অস্কার দৌড়ে আরও দুই ধাপ এগোল ‘মশারি’
বাংলাদেশ থেকে অস্কারে যাওয়া সিনেমাগুলোর সঙ্গে আগে তেমন কোনো হলিউডের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত হতে দেখা যায়নি। তাই বলা যেতে পারে, আমাদের সিনেমা নতুন একটি যুগে পা রাখল।
অস্কার দৌড়ে আরও দুই ধাপ এগিয়ে গেল ‘মশারি’। বাংলাদেশের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির সঙ্গে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন অস্কারজয়ী দুই হলিউড তারকা জর্দান পিল ও রিজ আহমেদ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনোদন সাময়িকী ভ্যারাইটির সম্ভাব্য অস্কার বিজয়ীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে নুহাশ হুমায়ূনের ‘মশারি’।
প্রতিবছর অস্কার মনোনয়ন–দৌড়ে এগিয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত হন হলিউডসহ বিভিন্ন ইন্ড্রাস্টির নামীদামি চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও তাঁদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তাঁরা বেশির ভাগই নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন। অস্কারের তালিকাভুক্ত ভোটারদের কাছে সিনেমাটির জন্য ভোট চান। ভোটে হলিউডের তারকা ও কলাকুশলীরা একটা বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেন। আগামী ৯৫তম অস্কার মনোনয়নে ৯ হাজার ৬৬৫ সদস্য ভোট দিতে পারবেন। তাঁদের ভোটে নির্ধারণ হবে অস্কার মনোনয়ন তালিকায় কারা জায়গা পাচ্ছেন। ভোটের প্রচারণায় এগিয়ে থাকলে মনোনয়ন থেকে লাইভ অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতে যেতে পারে ‘মশারি’।
অস্কার কোয়ালিফাই চলচ্চিত্র উৎসবগুলোয় বিজয়ী সিনেমাগুলো সরাসরি অস্কারের লাইভ অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম শাখায় মনোনয়নযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। বিশ্বে এ ধরনের উৎসবের সংখ্যা শতাধিক। এগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট ও আটলান্টা। এই দুটি উৎসব থেকেই গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার জিতে আলোচনায় আসে ‘মশারি’। সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট উৎসবে মিডনাইট বিভাগে মশারি দেখে বিশেষভাবে সিনেমাটির প্রশংসা করেন জর্দান পিলের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। নুহাশ বলেন, ‘জর্দান পিলের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মার্চ থেকে কথা হচ্ছিল। আমাদের সিনেমাটিকে তারা পছন্দ করেছিল। তখন থেকে আরও অনেকেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। ফাইনালি জর্দান পিল ও রিজ আহমদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ায় অনেক বেশি ভালো লাগছে।’
বাংলাদেশ থেকে অস্কারে যাওয়া সিনেমাগুলোর সঙ্গে আগে তেমন কোনো হলিউডের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত হতে দেখা যায়নি। তাই বলা যেতে পারে, আমাদের সিনেমা নতুন একটি যুগে পা রাখল। ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমস–এর একটি প্রতিবেদনে আ সেপারেশন সিনেমার পরিচালক আজগর ফারহাদি বলেছিলেন, ‘এশিয়ান তরুণ ও মেধাবী নির্মাতাদের সিনেমাগুলো সঙ্গে হলিউডের তারকা, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলে অস্কারে এশিয়ার সিনেমা আরও বেশি করে জায়গা করে নেবে। সিনেমা নিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে না পারার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক এশীয় সিনেমা মনোনয়নে জায়গা করে নিতে পারে না।’
‘মশারি’কে নিয়ে গেট আউটখ্যাত নির্মাতা জর্ডান পিলের প্রযোজনা সংস্থা মাঙ্কিপ–র পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘মশারি ব্যতিক্রমী একটি চলচ্চিত্র। প্রথম ফ্রেম থেকেই দৃশ্যায়ন ও আবেগের দিক থেকে নাড়া দিয়ে যায়। সিনেমাটির গল্প আমাদের পোস্ট অ্যাপোক্যালিপ্টিক পৃথিবীতে নিয়ে যায়। ছবিটির টিমের সঙ্গে মাঙ্কিপ যুক্ত হতে পেরে কৃতজ্ঞ।’ অন্যদিকে সাউন্ড অব মেটালখ্যাত অভিনেতা রিজ আহমেদের লেফট হ্যান্ডেড ফিল্মসের মন্তব্য, ‘এটি অ্যাপোক্যালিপ্টিক ভবিষ্যতে কম বয়সী দুই বোনের টিকে থাকার আবেগময় গল্প। যেখানে উপনিবেশবাদ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রসঙ্গ আছে। নুহাশ হুমায়ূনের টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গল্পটি ভাগাভাগি করার সুযোগ পেয়ে আমরা রোমাঞ্চিত।’ নুহাশ বলেন, ‘সিনেমাটির সঙ্গে জর্দান পিল ও রিজ আহমেদের যুক্ত হওয়া অবশ্যই আমাদের জন্য খুশির খবর। অস্কার মনোনয়ন পাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখানে অস্কার পাওয়া দুজন সম্মানিত মানুষ আমার সিনেমাটির পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটা আমার জন্য খুবই সম্মানজনক। ভালো লাগছে।’
সিনেমাটির সঙ্গে জর্দান পিল ও রিজ আহমেদের যুক্ত হওয়া অবশ্যই আমাদের জন্য খুশির খবর। অস্কার মনোনয়ন পাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখানে অস্কার পাওয়া দুজন সম্মানিত মানুষ আমার সিনেমাটির পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটা আমার জন্য খুবই সম্মানজনক। ভালো লাগছে।
গত বছর অস্কারের লাইভ অ্যাকশন শর্টফিল্ম শাখায় পুরস্কার জিতেছিল যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডের সিনেমা ‘দ্য লং গুডবাই’। সিনেমাটি গত বছর পাম স্প্রিং শর্টফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হয়েছিল। এই উৎসবে এ বছর প্রতিযোগিতা করেছিল ‘মশারি’। এ ছাড়া গত বছর ভ্যারাইটির সম্ভাব্য অস্কার তালিকাতেও ছিল ‘দ্য লং গুডবাই’। শুধু তাই নয়, তিন তারকা দিয়ে সিনেমাটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল ভ্যারাইটি। এবারও একইভাবে তিন তারকা দিয়ে ‘মশারি’র ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ভ্যারাইটি।
মশারিতে দেখা যায়, রক্তপিপাসু মশায় ভরে গেছে বিশ্ব। দুই বোন অজানা আতঙ্কে মশারির নিচে রাত পার করছে। দুই বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনেরা বিনতে কামাল ও আয়রা।