বিনা মূল্যে বড় পর্দায় ২৫০টির বেশি সিনেমা দেখার সুযোগ
বাংলাদেশসহ ৭৪ দেশের ২৫০টির বেশি চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠেছে। আজ বিকেলে ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে উৎসবের দ্বাবিংশতম আসর উদ্বোধন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, ‘সিনেমার কোনো বাউন্ডারি নেই। বাংলাদেশে দর্শকেরা বিভিন্ন দেশের সিনেমা দেখছেন। সবাইকে এ উৎসবে সিনেমা দেখার আমন্ত্রণ জানাই।’
এই আয়োজনের মধ্যমণি ছিলেন ভারতের খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। উৎসবের এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
‘পুরোনো সিনেমার গানগুলো ভীষণ ভালো লাগল। ইমেজ খুব শক্তিশালী। সেটা বাংলা হোক কিংবা ইংরেজি হোক। ইমেজের সঙ্গে দর্শকেরা যোগাযোগ করতে পারেন’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ‘দেবী’, ‘অপুর সংসার’, ‘আরাধনা’, ‘মৌসম’ সিনেমার নায়িকা বলেন, ‘ঢাকায় এসে আমি খুবই আনন্দিত। গতকাল বিমানবন্দরে এসে শুনলাম, ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় এসেছি।’
শর্মিলা ঠাকুর যখন কথা বলছিলেন, পাশ থেকে একজন তাঁকে বাংলায় বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন শর্মিলা ঠাকুর ইংরেজিতেই বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এখানে সবাই জানেন, আমি বাংলা বলতে পারি। এখানে অনেক বিদেশি অতিথি আছেন। ইংরেজিতেই বলি। আমাকে মাফ করবেন।’
উদ্বোধনী আয়োজনের শুরুতে বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস অবলম্বনে ‘পিকচার হাউস’ শীর্ষক নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমি। ২৪ মিনিটের পরিবেশনাটি মুগ্ধ করেছে শর্মিলাকে। তিনি বলেন, ‘পুরোনো সিনেমার গানগুলো ভীষণ ভালো লাগল। ইমেজ খুব শক্তিশালী। সেটা বাংলা হোক কিংবা ইংরেজি হোক। ইমেজের সঙ্গে দর্শকেরা যোগাযোগ করতে পারেন।’
উৎসবে বিচারক হিসেবে নির্বাচন করায় ধন্যবাদ জানিয়ে শর্মিলা আরও বলেন, ‘আমাকে জুরি হিসেবে নির্বাচন করার জন্য ধন্যবাদ। সহবিচারকদের সঙ্গে সিনেমা নিয়ে আলাপ করছি।’
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার দিয়ে অভিনয়ে নাম লেখান শর্মিলা ঠাকুর। পরে বলিউডের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এই অভিনেত্রী। সত্তরের দশকে বলিউডে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন শর্মিলা।
চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, আগামী দিনে আরও দর্শকের মধ্যে উৎসবটি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা।
এরপর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে উদ্বোধনী সিনেমা হিসেবে ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম নির্মিত ঢাকার অভিনেত্রী জয়া আহসান ও রিকিতা নন্দিনী শিমু অভিনীত ফেরেশতে প্রদর্শিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টায় দেখানো হয় বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় শ্যাম বেনেগাল নির্মিত মুজিব: একটি জাতির রূপকার।
৯ দিনব্যাপী এ উৎসব চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। উৎসবে প্রতিদিন ঢাকার জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা ও ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিনা মূল্যে দেশি ও বিদেশি সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন দর্শকেরা।
‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরামা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, শিশুতোষ সিনেমা, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র, উইমেন্স ফিল্ম সেশন বিভাগে সিনেমা প্রদর্শিত হবে।
এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগে ভারতীয় নির্মাতা অঞ্জন দত্তের ‘চালচিত্র এখন’, অতনু ঘোষের ‘শেষ পাতা’, ইরানি নির্মাতা হাসান কিঘোবেদির ‘দ্য জেন্টেলম্যান’, তাজিকিস্তানের নির্মাতা মহিদ্দিন মুজাফফরের ‘ফরচুন’সহ এশিয়ার ১৫টি সিনেমা প্রদর্শিত হবে।
রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগে জর্জিয়ার চলচ্চিত্রকার ও চিত্রনাট্যকার জর্জ ওভাসভিলির কর্ন আইল্যান্ড, বিউটিফুল হেলেনসহ পাঁচটি চলচ্চিত্র দেখানো হবে। বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে হৃদি হকের ‘১৯৭১ সেই সব দিন’, লিসা গাজীর ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ইফফাত জাহানের ‘মুনতাসীর’, সৈয়দা নিগার বানুর ‘নোনা পানি’সহ বাংলাদেশের ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
এবারের আসরে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলকে ‘কান্ট্রি ফোকাস’-এ পরিণত করেছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। এই আসরের ফোকাস কান্ট্রি চীন, এতে চীনের ১৬টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগে বেলারুশের ‘এম্পটি চার্চ’, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার ‘মেন অব ডিডস’, ক্যামেরুনের ‘লায়নেস’সহ ৪০ দেশের বাছাই করা সমকালীন ৫৩টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।
দেশি-বিদেশি নারী নির্মাতাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘উইমেন ফিল্মমেকার বিভাগ’। এতে বাংলাদেশি নির্মাতা আফিফা আক্তারের ‘কালারস অব দ্য সোল’; ইরানি নির্মাতা নারগিস আবইয়ারের ‘পিন্টো’সহ ২৭টি চলচ্চিত্র রয়েছে।
স্পিরিচুয়াল চলচ্চিত্র বিভাগে ২১টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র বিভাগে নবীন ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ৭২টি তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। শিশুতোষ বিভাগে থাকছে ১০টি সিনেমা।
এ উৎসবের অংশ হিসেবে ২১ ও ২২ জানুয়ারি ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা নিয়ে ‘দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্মমেকারস কনফারেন্স’ আয়োজন করা হবে। ২১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টায় কনফারেন্সের উদ্বোধন করা হবে।
২৭ জানুয়ারি মাস্টারক্লাসে অংশ নেবেন ইরানি নির্মাতা ও প্রযোজক মাজিদ মাজিদি; ভারতীয় সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও নির্মাতা অঞ্জন দত্ত এবং চীনের সাংহাই ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার শি চুয়ান। এতে অংশ নিতে ২৫ জানুয়ারি অঞ্জন দত্ত এবং ২৬ জানুয়ারি মাজিদি ঢাকায় আসবেন।
নির্মাতাদের মিথস্ক্রিয়ামূলক চার দিনব্যাপী সেমিনার ও কর্মশালা ‘ওয়েস্ট মিট ইস্ট: চিত্রনাট্য প্রতিযোগিতা’ রয়েছে।
গতকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন; ঢাকার চীন দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর ইউয়ে লি ওয়েন এবং উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সাদিয়া রশ্মি।
আজ যেসব সিনেমা দেখতে পারেন
জাতীয় জাদুঘর (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তন), সকাল ১০টা ৩০ মিনিট: লং লিভ লাভ, পিঙ্কাম বুতপ্রাসার্ট (থাইল্যান্ড), বেলা ১টা: টেলস অ্যারাউন্ড আস, আরসেন আরাকেলান (আর্মেনিয়া), বিকেল ৫টা: মুনতাসীর, ইফফাত জাহান (বাংলাদেশ), সন্ধ্যা ৭টা: ড্যান্সিং থ্রু দ্য শ্যাডো, লিফ ব্রিসটো (কানাডা)
জাতীয় জাদুঘর (সুফিয়া কামাল মিলনায়তন)
সকাল ১০টা ৩০ মিনিট: প্যাসাং: ইন দ্য শ্যাডো অব এভারেস্ট, ন্যান্সি সেভেনডসেন (যুক্তরাষ্ট্র), বেলা ৩টা: কোট ছারমি, হুসেইন মির্জা (ইরান)
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন)
সকাল ১০টা ৩০ মিনিট: নো ওয়ান, মার্টিন ডুপলাকুয়েট (আর্জেন্টিনা)
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন)
বেলা ৩টা: দ্য ইনভিজিবল গার্ল, ডোরিয়ান ফেমেন্দেজ মরিস (চিলি, পেরু ও স্পেন)
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন)
বেলা ১টা: জালালদিন, হাসান বেনজেললুন (মরক্কো)
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা
সকাল ১০টা: খিবুলা, জর্জ ওভাসবিলি (জর্জিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্স)