‘মনে হয় শুটিং শেষ হলেই ফিরে আসবে’

আবদুল কাদের ও খাইরুন কাদেরের স্মৃতিময় একটি মুহূর্তের ছবি
সংগৃহীত

ষাটোর্ধ্ব খাইরুন কাদের আজও ভাবেন, শুটিং শেষে স্বামী বাড়ি ফিরবে। এভাবে গত এক বছর ঘুম ভাঙতেই এমনটি মনে হয়েছে অনেকবার। স্বামীর ব্যবহৃত জিনিস এখনো আগের মতো আগলে রেখেছেন তিনি। সেগুলোর দিকে তাকিয়েও এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যায় আবদুল কাদেরের স্ত্রীর। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গত বছর আজকের দিনে প্রয়াত হয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা।

‘এখনো বিশ্বাস হয় না, মানুষটা নেই’, মুঠোফোনের ওপাশ থেকে ভারী কণ্ঠে বলেন খাইরুন কাদের। কান্নার স্বরে তাঁর কথা জড়িয়ে আসতে থাকে। তিনি বলেন, ‘এ রকম তো আশা করিনি। আশা ছিল সে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। তা আর হলো না। হুট করেই সব শেষ হয়ে গেল। গত এক বছরের একটি দিনও আমাদের ভালো যায়নি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। তার শুটিংয়ের, অফিসের সব জিনিস আমার পাশে থাকে। সেগুলোর দিকে তাকালে খারাপ লাগে। শুধুই মনে হয়, মানুষটা শুটিংয়ে গেছে। শুটিং শেষ হলেই ফিরে আসবে।’

গত বছর ২৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন আবদুল কাদের
ছবি: সংগৃহীত

সর্বশেষ ‘নেত্রী: দ্য লিডার’ সিনেমায় যুক্ত হয়েছিলেন অভিনেতা আবদুল কাদের। সেই সিনেমার জন্য তাঁর সব কস্টিউম কেনা হয়েছিল। সেগুলো এখনো যত্ন করে রেখেছেন তাঁর স্ত্রী। খাইরুন বলেন, ‘তাঁর জামা–কাপড়, জুতা ব্যাগে ভরে রেখেছি। সেগুলো প্রতিমুহূর্তে আমাদের কষ্ট দেয়। আমুদে একটা মানুষ ছিল। অফিসে ব্যস্ত থাকত। অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারত না। এ জন্য শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে সময় দিত। খুব সাংসারিক মানুষ ছিল সে। আমাদের জন্য সব গুছিয়ে রেখে গেছে। কোথাও কোনো কিছুর কমতি রাখেনি। জীবনের শেষ সময়ে নাতি-নাতনিরা তার সঙ্গ পেয়েছিল। কত কত স্বপ্ন ছিল পরিবার, সংসার নিয়ে।’ এটুকু বলে আর কথা বলতে পারলেন না খাইরুন কাদের।

সিমরীন লুবাবার স্মৃতি দাদা আবদুল কাদেরের সঙ্গে
ছবি: সংগৃহীত

আবদুল কাদেরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের একটি এতিমখানায় দোয়ার আয়োজন করা হয়। আজ রোববার বেলা ১১টায় বনানী কবরস্থানে তাঁর সমাধির সামনেও ছিল দোয়ার আয়োজন। কাদেরের নাতনি সিমরীন লুবাবা নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করছে। সিমরীন বলে, ‘দাদার হাত ধরেই তো আমি অভিনয়ে এসেছিলাম। দাদার সঙ্গে আমার “নেত্রী: দ্য লিডার” সিনেমায় অভিনয় করার কথা ছিল। এখন শুটিংয়ে গেলেই দাদার কথা ভেবে কষ্ট লাগে। যেখানেই যাই, সবাই আদর করে বলে, “তুমি কাদেরের নাতনি”, তখন দাদার কথা ভেবে কষ্ট পাই। দাদাই আমার জন্য সব করে দিয়েছেন।’

‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে আবদুল কাদের, আসাদুজ্জামান নূর ও লুৎফর রহমান জর্জ
ছবি: সংগৃহীত

অভিনেতা আবদুল কাদের ১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেন কর্মজীবন। সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন তিনি। পরে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার নির্বাহী হিসেবে কিছুদিন চাকরি করার পর ১৯৭৯ সাল থেকে বাটা কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখানে ছিলেন ৩৫ বছর। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বদি চরিত্রটি তাঁকে ব্যাপকভাবে পরিচিতি এনে দেয়।