পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়ায় পরিচালকেরা ভালো মানের নাটক বানাতে পারছেন না। একই ধরনের গল্পে বিরক্ত হয়ে দর্শক নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নাটকপাড়ায় এমন কথা শোনা যায়। নাটকের মান নিয়ে প্রযোজক ও টেলিভিশনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা পাল্টা অভিযোগে বলছেন, ভালো গল্প না পেলে নাটকে কেন শুধু শুধু বেশি বাজেট দেবেন। কেউ বলছেন, গল্প নয়, বাজেটে মানসিকতাও একটা বড় সমস্যা।
টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাবমতে, বাংলাদেশ নিবন্ধিত নাটক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬০। এর মধ্যে ১৮৯টি সক্রিয় হলেও সারা বছর কাজ করে ৪০টি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এমনটাই নিশ্চিত করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির। ১৭ বছর ধরে তিনি নাটক প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ১৯৫২-এর কর্ণধার সাজু বলেন, ‘নাটকের ক্ষেত্রে সাধারণত কোন কোন খাতে টাকা খরচ করতে হবে, তা পরিষ্কার থাকতে হবে। বললে তো হবে না, অত লাখ টাকা লাগবে! আমরা ছয়-সাত লাখ টাকায় এক ঘণ্টার নাটক বানিয়েছি, আবার আড়াই-তিন লাখ টাকায়ও বানিয়েছি। এখন তো বেশির ভাগ নাটকের গল্প নায়ক-নায়িকা ঘিরে। এখন গল্পই যদি থাকে একজন নায়ক-নায়িকাকে ঘিরে, তাহলে খরচের খাত কোথায়?’
শুধু গল্পের কারণে বাজেট থাকে না, এটা মানতে নারাজ ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি ও পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, একজন পরিচালক যখন প্রযোজকের সঙ্গে গল্প নিয়ে আলোচনা করেন, তখন খরচ কমানোর জন্য গল্পই বদলে দেন। নাটকের পাত্র-পাত্রী কমাতে অনুরোধও করেন! চার দিনের শুটিং তিন দিনে করার পরামর্শও দেন।’
মাসে চ্যানেলগুলোর চাহিদা মেটাতে এক ঘণ্টা ও ধারাবাহিক মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০টি নাটকের দরকার। এসব নাটকে বৈচিত্র্যময় গল্পের অভাবটা অনেক বেশি। প্রযোজকদের বিরুদ্ধে পরিচালকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাজু মুনতাসির বলেন, কোনো প্রযোজক কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যদি পরিচালককে গল্পে কম্প্রোমাইজ, শিল্পী নির্বাচনে খবরদারি করেন—পরিচালক কেন তাঁর নাটকের মান বজায় রাখতে আপস করছেন? পরিচালক আপস না করলে প্রযোজক বাধ্য হবেন।
সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘একটা বিষয় ভালো লাগছে যে অবস্থাটা এমন বিরাজ করছে, এটা অন্তত স্বীকার করছে প্রযোজকদের সংগঠন। একজন পরিচালক শুধু বাজেট কমের কারণে ভালো গল্পে নাটক বানানোর সাহস করেন না। এক বছরে একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, কয়েকজন শিল্পী ছাড়া নাটক বানানো যাবে না!’
অনেক পরিচালক ও শিল্পীর মতে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি নাটক না নিয়ে, এজেন্সি থেকে নেয়। এতে প্রযোজক ও পরিচালকেরা ভালো বাজেট পান না। বিষয়টি নিয়ে চ্যানেল আইয়ের বিপণন বিভাগের প্রধান ইবনে হাসান খান বলেন, ‘দুর্বল টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এজেন্সির কাছ থেকে নাটক ও অনুষ্ঠান নেয়। এমনও শুনি, নাটক বা অনুষ্ঠান বানানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ ওসব চ্যানেলের নেই। এজেন্সি তার মতো নাটক কিংবা অনুষ্ঠান বানিয়ে দিচ্ছে। তারা তো ব্যবসায়ী, ব্যবসা করবেই। চ্যানেলকে তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ভাবতে হবে। নিজে তদারকি করে অনুষ্ঠান বানাতে হবে। চ্যানেল নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে এজেন্সির কাছে যাচ্ছে, দোষ দিয়ে কী লাভ!’
ইবনে হাসানের মতে, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা গল্পের। গল্প না পেলে পরিচালকও ভালো নাটক বানাতে পারবে না। আমার অভিজ্ঞতায় এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাজেট কম হওয়ার অন্যতম কারণ গল্প।’
বৃন্দাবন দাস বলেন, বাজেটের প্রধান অন্তরায় মানসিকতা। এখন তো ভালো গল্পের নাটকই কেউ চায় না। বেশির ভাগ চ্যানেল এখন হাস্যকর এবং নকল গল্পের নাটক বানাচ্ছে। যে যা নিয়ে যাচ্ছে এক শ, দুই শ, পাঁচ শ এবং হাজার পর্ব পর্যন্ত চালাচ্ছে। আয় হচ্ছে, তাই কারও মাথাব্যথাও নেই।