যে কারণে এ টি এম শামসুজ্জামানের মরদেহ এফডিসিতে নেওয়া হয়নি
গতকাল বিকেলেই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন বরেণ্য অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান। খবরটি তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীর জন্য বেশ সুখের ছিল। কিন্তু এই সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের মানুষ পেল বড় দুঃসংবাদ, শনিবার সকালেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি।
এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর খবর মুহূর্তেই সংবাদমাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকে তাঁর সহকর্মীরা নানা স্মৃতিচারণা করেন। অনেকই তাঁর সঙ্গে ছবি দিয়ে নানা কথা লেখেন। তবে সবারই একটাই প্রশ্ন ছিল, শেষবারের মতো কখন তাঁকে চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসিতে আনা হবে। কেউ ঠিক করে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিলেন না। পরে যোগাযোগ করা হলে বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীর মেজ মেয়ে কোয়েল আহমেদ বলেন, বাবাই চেয়েছিলেন, তাঁর মরদেহ যেন এফডিসি না নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। বিকেলে পুরান ঢাকার জুরাইনে তাঁকে দাফন করা হয়।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তিন শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। অভিনয়ের কারণে জীবনের এক লম্বা সময় কেটেছে তাঁর এফডিসি প্রাঙ্গণে। মাঝেমধ্যে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানের ডাক পড়লেও ছুটে আসতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর এফডিসিতে আসতে খুব একটা আগ্রহ পেতেন না। এফডিসির পরিবেশ–পরিস্থিতিকে দায়ী করেছিলেন বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী।
তাঁর মেয়ে কোয়েল জানালেন, ‘এফডিসিতে একবার রাজ্জাক আংকেলের (নায়করাজ রাজ্জাক) সন্তানদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। এটা শুনে বাবা খুবই মর্মাহত হন। এর বাইরে এফডিসিতে নানান কর্মকাণ্ডে কষ্ট পেয়েছিলেন। প্রকৃত শিল্পীদের মূল্যায়ন হতো না। এফডিসির পরিবেশটাও পছন্দ হচ্ছিল না। এফডিসিতে ঘটে যাওয়া আরও অনেক ঘটনায় বাবা কষ্ট পেয়েছিলেন। তাই তিনি আমাদের বলেছিলেন, তাঁর মরদেহ যেন এফডিসিতে নেওয়া না হয়। আমরাও বাবার চাওয়াটাই পূরণ করতে চেয়েছি।’
পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়। এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্রজীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য।
ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুকাভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে।