কথা রাখতে পারল কি অভিনয়শিল্পী সংঘ?
অভিনয়শিল্পী সংঘের নিবন্ধন, পেশা হিসেবে অভিনয়শিল্পের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সমস্যাগ্রস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, নাটক-সংশ্লিষ্ট অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, শিল্পীদের শুটিং-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কাজ করা, বাংলাদেশে বিদেশি অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় নীতিমালা, অভিনয়শিল্পী সংঘের নিজস্ব কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, শুটিং সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা—এ রকম অনেক আশ্বাস দিয়ে শুরু হয়েছিল অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচিত কমিটির পথচলা। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। নির্ধারিত সময়ের তিন মাস দেরিতে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২১ জুন শিল্পকলা একাডেমিতে অভিনয়শিল্পীরা বাছাই করবেন আগামী দুই বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব।
নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের আগে কথা উঠেছে, আগের কমিটি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিনয়শিল্পীদের কেউ কেউ বলছেন, শিল্পীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে অনেক কাজ করবে বলেও করেনি এই কমিটি। কাজের ভালো পরিবেশ সৃষ্টি, নাটকপাড়ার শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়েও তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা তাদের চোখে পড়েনি।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘আমরা অনেক কিছুরই উদ্যোগ নিয়েছি, আবার অনেক কিছু এই স্বল্প সময়ে করা সম্ভব হয়নি। তবে উদ্যোগগুলো কারও চোখে না পড়ার কথা নয়। আমরা সংগঠনের কার্যালয় স্থাপন করেছি।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহিদুল আলম সাচ্চু এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তিনি স্বীকার করেন, ‘অনেক দিনের অনিয়ম এক দিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে বেশ কিছু পরিকল্পনা এই কমিটি হাতে নিয়েছিল, যা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তবে এসব দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে।’
দুই বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এরই মধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন। অভিনয়শিল্পী সংঘের দুই বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি বলেন, ‘আগেও এই সংগঠন ছিল, কিন্তু সেটা দৃশ্যমান ছিল না। গত দুই বছরে সংগঠনটি দৃশ্যমান হয়েছে। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে, যা খুবই দরকার ছিল বলে মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নাটকের ক্ষেত্রটিতে হাজারো সমস্যা। এসব সমস্যা এক দিনে দূর করা সম্ভব হবে না। কিছু উদ্যোগ চোখে পড়ছে, ফলাফল কেউ ভোগ করেছে বলে শুনিনি। সামনের সময়টাতে হয়তো পেশার ক্ষেত্রেও সুফল ভোগ করতে পারবে।’
আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অভিনয় পেশার নিরাপত্তা। সেই পেশার নিরাপত্তার জন্য শুরুতে কার্যালয় এবং সংগঠন নিবন্ধন করেছি। তিন কোটি টাকার তহবিল করার কথা ছিল, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত করতে পেরেছি। উৎসব ভাতা, যেসব শিল্পী বেকারত্বে ভুগছেন, বয়োজ্যেষ্ঠ হয়েছেন, কাজ করতে পারছেন না—তাঁদের নিয়েও কাজ করছি। চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। টেলিভিশন নাটক থেকে সামাজিক ও পারিবারিক চরিত্র শেষ হয়ে গেছে, নায়ক-নায়িকানির্ভর হওয়ার কারণে পার্শ্বচরিত্রের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। সেই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি।’
যে কাজগুলো করতে পারেননি, সেগুলো নিয়ে আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘নাটকের কাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা চেয়েছি, একজন শিল্পীর কর্মঘণ্টা ১৮ কিংবা ১৬ ঘণ্টা বাদ দিয়ে ১০ ঘণ্টায় আনতে, এখনো তা পারিনি।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের উদ্যোক্তাদের অন্যতম অভিনয়শিল্পী, পরিচালক জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচজন শুরু করেছিলাম। এখন সংগঠনের সবার মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা এসেছে বলতে পারি। এত পদের দরকার নেই। লোকসংখ্যা কম হলেও চলে। সবাই তো কাজ করে না, তারপরও শুনেছি সেক্রেটারি হিসেবে নাসিম অনেক কাজ করেছে।’
সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে জাহিদ হাসান বলেন, ‘অভিনয়শিল্পে অনিয়ম হলে, শিল্পীরা বিপদে পড়লে স্বার্থরক্ষার জন্য সংগঠন বেশ কাজে দেয়। তবে অভিনয়শিল্পী সংগঠন মানে নানা জায়গা থেকে সুযোগ-সুবিধা পাবে কিংবা এখান-ওখান থেকে আমন্ত্রণ পাবে, তা যেন না হয়।’