২৫ বছর পর আবদুল কাদের ছাড়া ‘ইত্যাদি’
তিন দশকের বেশি সময় ধরে দর্শকের জন্য ‘ইত্যাদি’ বানাচ্ছেন হানিফ সংকেত। এর মধ্যে ২৫ বছর ধরে সঙ্গী ছিলেন মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের গুণী শিল্পী আবদুল কাদের। তাঁর মৃত্যুর পর ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব প্রচারিত হতে যাচ্ছে। ২৫ বছরে এবারই প্রথম আবদুল কাদের ছাড়া ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। এবারের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে আবদুল কাদের অনুপস্থিতি উপস্থিত সবার মধ্যে একটা ভীতির সঞ্চার করেছে বলে জানালেন এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পক হানিফ সংকেত। সোমবার সকালে প্রথম আলোকে এমনটাই জানান তিনি।
হানিফ সংকেত বললেন, ‘আমরা আমাদের প্রিয় শিল্পী আবদুল কাদেরের স্মরণে কিছু না কিছু রাখব, তা এই মুহূর্তে বলতে চাইছি না। অনুষ্ঠান প্রচারের দিন তা সবাই দেখতে পাবেন।’ ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে মামা–ভাগ্নে নামের বিভাগ ছিল। এই বিভাগে মামা চরিত্রে আবদুল কাদের ও ভাগনে আফজাল শরীফ অভিনয় করতেন। আবদুল কাদের মারা যাওয়ার পর এবারই প্রথম তা হতে যাচ্ছে না। দীর্ঘদিনের সহশিল্পীকে না পেয়ে সবার মধ্যে দুঃখবোধ ও বেদনাবোধ কাজ করেছে। হানিফ সংকেত বললেন, ‘২৫ বছর আমরা একটা পরিবারে ছিলাম। তাঁর অনুপস্থিতিটা শুধু আমার না, ইউনিটের সবারই খারাপ লেগেছে। সবার মধ্যে একটা ভীতিও এসেছে, এই যে একে একে আমরা সবাই চলে যাচ্ছি। কে যে কখন চলে যায় তার কোনো ঠিক নেই। কারণ, আমরা এরই মধ্যে ইত্যাদি পরিবারের অনেককে হারিয়েছি।’
২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালে মারা যান আবদুল কাদের। সে কারণে ২৫ বছরে এবারই প্রথম আবদুল কাদেরকে ছাড়া ‘ইত্যাদি’ প্রচারিত হবে। তাই থাকছে না মামা-ভাগ্নে বিভাগটি। এই বিভাগ নিয়ে এখনো কোনো কিছু ভাবতে পারেননি ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পক হানিফ সংকেত। তিনি বললেন, ‘তিনি তো মাত্র আমাদের ছেড়ে গেলেন। এই মুহূর্তে মামা চরিত্রে নতুন কাউকে নিতে চাই না। চিন্তাভাবনা করে দেখব, পরবর্তী সময়ে কী করা যায়। কারণ চরিত্রটিকে তিনি যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, সে ব্যাপারও আমাদের ভাবতে হবে। তাই চিন্তাভাবনা করতেও সময় লাগবে। তিনি জনপ্রিয় এবং গুণী একজন শিল্পী, হঠাৎ করে তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে তো নিতে পারি না। যেমন ‘নানা’ চরিত্রের অমল বোস মারা যাওয়ার পর নানি শবনমকে সঙ্গে সঙ্গেই নিতে পারিনি। অনেক পরে নিয়েছি। মামার জায়গায় অন্য কাউকে নেব কি না, নাকি চরিত্রটি একেবারে বদল করে ফেলব এসব নিয়েও চিন্তা করছি।’
এবারের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বটি সেখানে ধারণ করা হয়। ১৬ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগর আর কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শক নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি, জানিয়েছেন হানিফ সংকেত।
শিল্পী, কলাকুশলী ও আমন্ত্রিত দর্শকসহ সবার স্বাস্থ্যসুরক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে নিশ্চিত করা হয় দর্শকের মাস্ক ব্যবহার। অনুষ্ঠানে গান রয়েছে দুটি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নিয়ে রচিত একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন নৌ-সদস্য সৌরভ, মেহেদি, পিয়াল ও আনুভা। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম ও মামুন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার গৌরব নিয়ে তৈরি দেশের গান গেয়েছেন চট্টগ্রামেরই সন্তান সংগীতশিল্পী রবি চৌধুরী ও লেফটেন্যান্ট সাদিয়া। দুটি গানেরই কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেন মেহেদি।
এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন এস এম মহসীন, মাসুম আজিজ, সোলায়মান খোকা, আবদুল আজিজ, জিয়াউল হাসান কিসলু, শবনম পারভীন, কাজী আসাদ, শুভাশীষ ভৌমিক, আমিন আজাদ, জিল্লুর রহমান, বিলু বড়ুয়া, জাহিদ শিকদার, তারেক স্বপন, জামিল হোসেন, সাবরিনা নিসা প্রমুখ। বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে আগামী শুক্রবার রাত আটটা ৪০ মিনিটে প্রচারিত হবে ইত্যাদি। উপস্থাপনার পাশাপাশি এই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনায় আছেন হানিফ সংকেত।