মামার জন্য ভীষণ মন খারাপ কাদেরের
অভিনয়জীবনে আফজাল শরীফ যদি কিছু শিখে থাকেন, সেটা আলী যাকেরের অবদান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই আলী যাকেরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। গতকাল দিনের শুরুতেই তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সেসব স্মৃতি স্মরণ করতে করতে ভেঙে পড়েন আফজাল শরীফ।
‘ছোটলু ভাইয়ের সঙ্গে আমি বিটিভির বহুব্রীহি নাটকে প্রথম অভিনয় করি। এটিই ছিল অভিনয়জীবনে আমার অন্যতম বড় কাজ। সেই থেকে আমাদের সম্পর্ক। যতটুকু শিখছি, প্রায় সবই ছোটলু ভাইয়ের কাছ থেকে।
কদিন হলো শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না আফজাল শরীফের। এ রকম অবস্থায় একজন শ্রদ্ধাভাজন সহকর্মীর প্রয়াণে মনটাও খারাপ হয়ে যায় তাঁর। দর্শকপ্রিয় ‘বহুব্রীহি’ ধারাবাহিকে আলী যাকেরকে মামা বলে ডাকতেন তিনি। সেই মামার মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কাঁপা কাঁপা স্বরে তিনি বলেন, ‘ছোটলু ভাইয়ের সঙ্গে আমি বিটিভির বহুব্রীহি নাটকে প্রথম অভিনয় করি। এটিই ছিল অভিনয়জীবনে আমার অন্যতম বড় কাজ। সেই থেকে আমাদের সম্পর্ক। যতটুকু শিখছি, প্রায় সবই ছোটলু ভাইয়ের কাছ থেকে। এমন একজন মানুষের মারা যাওয়ার খবর জানার পর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছি।’
বিটিভিতে ‘বহুব্রীহি’ প্রচারের পর থেকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মামা ও কাদের চরিত্র দুটি। আলী যাকের ও আফজাল শরীফ দুজনকেই পরিচিতির পাশাপাশি খ্যাতি এনে দেয় চরিত্র দুটি।
আফজাল শরীফ মনে করেন, সেই খ্যাতির পেছনে বড় অবদান আলী যাকেরের। তিনি জানান, নাটকটির নির্মাতা নওয়াজীশ আলী খান সবশেষে আলী যাকের এবং তাঁর অংশের দৃশ্য ধারণ করতেন। কারণ, মামা এবং কাদেরের দৃশ্য ধারণে হুমায়ূন আহমেদ সপরিবার উপস্থিত থাকতেন। এই চরিত্রটি ছিল হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর পরিবারের ভীষণ পছন্দের। আফজাল শরীফ বলেন, ‘হুমায়ূন ভাই সপরিবারে সরাসরি আমাদের শুটিং দেখতে চলে আসতেন। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে দৃশ্যগুলো করাতেন। আমার যেন কোনো ভুল না হয়, এ জন্য আগে থেকে ছোটলু ভাই সব শিখিয়ে দিতেন। মাঝেমধ্যে হুমায়ূন ভাই ডায়ালগ বদলে দিতেন। সেটা আমাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে বলতেন ছোটলু ভাই। কোন সংলাপে কেমন অভিব্যক্তি হবে, সেটা তিনি বুঝিয়ে দিতেন।’
নাটকে বিভিন্ন সময় কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো কাদেরকে। চুরি করার অপরাধে গলায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘোরানো হতো।
চরিত্রের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে গালি দিলেও পরে কাছে এসে আলী যাকের বলতেন, ‘অভিনয়কে সব সময় অভিনয় হিসেবেই নিবি। তারপরও আমার আচরণে তোর খারাপ লাগলে, মনে কষ্ট নিস না।’
আলী যাকেরের সঙ্গে বেড়াতে যেতেন আফজাল শরীফ। দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে ভক্তরা ঘিরে ধরত। বায়না ধরত, অভিনয় করে দেখাতে হবে। ভক্তদের এসব আবদারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন আলী যাকের। এসব কারণে একপর্যায়ে আফজাল শরীফকে নিয়ে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেন আলী যাকের। ‘বহুব্রীহি’ নাটকটির সম্প্রচার চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁদের একটি সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে আলী যাকেরের সঙ্গে গিয়েছিলেন আফজাল শরীফ। সেদিন পর্দার মামা-ভাগনেকে পেয়ে ঘিরে ধরেছিল হাজার হাজার মানুষ। সেদিন আলী যাকের তাঁকে বলেছিলেন, ‘ভক্তদের ওপর কখনো বিরক্ত হবি না।’ কিংবদন্তিসম এই অভিনেতার কাছ থেকে পাওয়া এ শিক্ষা এখনো মেনে চলেন আফজাল।