এ জগৎ থেকে ফেরা যায় না
ব্যক্তিজীবনে তিনি ব্যাংকার। তবে মানুষটির ভেতরে, মগজে ও মননে, বাস করে একজন অভিনেতা। বাস করে না বলে বলা দরকার হাঁসফাঁস করে। মোহ কিংবা নেশার মতো তিনি জড়িয়ে গেছেন অভিনয়ে। অভিনীত নাটকের সংখ্যা ৯৫। তবে অনেক দিনের স্বপ্ন সিনেমায় কাজ করার। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আজম খানের। ‘সাপলুডু’ নামে একটি সিনেমায় পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। শুটিং সেটে বসে গত শুক্রবার দুপুরে তিনি কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
কাঁচা-পাকা দাড়ির কারণে আজম খানকে মনে হয় কোমল এক মানুষ। যেন আভিজাত্য আছে, কঠোরতা নেই। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলোও তেমন। শৈশবে গানের শখ ছিল। তবে বেশির ভাগ বাঙালি মুসলমানের বাড়িতে যেটা হয়, তাঁদের বাড়িতেও ব্যতিক্রম হয়নি। বাবা ছিলেন ভীষণ কড়া। বাড়িতে তাই একমাত্র কাজ ছিল পড়া, পড়া এবং পড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করার পরেও তিনি ভাবেননি যে একসময় অভিনয় করবেন। কিন্তু ২০১৫ সালে কী ভর করেছিল তাঁর ওপর?
‘১৯৮৮ সালে উন্নয়ন সংস্থায় কাজের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। ১৯৯৯ সাল থেকে কাজ করছি ব্যাংকে। কাজের ক্ষেত্র ছিল যোগাযোগ, জনসংযোগ, প্রকাশনা, তথ্য ও বিপণন। এখন যে মডেলিং ও অভিনয় করছি, এখানেও কিন্তু প্রায় একই ধারার কাজ। বলা যায়, আমি ইন্ডাস্ট্রি বদলেছি, কিন্তু কাজের ক্ষেত্র আছে অভিন্ন,’ বলেন আজম খান। অবশ্য তাঁর কাছে বিজ্ঞাপনের আবেদন অন্য রকম। বিজ্ঞাপনে অনেক যত্নের দরকার হয়। তবে নাটকে অভিনয় করতেই তাঁর বেশি ভালো লাগে।
‘এটিএন বাংলার অন্যতম উপদেষ্টা মীর মোতাহার হোসেন এবং শিল্পী চন্দন সিনহাকে একদিন বলেছিলাম, অভিনয় করতে চাই। তাঁরাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে। অভিনয়ের শখ আমার অনেক দিন থেকে। ভেবেছিলাম দুই-তিনটা নাটক করে ব্যাংকের লোক ব্যাংকে ফিরে যাব। কিন্তু হায়, মন পড়ে থাকে শুটিং সেটে। অভিনয় আমাকে নেশার মতো পেয়ে বসে। বই পড়া, ভ্রমণ—সব অভ্যাস হারিয়ে যায় অভিনয়ের নেশায় পড়ে। এমন দিনও গেছে, অফিস শেষ করে শুটিংয়ে চলে গেছি বগুড়া বা থানচি। পরদিন ফিরে আবার অফিস করেছি। এখন বুঝি, এ জগতে একবার ঢুকলে আর ফেরা যায় না,’ এভাবেই নিজের অভিনয়-মগ্নতার বিবরণ দেন আজম খান।
আজম খান সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন ছোট পর্দার নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে। এখনো করছেন, করেই যাচ্ছেন। একজন নতুন অভিনেতার ওপর এই নারী পরিচালক এতটা আস্থা রেখে কাজ করে যেতে পারেন কীভাবে? আজম খানের ধারণা, ‘তিনি আমাকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করছেন। আমাকে দিয়ে অনেক ধরনের চরিত্রে কাজ করিয়ে নিয়েছেন তিনি। ফলাফল খারাপ না। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’ চয়নিকার ‘শেষের পরে’ নাটকে কাজ শুরু করার পর এই পরিচালকের ৫০টিরও বেশি নাটকে কাজ করেছেন আজম খান। সেগুলোর কয়টির কথা মনে আছে? কয়েকটা নাম বলেন। তিনি বলেন, ‘নীলাভ বিস্মরণ’, ‘এ কী সোনার আলোয়’, ‘নতুন ভোরে দেখা’, ‘অসময়ের বৃত্তে’, ‘আমাদের বর্ষা’, ‘কখনো এমন নির্জন দুপুর আসে’...আরও বলব?
এ ছাড়া সাতজন পরিচালকদের সঙ্গে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ হলো মাহফুজ আহমেদের ‘শৈনী প্রু’, সাজ্জাদ সুমনের ‘কলুর বলদ’, গৌতম কৈরীর ‘গল্পের ভেতর গল্প’, মাবরূর রশীদ বান্নাহর ‘ছেলেটা বেয়াদব’, সকাল আহমেদের ‘যদি জানতে’, শ্রাবণী ফেরদৌসের ‘র্যাম্প রান’ এবং ফেরদৌস হাসানের ‘এক ফাগুনে’।
একজন শৌখিন মানুষ হিসেবে আজম খানের শখের তালিকা দীর্ঘ। অভিনয় সেগুলোর প্রধানতম। আর বাকিগুলো সব পেছনে পড়ে আছে। তবে নানাভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এখনো যুক্ত আছেন তিনি।
শুটিংয়ের বিরতিতে নিজের এসব গল্প বলতে বলতে আবারও শুটিংয়ে ফিরতে চান আজম খান। শেষে জানতে চাই, পুলিশের চরিত্রে যে অভিনয় করছেন, আপনি কি সেখানে ভালো পুলিশ, নাকি খারাপ পুলিশ? ঘুষ খান? তিনি বলেন, ‘এখনই সবটা বলা যাবে না। কাজটা এগিয়ে যাক।’