ফারুকীকে নিয়ে রসিকতা তিশারও!
বয়স তেমন বাড়েনি পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর। অথচ বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠতে হচ্ছে তাঁকে। বয়োজ্যেষ্ঠদের কেউ শিক্ষক, আবার কেউ শৈশবের আদর্শ। তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে পুরস্কার নেওয়াটা সম্মানজনক। তবে বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করতে ছাড়ছেন না ফারুকীর বন্ধুরা। এমনকি রসিকতার লোভ সামলাতে পারেননি তাঁর স্ত্রী জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশাও। আজ শনিবার দুপুরে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার নিতে গিয়ে সে কথাই সবাইকে বললেন এই পরিচালক।
নাটক, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপনচিত্র সব মাধ্যমেই কাজ করে চলেছেন ফারুকী। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র দেশের পাশাপাশি বিদেশের সম্মানজনক সব উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়ে ফিরছে। অর্জন করছে সম্মাননা। পরিচালক হিসেবে তিনিও সম্মানিত হয়েছেন। দেশের অনেক বড় পুরস্কারও ঘরে তুলেছেন এই পরিচালক। এত দিন এসবে কিছু যায়-আসেনি। কিন্তু সম্প্রতি পাওয়া দুটি পুরস্কার নিয়ে ফারুকীর বন্ধুরা ফোড়ন কাটছেন। কারণ, যাঁদের সঙ্গে তিনি এই পুরস্কার পাচ্ছেন, তাঁরা ফারুকীর চেয়ে বয়সে অনেক জ্যেষ্ঠ। সত্তরের কোটা পার করে ফেলেছেন তাঁরা।
ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারের ১৫তম আসরে ফারুকী বলেন, ‘কদিন আগে দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে একটি পুরস্কার পাই। যাঁদের সঙ্গে পুরস্কারটি পেয়েছি, তাঁরা আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। কেউ আবার আমার শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে আছেন শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁদের মাঝখানে আমার ছবি! আমি তো অল্প বয়সী মানুষ। পুরস্কার বাসায় আনার পর তিশাও আমাকে নিয়ে রসিকতা শুরু করে। তবে বড় মানুষদের সঙ্গে পুরস্কার পাওয়ায় আমি অনেক গৌরব বোধ করছি।’
ফারুকী তাঁর বন্ধু অমিতাভ রেজা, গাউসুল আলম শাওন, ইরেশ যাকেরদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘আমি সেদিন খুব শঙ্কায় ছিলাম, এ নিয়ে আবার আমার বন্ধুরা ফেসবুকে ঝড় তুলবে না তো! আমাকে বয়স্ক বানিয়ে কথা বলবে না তো? তাঁরা সেটাই করেছে। আজ যখন দেখবে আমি আরেকটি পুরস্কার পেয়েছি আমার অগ্রজ একজনের সঙ্গে, তখনো আমাকে নিয়ে মজা করতে ছাড়বে না। দেখা যাবে, আমাকে বলছে—আমরা এত বছর কাজ করে আসছি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দেখে, যাঁর বয়স ৭৬। এই পুরস্কারে ছবি দেখার পর আবার তাঁরা বলবে, এই যে দেখো, ফারুকীর বয়স সত্তরের ওপরে।’ ফারুকীর এ কথায় অতিথির আসনে বসা স্ত্রী তিশাও হেসে ফেলেন।
পরিচালক হিসেবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ছাড়াও সাংবাদিকতায় এ বছর ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন শফিউজ্জামান খান লোদী, যিনি ফারুকীর চেয়ে বয়সে অনেক বড়। হোটেল ওয়েস্টিনে ঢোকার সময় মজার মেজাজে ছিলেন ফারুকী। তবে অনুষ্ঠান শুরুর পর চুপচাপ হয়ে যান তিনি। ফজলুল হকের জীবনী নিয়ে নির্মিত ডকুফিল্ম ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার ম্যান’ দেখে চিন্তায় পড়ে যান। এটি তাঁকে হতাশও করেছে। ফারুকী বলেন, ‘মজার মুডে অনুষ্ঠানে ঢুকি। কিন্তু তথ্যচিত্র আমাকে হতাশ করেছে, বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমি এখন যে সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, হয়তো শক্তি আছে, যৌবন আছে—কাজ করতে পারছি। আমি যা করছি এটাই হয়তো চূড়ান্ত। কিন্তু তথ্যচিত্র দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আসলে তা না। আমিও একদিন ওই তথ্যচিত্রের মতো হয়ে যাব।’
৫০-এর দশকে যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়নি, তখন মফস্বল শহর বগুড়া থেকে ‘সিনেমা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন ফজলুল হক। পত্রিকাটি ছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্রবিষয়ক মাসিক সাময়িকী। সেই সূত্রে এ দেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ফজলুল হক। ২৬ অক্টোবর ছিল গুণী এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছর এই দিনটিতে তাঁকে স্মরণ করে দেওয়া হয় ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’। এবারের আসরে নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠানটি হয়নি, তাই আজ ১২ জানুয়ারি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। ফজলুল হকের সহধর্মিণী প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের উদ্যোগে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
২০০৪ সালে প্রবর্তিত এ পুরস্কার এবার পেলেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই গর্বিত এই ভেবে, যে পুরস্কার আমি হাতে নিয়েছি, তা একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার নামে প্রবর্তিত।’