‘শুটিং করতে করতে আমরা অনেকে কেঁদেছি’
বুধবার সকাল থেকে অভিনেত্রী ভাবনার ফেসবুক পেজে বেশ কয়েকটি ছবি ঘুরছে। সাদা শাড়ি পরা। কোনো ছবিতে তাঁর মন খারাপ, আবার কোনো ছবিতে তিনি চাকা ঘুরিয়ে মাটির জিনিস তৈরি করছেন। ছবিগুলো প্রসঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওপাশ থেকে ফোন ধরেই ভাবনা বলেন, ‘আমি এখন মারা যাচ্ছি।’ বিস্তারিত জানতে চাইলে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘নাটকের শুটিংয়ে মারা যাচ্ছি। “পালবাড়ি” নামে একটি নাটকের শেষ দৃশ্যের শুটিং এটি। এখনই দৃশ্যটি নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, নাটকটিতে নিয়তি নামের একজন বিধবার চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।
এরপর বিষয়টি পরিষ্কার করতে ভাবনা ফোন ধরিয়ে দিলেন নাটকটির রচয়িতা বৃন্দাবন দাসের হাতে। তিনি ভাবনার ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয়ও করছেন এই নাটকে। তিনি বলেন, ‘পালবাড়ির বিধবা মেয়ে নিয়তি। গ্রাম্য সালিসে অপমান সহ্য করতে না পেরে বিষ পান করে। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নাটকটির গল্প শেষ হবে। ব্যাপারটা এমন।’
২৫ এপ্রিল থেকে কালীগঞ্জের নাওয়ান পালপাড়া পল্লিতে শুটিং শুরু হয়েছে নাটকটির। পরিচালনা করছেন দিপু হাজরা। বহু বছর ধরে পাল সম্প্রদায় মাটি দিয়ে নানান ধরনের জিনিস তৈরি করছে। তাদের জীবনের গল্প, জীবিকার গল্প, সামাজিক মর্যাদা ও টিকে থাকার গল্প উঠে এসেছে এই নাটকে।
নাটক, সিনেমায় নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আশনা হাবিব ভাবনা। এবার ‘পালবাড়ি’ নাটকে একজন বিধবার চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। কীভাবে সুযোগ হলো অভিনয়ের? জানতে চাইলে ভাবনা বলেন, ‘নাটকের রচয়িতা বৃন্দাবন দাদা একদিন ফোনে আমাকে বললেন, “ভাবনা তোমার জন্য একটি অন্য রকম চরিত্র লিখেছি। খুবই ভালো করবে তুমি।” বৃন্দাবন দাদা বলে কথা। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। ফোনে গল্পটি শুনলাম। এরপর চিত্রনাট্য পড়ে বুঝলাম, চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটি করতে হবে আমাকে। তখন থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।’
ভাবনা আরও বলেন, ‘সম্প্রতি জামিল স্যারের কাছে চার মাস অভিনয়ের ওপর কর্মশালা শেষ করেছি। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমি একটা বিষয়ে সিরিয়াস, সব সময়ই অভিনয় করার জন্য তৈরি থাকি। কিছু একটা করতে চাই।’
পালবাড়ির বিধবা মেয়ে নিয়তি। চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরিশ্রম করে মাটির হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে নানা ধরনের জিনিস বানাতে হয় তাকে। ভাবনা জানান, এটি তাঁর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। গুগল থেকে পাল সম্প্রদায়ের খুঁটিনাটি জানতে লাগলেন। তিনি বলেন, ‘শুটিংয়ে যাওয়ার পর পালপাড়ার মেয়েদের সঙ্গে মিশেছি। তাঁদের পোশাক, চালচলন, আচরণগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছি, শিখেছি।’
ভাবনা জানান, ওখানে মনোরঞ্জন নামের একজনের বাড়িতে তাঁর অংশের শুটিং হয়েছে। দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক করে ফুটিয়ে তুলতে তিনিই বেশি সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়তি চাকা ঘুরিয়ে মাটি দিয়ে হাঁড়িপাতিলসহ নানা ধরনের জিনিস তৈরি করে। চাকা ঘোরানো থেকে শুরু করে ঠিকভাবে মাটি চাকাতে ধরা, চাকা ঘোরানো, জিনিস বানানো—সবকিছু মনোরঞ্জন দাদা হাতে ধরে শিখিয়েছেন। এরপর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। শুটিং করতে গিয়ে বুঝলাম, কাজটি অনেক কষ্টের। পালদের জীবন সংগ্রামের।’
ভাবনা আরও বলেন, ‘তিন দিন ধরে শুটিংয়ে বিধবার কাপড় পরে জীবন যাপন করেছি। চাকা ঘুরিয়ে মাটির জিনিস তৈরির অনেকগুলো শট দিতে হয়েছে। এই কয়েক দিনে তাঁদের কাজ কিছুটা আয়ত্তও করেছি। সত্যি সত্যি একটি মাটির বাটি বানিয়েছি আমি। হা হা হা..।’
এই অভিনেত্রীর কথা, বৃন্দাবন দাদা ঈদের সময় বেশির ভাগই হাসির নাটক লেখেন। কিন্তু এই নাটক একেবারেই ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘শুটিং করতে করতে আমরা অনেকে কেঁদেছি।’
‘পালপাড়া’ নাটকে আরও অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, দিব্য, পারভেজ প্রমুখ। জানা গেছে, ঈদে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে নাটকটি।