বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামে বিভক্তি

স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামে বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছেআয়োজকদের সৌজন্যে

১৭তম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামে বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে।

সংগঠনটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুক্রবার বিকেল চারটায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। উৎসব শেষ হবে ২৭ ডিসেম্বর।

এ ঘোষণার পর বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের জ্যেষ্ঠ সদস্য নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম এবং মানজারে হাসীন মুরাদ আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, উৎসবটি স্থগিত করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে গতকাল পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম জানান, উৎসব চলবে।

স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের দুই পক্ষের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এল। একটি পক্ষে রয়েছেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলামসহ অন্যরা; অপর পক্ষে নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম এবং মানজারে হাসীন মুরাদসহ অন্যরা।

পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

গতকাল নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম এবং মানজারে হাসীন মুরাদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘...কোনো কোনো মহলের অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে চলচ্চিত্র উৎসবটি তার নিজস্ব মূল্যবোধ ও চরিত্র হারাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের জরুরি সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সিদ্ধান্তক্রমে এ উৎসবটি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে চলচ্চিত্র উৎসবটির আয়োজন করা হবে।’

উৎসব বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তাঁরা লিখেছেন, ‘কেউ যদি এ উৎসবটি আয়োজনের চেষ্টা করে থাকে, তবে সে উৎসবটি বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উৎসব হবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সব সদস্যকে সে উৎসবটি বর্জন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা এ দেশের জনগণ ও গণমাধ্যমকেও ওই চলচ্চিত্র উৎসবটিকে বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম এবং মানজারে হাসীন মুরাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসার পর গতকালই বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘এই তিনজন নির্মাতা বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রাচীনতম সদস্য হলেও বর্তমানে তাঁরা শর্ট ফিল্ম ফোরামের কোনো নির্বাহী দায়িত্বে নেই। শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্যাড ব্যবহার করে এ ধরনের বিবৃতি বা উৎসব স্থগিত করার এখতিয়ার তাঁদের নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে উৎসব যথারীতি চলবে।’

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের কটু মন্তব্য উৎসবকে সংকটে ফেলে। তিনি শুরুতে উৎসব কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তানভীর মোকাম্মেল “নাগরিক” নামের ভারতীয় পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আপাতদৃষ্টে এটি ছিল ছাত্র-জনতার একটি আন্দোলন। কিন্তু নেপথ্যে তা ছিল শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আমেরিকার সিআইএ ও পাকিস্তানের আইএসআই দ্বারা পরিকল্পিত, মার্কিন প্রশাসনের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় জামায়াতে ইসলামী, হিযবুত তাহরীর এবং অন্যান্য ইসলামিক শক্তিগুলোর এক ইসলামি অভ্যুত্থান।”’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তানভীর মোকাম্মেলের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর সরকারি–বেসরকারি সব মহলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের অনেক সদস্যও এতে ক্ষুব্ধ হন। পরে নির্বাহী কমিটির সভায় তাঁর নেতৃত্বে গঠিত উৎসব কমিটি স্থগিত ও পরে বাতিল করা হয়। পরে ফোরামের একটি অংশ নানা টালবাহানা করে উৎসব বাতিল করার জন্য নির্বাহী কমিটি ও পুনর্গঠিত ফেস্টিভ্যাল কমিটিকে চাপ দিতে থাকে। এমনকি তারা এমনও বলেছে যে উৎসব আয়োজনে তাদের সমর্থন পাওয়া যাবে, যদি দুজন উপদেষ্টাকে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়।’

জহিরুল ইসলামের ভাষ্যে, ‘বিগত উৎসবগুলোতে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রীদের নিয়ে উৎসব আয়োজন করলেও তাঁরা এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ব্যাপারে তাঁদের অবস্থানকেই তুলে ধরেছেন। তাঁদের এ প্রস্তাব উৎসব আয়োজকদের কাছে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য ও স্ববিরোধী মনে হয়েছে। উৎসব টিম বরাবরের মতো হ্রাসকৃত ভাড়ায় মিলনায়তন পেয়েছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদান পেয়েছে এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মোরশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি একটি বৈঠকে আছেন। বাকিদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এর আগে ২৩ নভেম্বর সৈয়দ ইমরান হোসেন কিরমানীকে উৎসব পরিচালকের দায়িত্বে দেওয়া হয়।

উৎসবে কী থাকছে

শতাধিক দেশের ২৭৬ চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসবটি আয়োজন করছে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম।

শুক্রবার বিকেল চারটায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। উৎসব শেষ হবে ২৭ ডিসেম্বর।

এবারের উৎসবটি জুলাই-আগস্ট অভ্যুথানে শহীদের প্রতি এবং শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে উৎসর্গ করা হয়েছে।

এবারের আসরের কান্ট্রি ফোকাস হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে ফিলিস্তিন। ২৫ ডিসেম্বর বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ফিলিস্তিনের আটটি ফিকশন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

আঞ্চলিক ফোকাস হিসেবে আরব দেশগুলোকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্লেক্স মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে ১টা এবং বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৯টি ফিকশন ও একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে।

জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য ড্রিম, দ্য ফাইট, দ্য ভিক্টরি’ প্রদর্শিত হবে ২৩ ডিসেম্বর। এর বাইরে একাধিক সেশন রয়েছে। এসব সেশনে নুরুল রাশেদ চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম, রফিকুল আনোয়ার, তারেক আহমেদ, নাঈম মোহায়মেনসহ অনেকে উপস্থিত থাকবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থাকবেন কথাসাহিত্যিক এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন।

২৭ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী আয়োজন থাকবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চিত্রশিল্পী ওয়াকিলুর রহমান ও সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার আশানুর রহমান।