টিফ ২০২৪: মূল প্রতিযোগিতার বাইরের অন্যান্য দিক

এশিয়ান ফিউচার বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছবি ‘অ্যাপোলোন বাই ডে অ্যাথেনা বাই নাইট’ ছবির একটি দৃশ্য

এবারের টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কাহিনিভিত্তিক ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হয়েছে। মূলত ‘ওয়ার্ল্ড ফোকাস’ বিভাগেই এগুলো প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে তিনটি চলচ্চিত্রের কথা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ‘টিফ এথিক্যাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ জেতা বেনিন, সেনেগাল ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায় মাটি ডিওপ পরিচালিত ‘দাহোমেই’ চলচ্চিত্রটি। ডকুমেন্টারিটি ঔপনিবেশিককালে দাহোমেই সাম্রাজ্য থেকে ফ্রান্সে শিল্পকর্ম চুরি করে নিয়ে যাওয়া সম্পর্কিত। এ রকম প্রায় ৭ হাজার শিল্পকর্ম থেকে মাত্র ২৬টি বেনিনে ফিরে আসার কাহিনি বর্ণনা করার জন্য বাস্তব ও কল্পকাহিনিকে মিশ্রিত করে অভিনব ঘরানায় নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রটিতে সাংস্কৃতিক সম্পদ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে অ্যাবোমি-কালাভি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক বক্তব্য যেমন রয়েছে, তেমনি আছে হাইতির লেখক মাকেঞ্জি ওরসেলের ভয়েস-ওভার, যা দেশে প্রত্যাবর্তনকালে রাজা ঘেজোর একটি মূর্তির চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করে। ‘দাহোমেই’ এবারের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণভালুকও লাভ করেছে।
প্রদর্শিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র হচ্ছে গোরান হুগো ওলসন পরিচালিত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত নিয়ে সুইডিশ টেলিভিশনের ফুটেজ দিয়ে সাজানো ‘ইসরায়েল প্যালেস্টাইন অন সুইডিশ টিভি ১৯৫৮-১৯৮৯’। এ বিষয়ে বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে বিস্তৃত আর্কাইভ থেকে অনন্য ও দৃশ্যগতভাবে আকর্ষণীয় ফুটেজ ব্যবহার করে, উভয়পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমলে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি এ সংঘাতের একটি দ্বান্দ্বিক গল্প চিত্রিত করা হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। দর্শক শুরুতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিদের সেখানে যাওয়া, তাদের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ইসরায়েলের ভেতরে অসাম্যসহ নানা বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।

পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রটি ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নভঙ্গ, বিপর্যয় ও লড়াইয়ের গল্প তুলে ধরে। ইয়াসির আরাফাত, আনোয়ার সাদাত কিংবা গোল্ডা মেয়ারের মতো চরিত্র যেমন এখানে আছে, তেমনি গাজা যুদ্ধ চলাকালীন অতীত ও বর্তমানের সংযোগের পাশাপাশি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির নানা দিকও উঠে আসে ২০০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্যচিত্রে।

সর্বশেষ যে চলচ্চিত্রটির আলোচনা করতে হয়, সেটি হচ্ছে বার্লিনভিত্তিক ফরাসি চলচ্চিত্রকার গিয়োম কাইয়ু ও মার্কিন চলচ্চিত্রকার বেন রাসেলের যৌথভাবে নির্মিত মিলিট্যান্ট চলচ্চিত্র ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। জার্মানি ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনার ২১২ মিনিট দীর্ঘ এ চলচ্চিত্রে জেড (জোন টু ডিফেন্ড) কমিউনিটির চলমান সংগ্রাম চিত্রিত হয়েছে, যেখানে পুঁজিবাদী উন্নয়নের বিপরীতে পরিবেশ রক্ষায় একটি নির্দিষ্ট স্থান দখল করে বসবাস করা একদল সক্রিয় কর্মীর ইউটোপিয়ান আদর্শ, লড়াকু তৎপরতা ও কমিউনিটি জীবনযাত্রা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

টিফ লাউঞ্জ সংলাপে ভারতীয় পরিচালক পায়েল কাপাডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন হিরোকাজু কোরে-এদা। ছবি: টিফের সৌজন্যে

দুই পরিচালক নুটর-ডেম-ডিল্যন্দ-এ ‘জেড’–এর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবনকে অনুসরণ করেন তাঁদের ক্যামেরা দিয়ে। চলচ্চিত্রটি প্রতিরোধ আন্দোলনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা একটি নতুন পরিবেশগত আন্দোলন ‘লি-সুলিভমো দা লা তের’–এর উত্থানকে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে আজকের পরিবেশগত অনিশ্চয়তার মধ্যে আন্দোলন, মতাদর্শ ও ভবিষ্যতের জন্য একটি সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির মিশেলে ‘জেড’ জীবনযাপনের জন্য একটি নতুন মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়। চলচ্চিত্রটি একদিকে নির্মিত হয়েছে ডিরেক্ট সিনেমার আদলে, অন্যদিকে এটি মূলত একটি ব্রেখটিয়ান চলচ্চিত্র। সেখানে বাস করা বিভিন্ন পেশার মানুষের পেশাগত কাজগুলোকে স্থির ক্যামেরায় দীর্ঘ সিকুয়েন্স শট দিয়ে ধারণ করা হয়েছে।

দীর্ঘ সময়ের কারণে চলচ্চিত্রটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমাংশে ধীরগতিতে এগোলেও দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গতি লাভ করে বিপ্লবী গানে এবং পরিশেষে পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের চিত্রে। পুঁজিবাদের পরিবেশ বিনাশী ও মুনাফাভিত্তিক পারস্পরিক বিচ্ছিন্ন সমাজব্যবস্থার বাইরে পরিবেশবান্ধব ভিন্ন সমাজ ও সম্মিলিত জীবনধারা এবং সেটি অর্জন বা রক্ষায় সক্রিয় লড়াইয়ের বাস্তব গল্প উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এটি ২০২৪ সালে নির্মিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।
এ ছাড়া উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন রোমানিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের যৌথ প্রযোজনা টিওদোরা আনা মিহাল পরিচালিত ‘ট্রাফিক’-এ নাতালিয়া চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য আনামারিয়া ভারতোলোমেই। একটি বাস্তব ছবি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তুলে ধরা এবং অভিবাসীদের জীবনের দরিদ্রতার বিরুদ্ধে সংগ্রামকে অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। এ ছাড়া সেরা শৈল্পিক অবদানের পুরস্কার জিতেছে ডং জিজিয়ান পরিচালিত চীনা চলচ্চিত্র ‘মাই ফ্রেন্ড অ্যান ডেলি’। শৈশবের বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ দেখা এবং এরপর ফ্ল্যাশব্যাকের ওপর নির্ভর করে স্মৃতি–বিস্মৃতির দোলাচলে বন্ধুত্বের নানা হৃদয়স্পর্শী গল্প উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে।
টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে বছর তিনেক আগে ‘এশিয়ান ফিউচার’ নামে পুরস্কারের ভিন্ন একটি বিভাগ চালু করেছে। এশিয়ার যেকোনো দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা গত এক বছরে তাঁদের পরিচালিত প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ছায়াছবি এ বিভাগের জন্য জমা দিতে পারেন।

উৎসবের নির্বাচকেরা সেই সব ছবি থেকে সেরা আটটি ছবি বিভাগীয় জুরিদের বিবেচনা করে দেখার জন্য পুরস্কারের জন্য বেছে নেন। এ বছর এশীয় চলচ্চিত্রকারদের জন্য বিশেষ সেই বিভাগ ‘এশিয়ান ফিউচার বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন তুর্কি চলচ্চিত্রকার এমিন ইলদিরিম পরিচালিত ‘অ্যাপোলন বাই ডে অ্যাথেনা বাই নাইট’। প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় শহর সিডে ভ্রমণ করে নানা রহস্যময় লোকের মুখোমুখি হয়ে একদা তাকে পরিত্যাগকারী নিজের মাকে খুঁজে বেড়ানো ডেফনে নামের এক নারীর গল্প হচ্ছে এ চলচ্চিত্র। উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে পরিচালক এমিন ইলদিরিম বলেছেন, ছবিটি তৈরি করার প্রক্রিয়ায় প্রধান অভিনেত্রী ছাড়াও আরও কয়েকজন নারী এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকায় এশিয়ার একটি দেশে নারী চলচ্চিত্রকর্মীদের ধীরে মূল মঞ্চে প্রবেশের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কারকে তিনি দেখছেন এবং তাঁদের সবার উদ্দেশ্যে সেই পুরস্কার তিনি নিবেদন করেন।

‘গ্ল্যাডিয়েটর ২’ ছবিতে ডেনজেল ওয়াশিংটন

এর বাইরে এ বছরের ‘কুরোসাওয়া আকিরা পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে জাপানি পরিচালক মিয়াকে শো ও তাইওয়ানি নির্মাতা ফু তিয়েন-ইউকে। অন্যদিকে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন হাঙ্গেরির কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার বেলা টার। এর বাইরে ‘অ্যানিমেশন’, ‘নিপ্পন নাউ’, ‘গালা সিলেকশন’, ‘ওয়ার্ল্ড ফোকাস’, ‘জাপানিস ক্ল্যাসিকস’, ‘উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট’, ‘টিফ সিরিজ’সহ অন্যান্য নিয়মিত বিভাগেও প্রদর্শিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে টিফ সিরিজে দেখানো হয়েছে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জ্যঁ-লুক গদারের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘সিনারিওস’, যা এ বছর তাঁর মৃত্যুর পর প্রথম প্রদর্শিত হলো। উৎসবের অন্যান্য হাইলাইটের মধ্যে ছিল হংকংয়ের অ্যাকশন কিংবদন্তি সামমো হাং ও জাপানি নির্মাতা কুরোসাওয়া কিয়োশির মাস্টারক্লাস, শীর্ষস্থানীয় নির্মাতাদের টিফ লাউঞ্জ টক সেশন এবং নারীদের ক্ষমতায়ন–সংক্রান্ত সিম্পোজিয়াম। আরও ছিল সেন্টারপিস হিসেবে রিডলি স্কটের ‘গ্ল্যাডিয়েটর ২’–এর এশীয় প্রিমিয়ার। পরিচালক স্কট এবং ড্যানজেল ওয়াশিংটনসহ অন্য অভিনেতারা উপস্থিত ছিলেন জাঁকজমকপূর্ণ এই বিশেষ আয়োজনে।
টিফ লাউঞ্জ টক সেশনে এবারের একটি নজরকাড়া আকর্ষণ ছিল চলতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নিয়ে গ্রাঁ প্রি পুরস্কার লাভ করা ভারতীয় ছবি ‘অল উই ইমাজিন এস লাইট’–এর তরুণ পরিচালিকা পায়াল কাপাডিয়ার উপস্থিতি। সেই সংলাপ অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন সাম্প্রতিক সময়ের আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত জাপানি পরিচালক হিরোকাজু কোরে-এদা। ফলে আলোচনা হয়ে উঠেছিল খুবই প্রাণবন্ত। এ কারণে আরও বেশি যে কোরে-এদা ছিলেন এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর একজন সদস্য।

আরও পড়ুন

পায়াল কাপাডিয়ার পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে কোরে-এদা শুরুতেই উল্লেখ করেন, ‘বিচারকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে এ রকম একটি চুক্তিপত্রে আমাকে স্বাক্ষর করতে হয়েছে যে সার্বিক বাছাই প্রক্রিয়ায় কে কোন ছবির পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তা আমি প্রকাশ করব না। তবে আমার কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাছাই ছবিগুলোর পরিচালকদের মধ্য থেকে কার উপস্থিতি আমি টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখতে চাই, যাঁর নাম শুরুতেই আমার মাথায় এসেছিল, তিনি হচ্ছেন এই ভারতীয় তরুণী।’

উৎসবের লোগো

মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে কর্মরত তিন মহিলার মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ও সখ্য হচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হওয়া পায়াল কাপাডিয়ার ছবির মূল বিষয়। এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে টিফের সংলাপে কাপাডিয়া উল্লেখ করেন, ‘ভারতীয় সমাজে পুরুষের প্রাধান্যে গড়ে ওঠা পারিবারিক কাঠামোয় নিজের পরিবারের অবহেলার শিকার আপনিও প্রায়ই হতে পারেন।’ তিনি বলেন, ফলে সে রকম এক সমাজে পরিবারের বাইরে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব যে পরিবারিক বন্ধনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, সেটাই তিনি তাঁর ছবির মধ্য দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন। তবে ভারতীয় সমাজ তাঁর সেই ছবি কীভাবে গ্রহণ করবে, সেটা তাঁর জানা নেই এবং ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ভারতে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তা তিনি বুঝে উঠতে সক্ষম হবেন।

খুবই প্রাণবন্ত সেই আলোচনায় কোরে-এদা ভারতীয় চলচ্চিত্রে বলিউডের প্রাধান্য এবং এর বাইরে ছায়াছবি নির্মাতারা কীভাবে কাজ করছেন, তা জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে কাপাডিয়া বলেছেন, বলিউডের সবটাই যে খারাপ, তা তিনি মেনে নিতে রাজি নন। কেননা স্বতন্ত্র পরিচালকেরাও নিজেদের ছবি তৈরি করার বাইরে বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থেকে আর্থিক নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করে নিতে পারছেন। তিনি নিজেও একসময় সে রকম কাজে জড়িত ছিলেন। পায়াল কাপাডিয়ার মা একসময় ছিলেন শিল্পী এবং ভিডিও ছবির নির্মাতা। ফলে বাল্যকাল থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির ছায়ায় তাঁর বেড়ে ওঠা এবং সিনেমাও তিনি তখন থেকেই নিয়মিতভাবে দেখে এসেছেন। একসময় নিজের ছবি তৈরির ইচ্ছা মনে দেখা দিলে চলচ্চিত্র নিয়ে লেখাপড়া করার দিকে তিনি এগিয়ে যান। তবে ভারতের নামকরা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারা সহজ ছিল না। কারণ প্রতিবছর ১০ জন সেই সুযোগ পেয়ে থাকেন। ফলে প্রথমবারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় তিনি সুযোগ পেয়ে পান এবং সেটা তাঁর সামনে খুলে দিয়েছিল ছায়াছবির জগৎ সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান লাভ করতে পারার সুযোগ, যার পরিণতি বিশ্বজুড়ে মেধাবী নির্মাতা হিসেবে তাঁর ক্রমশ পরিচিত হয়ে ওঠা। তবে এবারের টিফে বিশ্বের নানা প্রান্তের চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে এই পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া প্রত্যক্ষের সুযোগ দর্শক ও চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের জন্য ছিল উপভোগ্য এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।
পরিশেষে চলচ্চিত্রের আলোচনায় ফিরে গেলে এটি বলা যায়, উৎসবের নিয়মিত ও বিশেষ বিভাগগুলোতে প্রদর্শিত ফিকশন ও ডকুমেন্টারি সিনেমাগুলোতে বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্যে মূলত ব্যক্তি (যেমন ওয়াতানাবে, চুনহে কিংবা নাতালিয়া) ও সামষ্টিক (ফ্রান্সের ‘জেড’ কিংবা ফিলিস্তিন সংগ্রামের) লড়াইই এবার মুখ্য হয়ে উঠেছিল। চলচ্চিত্র যেহেতু জীবনেরই প্রতিচ্ছবি, তাই এই চলচ্চিত্রগুলোর অবলোকন নিশ্চয়ই বাস্তবের লড়াইকেও বেগবান করবে এবং দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষের সামগ্রিক বিজয়কে ত্বরান্বিত করবে, সেই প্রত্যাশাই জারি থাকল এবারের টোকিও চলচ্চিত্রে উৎসব শেষে।