ঘৃণা। ক্ষোভ। প্রতিবাদ। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার মানুষ। তাঁরা চান ধর্ষণ বন্ধ হোক, ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। সারা দেশের অন্য আর সবার মতো বিনোদন অঙ্গনের তারকারাও ধর্ষণের ঘৃণিত ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ নিজ অবস্থান থেকে ধর্ষণ বন্ধে নানা প্রস্তাবনাও রেখেছেন।
ধর্ষণের প্রতিবাদ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকা ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। উপস্থাপক ও নাট্যনির্মাতা হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘ধর্ষণ নামক এক ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। নারীর ওপর যারা এমন পাশবিক আচরণ করছে, তারা মানুষ নামের অমানুষ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে তাদের ধর্ষণ সন্ত্রাস।’
ধর্ষণের প্রতিবাদ ও এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা প্রসঙ্গে হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘আসুন সবাই মিলে ধর্ষকদের প্রতিরোধ করি। তুলে দিই আইনের হাতে। আর তাদের ব্যাপারে দাবি একটাই, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার জটিল জট ভেঙে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চয়তা।’
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ঘৃণাকে আরও তীব্র হতে দেখা গেছে। সেই পোস্ট তিনি শুরুই করেছেন ‘ছিঃ’ দিয়ে। জয়া লিখেছেন, ‘ফোনে ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্মম নিষ্ঠুর এক ভিডিও আমারই দেশে তৈরি, এ–ও বিশ্বাস করতে হবে? আমারই কোনো বোনকে লাঞ্ছনায় নরকের অতলে পৌঁছে দিচ্ছে আমারই পাশের বাড়ির এক ছেলে, এ–ও আমাকে দেখতে হবে, আমারই ভাইয়ের রক্তে ভেজা লাল-সবুজের দেশে? একের পর এক এই সর্বনাশা ঢেউ কোথায় ভাসিয়ে নিচ্ছে আমাদের? তাহলে কি মেনে নিতে হবে, ধর্ষণের অতিমারিই আমাদের গন্তব্য?’
শাস্তি নয়, কেবল তীব্র ঘৃণাই জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিবাদী ওই পোস্টের নিচে যারা মন্তব্য করেছে, তাদের কারও কারও মধ্যে সম্ভাব্য ধর্ষক লুকিয়ে আছে, যারা মাটিতে পুতে রাখা মাইনের মতো। সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।’
ঢালিউড তারকা শাকিব খান লিখেছেন, নারীর পরিচয় তিনি একজন মানুষ। সমাজ এখনো অনেক ক্ষেত্রে নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চায় না। তারপরই নারী কারও মা, কারও বোন। এই মা বা বোনকে মানুষ হিসেবেই শ্রদ্ধা করা উচিত, গণ্য করা উচিত, মান্য করা উচিত—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শাকিব খান লিখেছেন, ‘একজন নারী একজন মা, পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গে মায়ের তুলনা হয় না। যারা একজন মা আর বোনকে অন্য চোখে দেখে, ধর্ষণের মানসিকতা মনের মধ্যে লালন করে বেড়ায়, তার কোনো পরিচয় হয় না। পুরুষ তো দূরের কথা, সে মানুষই নয়। তার একমাত্র পরিচয় সে ধর্ষক।’
ধর্ষণের শাস্তি প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘দেশে মহামারির চেয়েও ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ। এর কারণ ওই সব মানুষরূপী নরপশুর নৈতিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, ধর্ষণসংশ্লিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতা, বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। দলমত–ক্ষমতা—সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
তারকা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর পোস্ট থেকে পাওয়া যায় প্রচণ্ড আক্রোশের স্বর। তিনি লিখেছেন, ‘...ধর্ষণে প্রলুব্ধ করে মাথার ভেতর বাস করা অমানুষটা। মৃত্যুদণ্ড এদের জন্য যথেষ্ট নয়।’ ধর্ষকের নির্মমতম শাস্তির পাশাপাশি আইনের সঠিক এবং কঠিন প্রয়োগ চেয়েছেন এই অভিনেতা। ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক চেয়েছেন আরও ভয়ানক শাস্তি। ধর্ষকেরা যাতে আমৃত্যু ভোগ করেন ও মনে রাখেন, এ রকম শাস্তির দাবি করেছেন তিনি। শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন মনে করেন, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড বা ক্রসফায়ার দিলে সেটা তাঁদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে কম হবে; বরং যে শাস্তিতে তাঁরা প্রতি মুহূর্তে নিজেদেরই মৃত্যু কামনা করবেন, জনসমক্ষে সে রকম শাস্তি দাবি করেছেন শাওন।
ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরাও। ৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী বক্তব্য দেন সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের উদ্যোগে গতকাল বিকেলে অবস্থান ও প্রতিবাদী আলোর মিছিল বের করা হয়।