কেন বদলে গেল ‘হুররাম সুলতান’?

‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে ‘হুররাম সুলতান’ চরিত্রে অভিনয় করা মারিয়েম জারলি।
‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে ‘হুররাম সুলতান’ চরিত্রে অভিনয় করা মারিয়েম জারলি।

হঠাৎ করেই বদলে গেছে ‘হুররাম সুলতান’। এক, দুই করে পঞ্চম মৌসুম পর্যন্ত যাঁরা ‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকের দর্শক, তাঁরা একটু ধাক্কাই খেয়েছেন। ভাবছেন, কী এমন হলো যে বাংলায় ডাবিং করা দীপ্ত টিভির এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয় চরিত্র হুররাম সুলতানে পরিবর্তন আনতে হলো?

সেই উত্তরটা জানার আগে হুররাম সুলতানের ভূমিকায় অভিনয় করা মারিয়েম জারলি সম্পর্কে একটু জানা যাক। তাঁর জন্ম ১৯৮৩ সালের ১২ আগস্ট, জার্মানিতে। বাবা তুরস্কের, আর অভিনেত্রী মা জার্মানির। সে সূত্রে মারিয়েম তুরস্ক ও জার্মানি—উভয় দেশেরই নাগরিক। তবে ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছেন জার্মানিতেই। সেখানেই অল্প বিস্তর অভিনয় আর মডেলিং করে নাম করছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে ‘হুররাম সুলতান’ চরিত্রে অভিনয় করা মারিয়েম জারলি।
‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে ‘হুররাম সুলতান’ চরিত্রে অভিনয় করা মারিয়েম জারলি।

২০১০ সালের শেষের দিকে ভাগ্যটা একেবারে বদলে যায় মারিয়েমের। তুরস্কের ৬০০ বছরের অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম সফল শাসক সুলতান সুলেমানকে নিয়ে একটি টিভি ধারাবাহিক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন। আর সেখানে সুলতান সুলমানের অপূর্ব সুন্দরী দাসী থেকে স্ত্রী বনে যাওয়া হুররামের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ডাক পান মারিয়েম।

এই ধারাবাহিকে হুররাম চরিত্রটি শুধু সৌন্দর্যের নয়; বুদ্ধিদীপ্ত, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর ক্ষমতার সর্বোচ্চটুকু নিজের করে নেওয়া রহস্যময়ী এক নারীরও। এই সব কটি বিষয়ই এত সুন্দর করে পর্দায় তুলে ধরেছেন মারিয়েম; যেন বাস্তবের মারিয়েম আর পর্দার হুররাম একাকার হয়ে গেছেন। আর এর মধ্য দিয়েই সত্যিকারের তারকাখ্যাতি ধরা দেয় তাঁর কাছে।

২০১১ সাল থেকে এই ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হয়। তখন জার্মানি থেকে তুরস্কে চলে আসেন তিনি। ওঠেন একটি হোটেলে। যত দিন তিনি এই ধারাবাহিকটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তত দিন তাঁর বাস এই হোটেলেই ছিল। এখানে থেকেই ধারাবাহিকটির যাবতীয় কাজ করেছেন তিনি। এমনকি ২০১২ সালে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও তিনি এই হোটেল থেকে গিয়েই নিয়েছেন।

মারিয়েম জারলি।
মারিয়েম জারলি।

ধারাবাহিকটিতে কাজ করার সময় চিত্রনাট্যের হুররাম চরিত্রের মতো তাঁর ব্যক্তিজীবনেও নানা উথাল-পাতাল ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো তুরস্কের এক প্লেবয় চান এতেশের প্রেমে পড়েন তিনি। যদিও দুই সন্তানের জনক চানের সঙ্গে সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ব্যাপারে তাঁরা শুরুতে বেশ সতর্ক ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়, তাও করুণ প্রেমের।

২০১৩ সালে মে মাসে হঠাৎ করেই ধারাবাহিকটিতে অভিনয় বন্ধ করে দেন মারিয়েম। তুরস্কের গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রথমে খবর রটেছিল, এই ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্র সুলতান সুলেমান হিসেবে অভিনয় করা হালিত এরগেনচের চেয়ে কম সম্মানী পাওয়ায় তিনি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে সেটি ধোপে টেকেনি এ কারণে যে মারিয়েম তো এত দিন এই সম্মানীতেই কাজ করেছেন। কখনো বিষয়টি নিয়ে তিনি আপত্তি তোলেননি। তা ছাড়া এই চরিত্রে অভিনয় তাঁকে যে খ্যাতি আর সম্মান এনে দিচ্ছিল, সেটা তিনি ভালোভাবেই উপভোগ করছিলেন।

এরপর কেঁচো খুঁড়তে অনেকটা সাপ বেরিয়ে আসার মতো ঘটনা ঘটল। জানা গেল, প্রেমিক চান এতেশের কাছ থেকে চূড়ান্ত প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। ওই সময় পাকিস্তানের সাংবাদিক আয়েশা আরমানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিয়েম বলেন, ‘আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি।’ এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁর আর চানের মধ্যে সম্পর্কটা ছিল বাইরে খেতে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া পর্যন্তই। পরিচিতরা চানের মতো প্লেবয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল। তাদেরও সম্পর্কটা গভীর করার ভাবনা ছিল না। তবে তিনি নিজেই একসময় চানের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন।

মারিয়েম জারলি।
মারিয়েম জারলি।

মারিয়েমের ভাষায়, তিনি দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে ভিন দেশের এক হোটেলে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। ধারাবাহিকের কাজ ছাড়া বাইরে তেমন একটা যাওয়া হতো না তাঁর। জার্মানিতে বড় হওয়ায় তুরস্কে তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধবও ছিল না তাঁর। নির্ভুল কাজ করতে গিয়ে তিনি রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে চিত্রনাট্য মুখস্থ করেছেন। সব মিলিয়ে চাপ আর একাকিত্বে ছিলেন তিনি। তাঁর এই জীবনে চান ছিল মুক্তির আলোর মতো। তাই ধীরে ধীরে তাঁর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর প্রেমিকও সেই সুযোগটা নেন।

মারিয়েম বলছিলেন, যখন প্রেমিক চানকে তিনি জানান যে তাঁদের জীবনে সন্তান আসতে যাচ্ছে, তখন প্রেমিকের ভিন্ন রূপ দেখেছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, চান এতেশ এ খবর শুনে বলেন যে এই সন্তানের দায়দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। তাঁর ঘরে স্ত্রী আর দুই সন্তান আছে। ভালো ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তিনি গর্ভপাত করার পরামর্শ দেন মারিয়েমকে। তবে মারিয়েম জারলি সেটা করেননি। তিনি প্রেমিককে ছেড়েছেন। আর অনাগত সন্তানকে আঁকড়ে বাঁচার জন্য তুরস্কের সব পাট চুকিয়ে তিনি জার্মানিতে পরিবারের কাছে চলে যান। ফলে হুররাম চরিত্রটিতে তাঁর আর অভিনয় করা হয়নি। ধারাবাহিকটির কর্তা ব্যক্তিরা নতুন আরেকজনকে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নেন। বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী ফুটফুটে এক মেয়ের মা। তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস ও হুরিয়েত ডেইলি নিউজ   

মারিয়েম জারলি।
মারিয়েম জারলি।