ইতিহাস থেকে অতীতেও মানুষ কিছু শেখেনি
>অভিনেত্রী ও চিত্রকর বিপাশা হায়াত এখন নিউইয়র্কে। কীভাবে তিনি কাটাচ্ছেন অবরুদ্ধ সময়ে? করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মনে করেন, মানুষ ইতিহাস থেকে অতীতেও কিছু শেখেনি, ভবিষ্যতেও শিখবে না। করোনাবন্দী বিপাশা তাঁর ব্রুকলিনের বাসা থেকে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
নিজেকে মোটিভেট করার চেষ্টা করছি। যে পরিস্থিতিতে পড়েছি, সারাক্ষণ চিন্তা করলে নিজের মধ্যে একটা নেতিবাচক ভাইব তৈরি হবে, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হবে। তাই আমাকে প্রথমত প্রতিরোধের প্রস্তুতি ও মানসিকতা রাখতে হবে।
জীবনযাপনে তাহলে পরিবর্তন আনতে হয়েছে?
আমার জীবনযাপন কেমন হবে, সেটা আমি ঠিক করে নিয়েছি। এই সময়টায় ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবারের সরবরাহ ঠিক রেখেছি। কিছু এক্সারসাইজ করছি। শরীর ঠিক রাখা জরুরি। গান শুনি, মনকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করতে চেষ্টা করি। খবর দেখি। ফেসবুক ডিঅ্যাকটিভেট করে দিয়েছি। নানা পোস্ট ও ভিডিও আপলোড করছে সবাই। হয়তো ভালো মনে করেই করছিল, তারপরও আতঙ্কিত হচ্ছিলাম। তাই সরে এসেছি। মা–বাবাকে বলেছি মানসিকভাবে শক্ত থাকতে। এই ভাইরাস, যা অদৃশ্য—এ রকম একটা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে মানসিক শক্তিটা বেশি জরুরি।
আর কী করছেন?
ছবি আঁকছি, লিখছি। পোয়েট্রির ক্লাস করছি, প্রিয় কবিতাগুলোর অ্যানালাইসিস শুনি। হ্রিস্ট্রি অব সিভিলাইজেশন নিয়ে কিছু ডকুমেন্টারি দেখছি। মাঝেমধ্যে সিনেমা দেখি। নেটফ্লিক্সে ইতিহাস–সম্পর্কিত সিরিজ দেখছি। এভাবেই দ্রুত সময় চলে যাচ্ছে।
পরিবারের সবাই ঢাকায়, মনটাও তো এখানে পড়ে থাকে নিশ্চয়ই?
তা তো থাকেই। তবে তৌকীর অসাধারণভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করছে বাচ্চাদের নিয়ে। এই সময়টায় এখানে থাকার খবর জেনে অনেকেই উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ থেকে খোঁজখবর নিচ্ছেন তাঁরা। আমিও নিচ্ছি। করোনা সবার মধ্যে একটা ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছে।
করোনা নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?
করোনা আমাদের অনেক উপলব্ধি দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা সব ভুলে যাব। ইতিহাস থেকে অতীতেও মানুষ কিছু শেখেনি, ভবিষ্যতেও শিখবে বলে মনে হয় না। তবে করোনা একটা সুন্দর জীবনের জন্য নিজেকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করছে।
এই করোনা পরিস্থিতির পর আমাদের বোধের জায়গায় কোনো পরিবর্তন আসবে না?
না। মানুষ তার দুর্দশার দিনটা দ্রুত ভুলে যেতে পারে। আর তা না হলে মানুষ সামনে এগোতে পারত না।
কিন্তু করোনা তো মানবিক হওয়ার শিক্ষাও দিচ্ছে। সেটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না?
করোনা একটা সাময়িক শিক্ষা। মানুষকে বাঁচতে হবে, অনেক কিছু করতে হবে। আবার নতুন করে জায়গা করে নিতে হবে। আবারও প্রতিযোগিতা হবে। এই মুহূর্তে ভালোবাসা ও মানবিকতা যেমন দেখতে পাচ্ছি, তেমনি সম্পর্ক পাল্টে যাওয়াটাও দেখছি। কঠিন সময়ে দাঁড়ালে প্রতি মুহূর্তে মানুষ নতুন বোধে উপণীত হয়। এখন পুরো পৃথিবীর মানুষের উচিত স্মার্ট আচরণ করা।
করোনা থেকে মুক্তির আশা আছে?
অবশ্যই আবার সুদিন আসবে।