদেশি চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরুর উপস্থাপনায় পরিচালিত হয় এই মাস্টারক্লাস। সাক্ষাৎকারধর্মী আলোচনার শেষে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল।

মাস্টারক্লাসের দ্বিতীয় পর্বে ছিলেন ইরানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মাজিদ মাজিদি। সাড়া জাগানো ইরানি চলচ্চিত্র ‘চিলড্রেন অব হেভেন’ নির্মাতা জানালেন, অস্কারজয়ী বাঙালি পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁর অনুপ্রেরণা। সত্যজিতের গল্প বলার ধরন, চলচ্চিত্র নির্মাণের ভাষার কারণে তিনি প্রভাবিত হয়েছেন।

সঞ্চালক বিধান রিবেরুর প্রশ্ন ছিল, ‘চিলড্রেন অব হেভেন’ সিনেমার অনুপ্রেরণা তিনি কীভাবে পেয়েছিলেন? উত্তরে বললেন, ‘একদম সাধারণ মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা থেকে এই গল্প সংগ্রহ করেছি। আসলে আমার সব গল্পই ডকুমেন্টারির মতো, এগুলো আমার জীবনের অভিজ্ঞতা।’ একপর্যায়ে মাজিদ মাজিদি নিজের সিনেমার নির্মাণ, চরিত্র বাছাই, চরিত্রের জন্য একদম নতুন অভিনয়শিল্পী তৈরির অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেন। ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসাহ আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভসহ ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির কারাদণ্ড প্রসঙ্গে ক্লাস থেকে একজন মাজিদ মাজিদিকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জানান, নিজের কাজ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী তিনি।

সব শেষে মাস্টারক্লাসে বিকেলে মঞ্চে ওঠেন ভারতীয় অভিনেতা ও গায়ক অঞ্জন দত্ত। তিনি জানান, বয়স বাড়ার সঙ্গে তাঁর নিজের ভাবনায় নানা বদল হয়েছে। তাঁর প্রতিটি কাজই আসলে অভিজ্ঞতা। বাংলা সিনেমার প্রখ্যাত নির্মাতা মৃণাল সেনের সঙ্গে অঞ্জন তাঁর কাজের শুরুর অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মৃণাল সেন আমাকে জোর করেই কাজে নামিয়েছেন। সত্তরের দশকে ছাত্র আন্দোলন, ভিয়েতনাম যুদ্ধসহ নানা ইস্যু দেখছিলাম। কিন্তু এগুলো কোনোটাই আমাকে স্পর্শ করছিল না। আমি ২৪ বছর বয়সেই আত্মকেন্দ্রিক ছিলাম। এর মধ্যেও থিয়েটার করে যাচ্ছিলাম। সিনেমা ভালো লাগত না, থিয়েটার ভালো লাগত। তবে মৃণাল সেনের সঙ্গে কাজ করতে করতে সিনেমায় আকর্ষণ তৈরি হয়।’ রোববার উৎসবের সমাপনী দিন।