২৩ অক্টোবর খুলবে জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনগুলো
ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনগুলোর বাতি জ্বলবে। ২৩ অক্টোবর নাটক মঞ্চায়নের জন্য খুলে দেওয়া হবে রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালা। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে দুই দিন নাট্যশালার মিলনায়তনগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে সরকারের স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সমন্বয় করে মিলনায়তন ব্যবহার এবং নাটক মঞ্চায়নের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে মিলনায়তনের বরাদ্দ দেওয়া হবে। দর্শকের বসার জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন ব্যবহার করা যাবে। কোন কোন আসন ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে সপ্তাহের সব কটি দিনেই মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে মিলনায়তনের বরাদ্দ দেওয়া হবে। দর্শকের বসার জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, একাডেমির মিলনায়তন পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি আগত দর্শকের শরীরের তাপমাত্রা মেপে হলে প্রবেশ করানো হবে। এ ছাড়া দর্শকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে নাট্যপ্রদর্শনী বন্ধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। তারপর থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক মঞ্চায়নের অনুমতি না মিললেও ঢাকার নাট্যদলগুলো বসে থাকেনি। ইতিমধ্যে নাটক মঞ্চায়ন শুরু হয়ে গেছে। শুধু তা–ই নয়, উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাঁটাবনে নিজস্ব মহড়াকক্ষে নাটকের দল প্রাচ্যনাট আয়োজন করেছে উঠান নাটকের মেলা ‘মহলা মগন’। গত ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এ উৎসব। চলে মাসব্যাপী। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় দর্শনীর বিনিময়ে ২০ জন দর্শক এখানে নাটক দেখার সুযোগ পান। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার সেখানে দুটি প্রদর্শনী আছে।
দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফিরেছে নাটকের দল প্রাঙ্গণেমোর। ‘আওরঙ্গজেব’ নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নতুন স্বাভাবিকে প্রদর্শনী শুরু করেছে দলটি। দীর্ঘদিন মঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ফেরার জন্য মুখিয়ে ছিলেন প্রাঙ্গণেমোরের সদস্যরা। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মা–বাবার সঙ্গে মঞ্চে উঠেছে অনন্ত হিরা ও নূনা আফরোজ দম্পতির সন্তান প্রকৃতি শিকদার।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে আলো জ্বলার মধ্য দিয়ে ফের নাট্যাঙ্গন মুখর হয়। সেদিন ‘লাল জমিন’ নাটকের মাধ্যমে মুখোমুখি হন অভিনয়শিল্পী ও দর্শক। নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ১১ সেপ্টেম্বর জাগরণী থিয়েটারের নাটক ‘রাজার চিঠি’ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর ব নাটুয়ার ‘নিশিকাব্য’ নাটকটি দেখা গেছে।
নাটক প্রদর্শনীর জন্য মিলনায়তন খুলে দেওয়ার পক্ষে নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘নাটক প্রদর্শনীর জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। রিহার্সাল রুম খুলে দিয়েছি। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটকের প্রদর্শনী করতে চাই।’
নাট্যকার মান্নান হীরা মনে করেন, নিরাপত্তা রাখতে পারলে প্রদর্শনীও নিয়মিত করে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটা করে যেতে হবে এই জন্য যে কবে করোনা যাবে, সেটা নিশ্চিত নয়। তাই এত বড় একটা শিল্প, যেটা মানুষের জন্য, সেটা থেমে থাকতে পারে না। বরং আমরা নতুন নাটক বানিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারি।’