সিনেমায় ষোলো কলার এক কলাও দেওয়া হয়নি

এবারই প্রথম ঈদে একসঙ্গে তিনটি সিনেমা নিয়ে হাজির হলেন শহীদুজ্জামান সেলিম। ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’ ও ‘লাল শাড়ি’। তিন সিনেমায় তিন ধরনের চরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে। প্রতিটি চরিত্রেই ছিল যত্নের ছাপ। কখনো খল, কখনো ইতিবাচক চরিত্র করে হলভর্তি দর্শকের করতালি আদায় করেছেন। নতুন করে আলোচনায় আসা এই অভিনেতাকে নিয়ে লিখেছেন মনজুরুল আলম
শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: জাহিদুল করিম

ঢাকার বাইরের একটি প্রেক্ষাগৃহ। চলছে ‘সুড়ঙ্গ’র শো। হল থেকেই শহীদুজ্জামান সেলিমকে ফোন করলেন এক ভক্ত। অচেনা নম্বর থেকে ভেসে এল উচ্চ স্বর, ‘আপনি কি সেলিম ভাই, আপনি কিন্তু আপেল খান চরিত্রে সেই অভিনয় করেছেন।’ প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি এই অভিনেতা। শুধু বুঝতে পারেন, সিনেমা হল থেকে ফোন করেছেন কোনো এক দর্শক। নেপথ্যে শহীদুজ্জামান সেলিমের সংলাপ শোনা যাচ্ছিল।
আরেক দিন হঠাৎ তাঁর সামনে এসে এক ভক্ত বললেন, ‘৩০ মিনিট আগে আপনার এক্সিট ঠিক হয় নাই। শেষ পর্যন্ত আপনাকে দরকার ছিল।’ এবারও একটু দ্বিধায় পড়ে গেলেন এই অভিনেতা। পরে বুঝতে পারলেন, ‘প্রিয়তমা’র কথা বলছেন এই ভক্ত। সিনেমায় ৩০ মিনিট আগেই শেষ হয়ে যায় তাঁর অংশ। কিন্তু সিনেমা শেষ হলেও দর্শকদের মনে থেকে যান এই অভিনেতা। এবারের ঈদে এমন অনেক ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হয়েছেন এই অভিনেতা।

শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: আশরাফুল আলম

সুড়ঙ্গর একটি দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। সেই দৃশ্যে দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা আপেল খান একটি সুড়ঙ্গ দেখে তাঁর সহকর্মীকে বলছেন, ‘কামরুজ্জামান আমেরিকা যাওয়ার ইচ্ছা আছে?...শুনেছি বাংলাদেশের উল্টো দিকে আমেরিকার অবস্থান। আল্লাহর নাম লই নেমে পড়ো। ভাগ্য ভালো থাকলে ওয়ান দি বারোই যাইবো।’ হলজুড়ে হাসির রোল ওঠে। আবার প্রিয়তমা সিনেমায় খল চরিত্রে সেলিমের উপস্থিতি ছিল ভয়জাগানিয়া। প্রথম দৃশ্য থেকেই তিনি সেটা করতে পেরেছেন। লাল শাড়ি সিনেমায়ও তাঁর চরিত্রটা খল, তাঁতিদের যে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
খল বা পার্শ্বচরিত্রে দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত এই অভিনেতা বলেন, ‘দর্শকেরা আমার ছোট চরিত্রগুলোকে বড় চরিত্রের পাশে দাঁড় করিয়েছেন। অভিনয়ের প্রশংসা করে বলছেন, “সেলিম ভাই দুর্দান্ত, অসাধারণ”, “শহীদুজ্জামান সেলিম একজন অভিনেতাই”, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসা করছেন। চরিত্র পছন্দ করেছেন বলেই আমার নাম নিচ্ছেন। আমার কাছে মনে হয়, যদি কেউ চরিত্র বুঝে অভিনয় করে বা সেই অভিনয়দক্ষতা থাকে, তাহলে সেই চরিত্র পছন্দ না করার কোনো কারণ নেই।’

‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার পোস্টার
ছবি: ফেসবুক

গত বছরের নভেম্বরে একটি শুটিংয়ের সময় হঠাৎ রায়হান রাফীর ফোন। এই পরিচালকের ‘পরাণ’-এ বিদ্যা সিনহা মিমের বাবার চরিত্র করেছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম। এবার রাফীর কথা, ‘সেলিম ভাই, ভিন্ন একটি চরিত্র আছে। আপনাকে জাদু দেখাতে হবে।’ ব্যস, এটুকুই। তারপর চিত্রনাট্য হাতে পান। ছোট চরিত্র কিন্তু গল্পটি ভালো লেগে যায়। চট্টগ্রামের ভাষায় খেলা দেখাতে হবে। চট্টগ্রামের বন্ধুবান্ধব, চট্টগ্রামের ভাষায় টেলিভিশন অনুষ্ঠান, নাটক দেখে নিয়মিত ভাষা শিখতে থাকেন। এই ছবির শুটিংয়ের মধ্যেই প্রিয়তমার লোকদের ফোন। প্রযোজক আরশাদ আদনান সিনেমাটির জন্য সেলিমের কথা আগেই পরিচালক হিমেল আশরাফকে বলে রেখেছিলেন। পরিচালকের সঙ্গে চরিত্র নিয়ে বসার পর জানতে পারেন, এখানে তাঁকে কক্সবাজার অঞ্চলের ভাষায় কথা বলতে হবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ভাষা অনেকটা একই রকম। তখন তিনি পরিকল্পনা করেন, চরিত্রের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষা আর প্রমিত ভাষা মিশিয়ে আলাদা টোন ব্যবহার করবেন। সেলিম বলেন, ‘দুটি সিনেমার ভাষা এক হবে, এটা পরে বুঝেছি। কারণ, চিত্রনাট্য প্রমিত ভাষায় ছিল। কিন্তু আলাদা করেই আমার জায়গা থেকে অভিনয় করেছি। এ ছাড়া দুটি সিনেমায় প্রপস হিসেবে যে ২০ লাখ টাকা (শুটিংয়ের জন্য বানানো) দেওয়া হয়েছিল, এটাও একই জায়গা থেকে ভাড়া করা ছিল। এটা আমার চোখে ধরা পড়েছিল। দুটি চরিত্র আলাদা করতে খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ে আমাকে খুব সতর্ক হতে হয়েছে।’

‘লাল শাড়ি’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে (বাঁ থেকে) রাশেদ মামুন অপু, শহীদুজ্জামান সেলিম, সাইমন সাদিক ও অপু বিশ্বাস
ছবি: ফেসবুক

এই অভিনেতা বলেন, ‘আগেও শাকিবের সঙ্গে অভিনয় করেছি। কিন্তু এই শাকিব সেই শাকিব নয়। শাকিব যে এতটা পরিশ্রমী, জানতাম না। রাত–দিন একাকার করে শুটিং করেছে। কোনো ছাড় দেয়নি। এ ছাড়া সে অনেক মিশুক। এত বড় হিরো কিন্তু আমাকে আলাদা করেনি। একসঙ্গে দৃশ্য থাকলে শাকিব ডেকে বলত, “সেলিম ভাই, আমার কাছে এসে বসেন।’ আবার আফরান নিশো আমাদের নাটকের ছেলে। সে–ও অনেক পরিশ্রমী। যথেষ্ট সম্মান করে। সে–ও প্রথম সিনেমায় ভালো করেছে। অপু বিশ্বাসও আন্তরিক। তার টিমেরও চেষ্টা ও কাজের প্রতি যত্ন ছিল। যে কারণেই আমার চরিত্রগুলো নিয়ে দর্শক আজ কথা বলছেন।’
সিনেমায় অভিনয় করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। এ পর্যন্ত করেছেন ৩০টির বেশি সিনেমা। শিগগিরই আরও চারটিতে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছেন। মুক্তির অপেক্ষায় একাধিক সিনেমা। বলা যায়, তাঁর মনোযোগজুড়েই এখন বড় পর্দা। বললেন, ‘সিনেমায় আমার ষোলো কলার এক কলাও দেওয়া হয়নি। সবে শুরুটা করেছি।’