অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘টেলিভিশনে এখন আর কেউ নাটক দেখে না।’ দর্শক চলে গেছে ইউটিউবে। গত কয়েক বছর যে নাটকগুলো আলোচিত হয়েছে, সেটাও ফেসবুক ও ইউটিউবের কারণে। বেশির ভাগ নাটকের গল্প দর্শকদের টানছে না। নির্মাণের মানও সেকেলে। পরিচালকেরা দোষ চাপাচ্ছেন প্রযোজকদের ঘাড়ে। বাজেটস্বল্পতার কারণেই নাকি মানসম্মত নাটক বানানো যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে নাটকের সংগঠনগুলোর কী মত? কী করছে তারা?
নাটকের মান কমেছে, সেটা উপলব্ধি করছেন নাট্য সংগঠনগুলোর কর্তাব্যক্তিরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। নাটকের মানোন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগও নিচ্ছেন তাঁরা। নতুন নাট্যকার তৈরি করতে কর্মশালা করাচ্ছে নাট্যকার সংঘ। টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক সেমিনার করেছি। প্রতি তিন মাসে নাট্য রচনাশৈলী নামে একটা কর্মশালা করছি। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পাওয়া গল্পকারদের চিত্রনাট্য দিয়েই নাটক বানানো হবে। বিটিভি, আরটিভি, চ্যানেল আই ও মাছরাঙা টেলিভিশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি, যাতে আমাদের অনুমোদিত চিত্রনাট্য দিয়ে তারা নাটক বানায়। শিগগির অন্য চ্যানেলগুলোর সঙ্গেও চুক্তি হবে।’ এ ছাড়া পাণ্ডুলিপি ব্যাংক করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন এই নাট্যকার। তিনি বলেন, ‘বিচারকেরা ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত পাঁচটি করে গল্প বাছাই করবেন। চ্যানেলগুলোয় সেগুলো পাঠানো হবে। এই আইডিয়ায় বেশ সাড়া পাচ্ছি।’
নাটকের মানোন্নয়নে কর্মশালা করাচ্ছে পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। পরিচালক হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নাটক নির্মাণের কৌশল শেখানোর কাজ করে যাচ্ছে তারা। নিবন্ধিত সদস্যদের জন্য এ কর্মশালা উন্মুক্ত। জুলাইয়ের শেষ দিকে শুধু নিবন্ধিত সদস্যদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করেছে এই সংগঠন। মানোন্নয়নের জন্য ২৫ মে নাটকের চার সংগঠনের সমন্বয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে তারা। জানালেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, কেবল বাজেট বাড়ালেই টিভি নাটকের অন্তত পাঁচটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, পে চ্যানেল বাস্তবায়ন করতে পারলে নির্মাতারা ভালো কাজের প্রতিযোগিতা শুরু করবেন। তখন এমনিতেই নাটকের মানের উন্নতি হবে। দর্শক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হলে গল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। তিন বা চারজন শিল্পী দিয়ে নাটক করলে সেই নাটক মানুষকে টানবে না। পারিবারিক ও সামাজিক চরিত্রগুলোকে নাটকে তুলে ধরতে হবে। চ্যানেলগুলোকে নাটকের বাজেট বাড়ানো, শিল্পী বাছাইয়ের স্বাধীনতা দেওয়া, শক্তিশালী প্রিভিউ কমিটি গঠন, মানসম্পন্ন নাটক প্রচারসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন এই অভিনয়শিল্পী।
টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, ‘টাকা থাকলেই এখন যেকেউ প্রযোজক হয়ে যান। আমরা টেলিভিশন মালিকদের সংগঠনের নেতাদের কাছে আহ্বান করেছি, আমাদের সংগঠনের সদস্য ছাড়া, অনাপত্তিপত্র ছাড়া যেন কোনো নাটক কিংবা অনুষ্ঠান প্রচার করা না হয়।’
নাটকের এই খরায় ‘আয়েশা’, ‘বুকের বাঁ পাশে’, ‘পাতা ঝরার দিন’, ‘এই শহরে কেউ নেই’, ‘শেষ পর্যন্ত’, ‘বিনি সুতোর টান’, ‘তবুও ভালোবাসি’ নাটকগুলো দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ছিল। এমনকি এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে জড়িত আরও সাতটি সংগঠন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সহকারী পরিচালক সমিতি, টেকনিক্যাল হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, মেকাপম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, লাইট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।