এবার তরুণদের দাপট
২০১০ সালের পর টানা কয়েক বছর সর্বাধিক নাটক প্রচারিত হতো মোশাররফ করিমের। সংখ্যার হিসাবে কাছাকাছি থাকত জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশো, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবীন চৌধুরীদের নাটক। সময় বদলেছে। এবার এই ধারাবাহিকতা থাকছে না, ঈদে চেনা সেই দৃশ্য বদলে যাবে। সংখ্যার দিক থেকে বেশি নাটকে অভিনয় করা শিল্পীর তালিকায় নতুন নতুন মুখ আসছে।
বেশ কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধি ও একাধিক প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭০ ভাগ ঈদনাটক এবার তরুণ অভিনয়শিল্পীদের দখলে। অনেকে শুধু তরুণদের ওপর ভরসা করেই এগিয়েছেন। কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল চেষ্টা করেছে তরুণ ও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের সমপরিমাণ নাটক দিয়ে ঈদ অনুষ্ঠান সাজাতে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, তরুণদের ওপর আস্থা রাখার সময় এসেছে। তাঁদের মধ্য থেকেই আগামীর বড় তারকা তৈরি হবে।
ঈদনাটকে এগিয়ে থাকা অভিনয়শিল্পীদের তালিকায় আছেন ফারহান আহমেদ জোভান, তৌসিফ মাহবুব, ইয়াশ রোহান, মুশফিক আর ফারহান, খাইরুল বাসার, শামীম হাসান সরকার, সৈয়দ শাওন, তামিম মৃধা ও অভিনেত্রীদের মধ্য তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, মুমতাহিনা টয়া, সাফা কবির, কেয়া পায়েল, তাসনিয়া ফারিণ, তানিয়া বৃষ্টি, সামিরা খান মাহি, সুমাইয়া হিমি, পারসা ইভানা প্রমুখ। তাঁদের কারও ৪০, কারও ২০ থেকে ৩০টির মতো নাটক ঈদে প্রচারিত হবে। এই নাটকগুলোর শুটিং শুরু হয়েছে জানুয়ারি থেকে। তরুণদের এসব নাটক নিয়ে কতটা আশাবাদী পরিচালক, প্রযোজক ও তরুণ অভিনয়শিল্পীরা?
ঈদে জোভানের সর্বাধিক (৪০টি) নাটক প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব নাটক এনটিভি, বাংলাভিশন, আরটিভি, মাছরাঙাসহ প্রায় সব টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি ধারাবাহিক নাটক আপাতত করছি না। ওটিটির কাজগুলো তেমন ব্যাটে-বলে মিলছে না। যে কারণে কিছুটা আগে থেকেই ঈদের খণ্ডনাটকের শুটিং শুরু করেছি। ঈদের নাটক নিয়ে সব সময় আলাদা একটি চ্যালেঞ্জ থাকে। এবার দর্শক বেশির ভাগ ভালো নাটক পাবেন।’
অল্প সময়ের ক্যারিয়ারেই দর্শকদের সাড়া পেয়েছেন তরুণ অভিনেত্রী কেয়া পায়েল। গত বছর ঈদে ২০টির মতো নাটক প্রচার হয়েছিল। সেই সংখ্যা এবার দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থেকে শুরু করে তৌসিফ মাহবুব, জোভান, মুশফিক আর ফারহানদের সঙ্গে ঈদনাটকগুলোতে দেখা যাবে তাঁকে। অভিনীত কাজগুলো নিয়ে আশাবাদী প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান। দর্শক আমার কাজ পছন্দ করেন। পরিচালকেরা আমাকে কাজে নেন। আমি সব সময় চেষ্টা করি দর্শকদের পছন্দের একজন হয়ে উঠতে। ঈদনাটকগুলোতে ভেরিয়েশন আনতে চাই। এবারও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক গল্পে কাজ করেছি। অনেক আগের কিছু নাটক ঈদে প্রচারিত হবে।’
পরিচালনার দিক থেকে সংখ্যার বিচারে প্রথম দিকে আছেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ। ১০টির বেশি নাটক পরিচালনা করছেন তিনি। কেন তরুণদের ওপর আস্থা রাখেন—এমন প্রশ্নে এই নির্মাতা বলেন, ‘নতুনদের নিয়ে কাজ করার জন্য কেউ না কেউ তো এগিয়ে আসতে হবে। এই তরুণেরাই তো একসময় পুরোনো হবে, অভিনয়ে দক্ষ হবে। সিনিয়রদের আমরা সম্মান করব, তরুণদের কাছে টানব, সবাইকে নিয়েই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে।’
মাছরাঙা টিভির সিংহভাগ ঈদনাটকে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনয়শিল্পীরা। তরুণদের অভিনীত কাজগুলো নিয়ে খুশি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় তরুণদের নিয়েই বেশি কাজ করি। এবারও তাঁদের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা। তাঁদের কাছে আমাদের আশাটাও বেশি। কারণ, তাঁরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন। তরুণ অভিনয়শিল্পীরা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। তাঁরা অনেক বেশি সাহসী কাজ করার ক্ষমতা রাখেন।’
মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবীন চৌধুরীসহ অনেক অভিনয়শিল্পী এবার সিনেমা, ওটিটির কাজে ব্যস্ত। তাঁদের মধ্যে এবার মোশাররফ করিম অভিনীত ২০টির মতো নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। এই অভিনেতা বলেন, ‘এখন সব মাধ্যমেই কাজ করতে হচ্ছে। ঈদে ওটিটির জন্য কাজ করেছি, গত মাসে সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। যে কারণে টেলিভিশনে আগের মতো সময় দিতে পারিনি। চেষ্টা করেছি সময় নিয়ে বেছে বেছে কাজ করতে। যে কারণে হয়তো সংখ্যায় আগের চেয়ে কম নাটক প্রচারিত হবে। তবে সব মাধ্যমেই দর্শক কাজগুলোতে বিনোদন পাবেন।’