পদত্যাগ করলেন টেলিপ্যাবের ৩ নির্বাচন কমিশনার, ভিন্ন কথা বলছেন নেতারা
টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (টেলিপ্যাব) নির্বাচনের কিছু প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নির্বাচন কমিশন ও আপিল বিভাগের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই মন–কষাকষি চলছিল। একসময় নির্বাচন আপিল বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনারদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেন। এই ঘটনায় অপমানিত বোধ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নরেশ ভূঁইয়া, কমিশনার মাসুম আজিজ ও বৃন্দাবন দাস একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ১১ ডিসেম্বর টেলিপ্যাবের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নরেশ ভূইয়া বলেন, ‘আপিল বোর্ড নিয়মবহির্ভূতভাবে আমাদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেছে। এটা আমাদের জন্য অপমানজনক। নির্বাচন কমিশন নিয়ম মেনে বেশ কিছু মনোনয়নপত্র বাতিল করে। প্রার্থীরা আপিল বোর্ডে আবেদন করে। তারা তিন দিনের মধ্যে শুনানি করে রায় দেবে। প্রার্থীদের অভিযোগ সত্য হলে তাঁরা নির্বাচন করতে পারবেন, না হলে বাদ। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে আপিল বোর্ড এটা না করে, আমাদের সঙ্গে কথা না বলে নির্বাচনী বোর্ডে টানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচন স্থগিত। আমাদের বাদ দিয়ে টেলিভিশন পরিচালক, অভিনয়শিল্পী সংঘের মতো সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করবে তারা। এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য চরম অপমানের।’
ছোট পর্দার কোনো সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে আগেও নানা রকম আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে অনিয়মের প্রশ্নে পদত্যাগ করতে দেখা যায়নি। ‘আমরা সবাই বন্ধু, সহকর্মী। শৃঙ্খলার সঙ্গে একটি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। একই নিয়মে এর আগে আমি অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচন করেছি। সেখানে সমস্যা হয়নি। এখানে আমরা কাউকে জেতাতেও আসিনি, হারাতেও আসিনি। নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, তারা আমাদের একটি পক্ষ বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। নিয়মের বাইরে কিছু করব না বলেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি,’ কথাগুলো বলেন মাসুম আজিজ।
তিনি আরও বলেন, ‘১৭টা মনোনয়নপত্র তফসিল অনুযায়ী শর্ত পূরণ না করায় বাদ পড়ে। এর মধ্যে সাজুদের (টেলিপ্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির) প্যানেলের ১৫ জন বাদ পড়ে। সেই সময় আমি ছিলাম না, বৃন্দাবন দাস ছিল। শুনেছি তাকে কড়া কথা শুনিয়েছেন। তাঁদের কথা, তাঁরা বাদ মানেন না, নির্বাচন করবেন। আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম, নিয়ম মেনে যা হয়, তা–ই করব। তাঁরা আপিল বোর্ডের প্রধান খায়রুল আলম সবুজ ভাইয়ের কাছে আপিল করেন। আপিল বিভাগের প্রধান হয়ে তিনি সরাসরি নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দিলেন। তিনি আমাদের কাছে কিছুই জানতে চাইলেন না কেন বাদ দিলাম।’
মনোনয়ন বাতিলের পর সেদিন প্রার্থীদের সঙ্গে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে বৃন্দাবন দাস বলেন, ‘এই ঘটনা মিডিয়াতে বলতেও লজ্জা লাগে। নিজেদের এই ঘটনা নিজেদের মধ্যেই থাক। হয়তো আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে আপিল বিভাগের প্রধান অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ বিষয়ে টেলিপ্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, ‘এখানে প্রভাব বা অনিয়মের কিছু নেই। খায়রুল আলম সবুজ ভাই, নরেশ ভূঁইয়াসহ অন্য সবাই সিনিয়র। তাঁদের ওপর প্রভাব খাটানো যায়? ভুল–বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। আমি ইলেকশনে জিতব। সেই সমর্থন আছে। যে জিতবে না, সে–ই প্রভাব খাটাবে। আমরা কাল মঙ্গলবার মিটিং করব। প্রয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনার গঠন করে আগামী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেব। নিয়ম মেনেই সব হবে।’
এ বিষয়ে টেলিপ্যাবের সাবেক সভাপতি ইরেশ যাকের বলেন, ‘এটা আমাদের সংগঠনের জন্য বিব্রতকর। একটা নির্বাচন হবে, সেটা ঠিকঠাক মতো হওয়া উচিত। এখানে যদি কোনো ধরনের ভুল–বোঝাবুঝি হয়ে পদত্যাগের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে এটা আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটায়। আমরা আশা করছি এটা সাংগঠনিকভাবে নিষ্পত্তি করতে পারব।’