ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সিনেমার শেয়ার বিক্রি করে শেষ করেছেন কাজ। ২০১৭ সালে নির্মাণ শুরুর পর বারবার কাজ আটকে গেছে অর্থাভাবে। কিন্তু যুবরাজ শামীম ছিলেন নাছোড়বান্দা। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে শেষ করেছেন নিজের প্রথম ছবি আদিম। যুবরাজের সেই ছবি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৪৪তম মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে। উৎসবে অংশ নিতে পরিচালক এখন মস্কোর পথে। যুবরাজের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লতিফুল হক
প্রশ্ন :
আপনাকে তো এখন অনেক সাক্ষাৎকার দিতে হচ্ছে?
জি। এটা নিয়ে আমি একটু বিব্রত।
প্রশ্ন :
কেন?
গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। সরাসরি অনুষ্ঠানে কথা বলতে গেলে বেশি ঝামেলা হয়।
প্রশ্ন :
উৎসবে আপনার ছবি কবে দেখাবে?
৩০ তারিখ আমার ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার।
প্রশ্ন :
প্রথমবার দেশের বাইরে ছবির প্রদর্শনী। কেমন লাগছে?
শুধু ছবির প্রদর্শনী নয়, আগে কখনো দেশের বাইরেই যাইনি।
প্রশ্ন :
তাই নাকি?
জি। আগে তো পাসপোর্টই ছিল না।
প্রশ্ন :
মস্কো উৎসবে নির্বাচিত হওয়ার পর করিয়েছেন?
না। এবারের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে আমার ছবিটি শর্টলিস্টে ছিল। মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তখন করিয়েছি।
প্রশ্ন :
মস্কো উৎসবে আপনার ছবি যাচ্ছে প্রথম কবে জানতে পারলেন?
জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। ২৩ বা ২৪ তারিখ হবে, মনে নেই।
প্রশ্ন :
ঠিক তখন কী মনে হয়েছিল?
অনেক দিন হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। শোনার পর মনে হয়েছিল সেটা থেকে মুক্তি পেলাম। ছবি বানানোর পর কাউকে সেভাবে বলতে পারছিলাম না, হতাশা তৈরি হয়েছিল। উৎসবে জায়গা পাওয়ায় মানসিকভাবে স্বস্তি পেয়েছি।
প্রশ্ন :
আপনার ছবির সবাই তো অপেশাদার অভিনয়শিল্পী। ছবি মস্কো যাচ্ছে শুনে তারা কী বলেছে?
ওরা তো প্রথমে বিশ্বাস করেনি। যখন প্রথম আলোসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলো, তখন ওরা ভীষণ খুশি হয়েছে।
প্রশ্ন :
টঙ্গীর গল্প মস্কো যাচ্ছে। এলাকার সবাই কী বলছে?
সবাই এখন আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আগে অনেকে হাসাহাসি করত—কী সব বানাচ্ছে, বস্তিতে থাকছে...এসব বলত। কিন্তু তারাই এখন অন্য চোখে তাকায়।
প্রশ্ন :
আদিম বানাতে গিয়ে নাকি পুলিশ আপনাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল...
পুলিশ বস্তিতে নিয়মিত তল্লাশি চালায়। একবার তেমনই এক অভিযানে আমাকে আটক করে। আমি যার সঙ্গে কথা বলছিলাম, তার কাছে মাদক পাওয়া যায়। তখন আমাকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে বস্তির মানুষজন পাশে দাঁড়ায়। ওরা পুলিশকে বুঝিয়ে ছাড়িয়ে আনে।
প্রশ্ন :
বস্তির লোকজন সাহায্য করেছে বলছেন। কেউ বাধা দেয়নি?
তা তো দিয়েছেই। কত রকমের মানুষ, কতভাবে যে বাধা দিয়েছে, বলে শেষ করা যাবে না।
প্রশ্ন :
তাদের ঠেকালেন কীভাবে?
আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধি দেয় এলাকার সংসদ সদস্যের সঙ্গে ছবি তুলে ঘরে টানিয়ে রাখতে। এটা করে ভালো ফল পেয়েছিলাম। ‘প্রভাবশালী’ ভেবে কেউ ঘাঁটায়নি। এ ছাড়া আমার আগের বিভিন্ন কাজের ছবি, ছোটখাটো পুরস্কার বস্তিতে যে ঘরে থাকতাম, সেখানে রেখেছিলাম, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে, আমি আসলেই নির্মাতা।
প্রশ্ন :
অর্থ জোগাড়ে তো খুব সমস্যা হয়েছে।
কতবার যে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। রাতের পর রাত ফেসবুকে সিনেমার শেয়ার বিক্রির পোস্ট দিয়েছি। কখনো কেউ সাড়া দেয়নি, কখনো অপ্রত্যাশিতভাবে সাড়া পেয়েছি।
প্রশ্ন :
সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে মস্কো উৎসবে জায়গা পেয়ে কতটা খুশি?
অনেক খুশি। মস্কোর সঙ্গে তো আমাদের দেশের পুরোনো সম্পর্ক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে নির্মিত ছবি জাগো হুয়া সাভেরা প্রথম মস্কো উৎসবে দেখানো হয়। কাকতালীয়ভাবে আমিও তাঁর প্রাগৈতিহাসিক গল্পটি পড়ার পর আদিম-এর অনেক ভাবনা পাই।
প্রশ্ন :
মস্কো যাওয়ার খরচ কি উৎসব কর্তৃপক্ষ দিয়েছে?
জি, যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া—সব ওরাই ব্যবস্থা করেছে।
প্রশ্ন :
পুরস্কার জিতবে আদিম?
কর্তৃপক্ষ বলেছে উৎসব শেষ হওয়ার আগে না ফিরতে। দেখা যাক।