ভ্যাকসিন তো লেবেনচুস না, বাসায় রেখে একটা করে খাবে: সুবর্ণা মুস্তাফা
দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে দেশের কিছু মানুষ নেতিবাচক কথাও বলছে। তাদের উদ্দেশ্যে অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ সুবর্ণা মুস্তাফা বললেন, কিছু মানুষ আছে সব ব্যাপারে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করবেই। তাদের নিয়ে বলার কিছু নেই। সরকার প্রচুর টাকা দিয়ে এ দেশের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন এনেছে। এগুলো তো লেবেনচুস না, বাসায় রেখে দেবে। পরে একটা একটা খাবে। ভ্যাকসিনের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদও থাকে।’
আজ সোমবার দুপুর ১২টায় সংসদ ভবন চত্বরে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। সংসদ কর্মচারী ও মহিলা সাংসদদের জন্য এই ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানালেন সুবর্ণা মুস্তাফা। সংসদ কর্মচারী ও নারী সাংসদদের জন্য যেহেতু সংসদ ভবন চত্বরে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাই সেখানে করোনার টিকা নিয়েছেন সুবর্ণা।
বাংলাদেশে করোনার টিকা দেওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে ভয় কাজ করছে বলে শোনা যায়। বিষয়টি মনে করিয়ে দিতেই সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, এটা খুবই হাস্যকর। আমি মনে করি, এটার কোনো অর্থ হয় না। আমরা কিন্তু জন্মের পর টিকা নিয়েছিলাম। এরপর যদিও আর কোনো টিকা নেওয়া হয়নি। কিন্তু সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর নানা ধরনের ফ্লু, নিউমোনিয়ার কারণে কোনো না কোনো ভ্যাকসিন মানুষ নিয়ে থাকে। ভ্যাকসিন তো রক্ষাকবচ। সারা পৃথিবীর সবাই কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন নিচ্ছে। ভ্যাকসিন নিয়ে যারা নেতিবাচক কথা ছড়াচ্ছে, তারা জ্ঞানপাপী। তারাই এমন ভয় ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বলতে চাই, এটা আপনাদের পছন্দ। আমরা শুধু বলতেই পারি, তুমি করোনার ভ্যাকসিন নাও। এরপরও যদি না নেয়, নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, তাহলে তো কথা নেই।’
কিন্তু আপনি তো শুধু জনপ্রতিনিধি নন, সবার প্রিয় একজন অভিনয়শিল্পী। আপনাকে এ দেশের অনেকে অনুসরণ করে এবং আপনার কথায় অনেকে উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত হয়। সেই অবস্থান থেকে কী বলবেন? এমন প্রশ্নে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার প্রচুর টাকা দিয়ে করোনার ভ্যাকসিন এত দ্রুত সময়ে এনেছে, শুধু এ দেশের মানুষের জন্যই। করোনার ভ্যাকসিন তো লেবেনচুস না, বাসায় রেখে দেবে। পরে একটা একটা খাবে। সরকার এত টাকা খরচ করে এনেছে, জমা রেখে দেওয়ার জন্য না। ভ্যাকসিনেরও তো একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এটা তো খাবার জিনিস না। রান্নারও জিনিস না। এটা একদমই মানুষের জন্যই আনা হয়েছে। স্তরে স্তরে এ দেশের সবাই ভ্যাকসিন পাবে। প্রথমে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের। প্রধানমন্ত্রী আজ তা ৪০ বছর বয়সী নাগরিকদের জন্যও করে দিয়েছেন।’
দেশের বাইরে যারাই করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছে, একদম নিরিবিলি পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। অনেক লোকজন, এমনকি উৎসবমুখর পরিবেশও বলছে। সাংসদ ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য শুনতে চাই? জবাবে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘আমার কিন্তু এটা উৎসবের মতো লাগে। করোনার ভ্যাকসিন নিতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে, উদ্যাপন করবে—একটা ঘাতক ভাইরাস, যেটার এখনো কোনো ওষুধ বের হয়নি। বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম, দিন–রাত এক করে মানুষের মঙ্গলের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে এল—এটা তো অবশ্যই উদ্যাপন করার বিষয়। বাংলাদেশের কিছু মানুষ আছে সব ব্যাপারে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করবে। হাসিমুখে ভ্যাকসিন নিলে এই মানুষেরা মন্তব্য করবে। কাঁদো কাঁদো চেহারায় নিলেও মন্তব্য করবে। হতে পারে, একজন মানুষ ইনজেকশন ভয় পায়। আমার একজন বন্ধু আছে, সিরিঞ্জ দেখলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে ভ্যাকসিন দিতে নেওয়া হলে ৩-৪ জন সঙ্গে যেতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, আমি হেসে নিচ্ছি না বসে নিচ্ছি, নাকি কেঁদে নিচ্ছি বা শুয়ে নিচ্ছি ভ্যাকসিন, দ্যট ইজ নট দ্য পয়েন্ট, দ্য পয়েন্ট ইজ ভ্যাকসিন অ্যাবয়লেবল। সবার ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।’
করোনার ভ্যাকসিন এত দ্রুত মানুষের জন্য সহজপ্রাপ্য করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এ দেশের মানুষের প্রতি আপনার মায়া, যত্ন, মমতা, ভালোবাসা ও দায়িত্ব কতটা, তা এই উদ্যোগের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণিত হলো। অনেককে বলতে শুনেছি, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসতে দেড় দুই বছর সময় লাগবে। এখন তো সবাই প্রমাণ পেল। আমি বলতে চাই, না জেনে আগাম কোনো কিছুই বলা ভালো না। বেশি ভালোও তো ভালো না।’