ডাবিং সিরিয়াল বন্ধে সময় বেঁধে দিলেন শিল্পীরা

সমাবেশে মুনিরা ইউসুফ মেমী, আফরোজা বানু, চিত্রলেখা গুহ, তমালিকা, তারিন, সৈয়দ হাসান ইমাম, এ টি এম শামসুজ্জামান, আবুল হায়াত
সমাবেশে মুনিরা ইউসুফ মেমী, আফরোজা বানু, চিত্রলেখা গুহ, তমালিকা, তারিন, সৈয়দ হাসান ইমাম, এ টি এম শামসুজ্জামান, আবুল হায়াত

ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে চ্যানেলগুলোর সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীদের সব দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ স্লোগানে পাঁচ দফা দাবিতে টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমাবেশে এফটিপিওর আহ্বায়ক নাট্যকর মামুনুর রশীদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শিল্পী ও কলাকুশলীদের ১৩টি সংগঠন মিলে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছে। সমাবেশে নাট্যজগতের প্রায় সব শিল্পী ও কলাকুশলী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

বাঁ থেকে মীর সাব্বির, তৌকীর আহমেদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, জাহিদ হাসান ও আজিজুল হাকিম
বাঁ থেকে মীর সাব্বির, তৌকীর আহমেদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, জাহিদ হাসান ও আজিজুল হাকিম

সমাবেশে উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে দেশের বেসরকারি চ্যানেলে বাংলায় ডাব করা বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান বন্ধ; টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারে ক্লায়েন্ট বা এজেন্সি ব্যতীত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ; টেলিভিশন শিল্পের সব ক্ষেত্রে আগাম আয়কর বা এআইটি পুনর্নির্ধারণ; টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ এবং ডাউনলিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশে মামুনুর রশীদ বলেন, তাঁদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে অনেকগুলো সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সরকারকে তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিচ্ছেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবি না মানলে ১ জানুয়ারি থেকে দুর্বার গণ-আন্দোলন শুরু করবেন তাঁরা। তিনি বলেন, যদি কোনো চ্যানেলে ১৫ ডিসেম্বরের পর একটি ডাবিং সিরিয়াল চলে, তাহলে তাঁরা সেই চ্যানেলের সামনে অবস্থান নেবেন। ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে ডাবিংমুক্ত চ্যানেল চান তাঁরা।

এক ফ্রেমে তিশা, বিপাশা হায়াত ও রোজী সিদ্দিকী  l ছবিগুলো তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন
এক ফ্রেমে তিশা, বিপাশা হায়াত ও রোজী সিদ্দিকী l ছবিগুলো তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন

অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘সব শিল্পী ও কলাকুশলী নিয়ে যে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে, আমি এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আশা করি, শেষ পর্যন্ত সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’
নাট্যকার ও অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘এই পেশাটায় একধরনের কুয়াশাচ্ছন্নতা দেখা দিয়েছে। একধরনের আগ্রাসন দেখা যাচ্ছে। টেলিভিশনে দেখি ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে এসে গান গাওয়ানো হচ্ছে। কেন? আমাদের দেশে কি ভালো মানের শিল্পী নেই?’
সমাবেশ চলাকালে সেখানে এসে সংহতি প্রকাশ করে এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ, চ্যানেল আই, আরটিভি, দেশ টিভি ও গান বাংলা টেলিভিশন।
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘শিল্পীদের যদি এক দফা দাবি থাকে তাহলে সেটার সঙ্গেও আমরা থাকব। আর যদি কোনো দিন ১০০ দফা দাবি হয়, তাহলেও আমরা শিল্পীদের সঙ্গে থাকব।’ এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বিদেশি কিছু চ্যানেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে। এটা চলতে থাকলে আমরা মালিকেরা হয়তো-বা বেশি দিন চ্যানেল চালাতে পারব না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইনামুল হক, এ টি এম শামসুজ্জামান, আতাউর রহমান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ডলি জহুর, তারিক আনাম খান, বৃন্দাবন দাস, তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত, মোশাররফ করিম, আজাদ আবুল কালাম, রওনক হাসান, শবনম ফারিয়া প্রমুখ। সমাবেশে গান পরিবেশন করেন চিত্রলেখা গুহ, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী ও তারিন। সমাবেশ পরিচালনা করেন আনজাম মাসুদ, কৌশিক শংকর দাস ও নওশীন।