হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবি আত্মসাতের অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ২৯ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
শাওনের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন রুমা চৌধুরী এবং তাঁর প্রাক্তন স্বামী বই ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহা। শাওনের মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১২ সালে চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় থাকার সময় অবসরে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সে সময় রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এরই সূত্রে ২০১২ সালের জুন মাসে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর আঁকা ২৪টি ছবি প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে তাঁদের দেন। শর্ত ছিল, প্রদর্শনী শেষে ছবিগুলো তাঁরা ফেরত দেবেন। কিন্তু তাঁরা ফেরত দেননি। ছবিগুলো পরেরবার ফেরত দিতে বলা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর সন্তানসহ দেশে ফিরে আসেন শাওন। পরবর্তী সময়ে অনেকবার শাওন ছবিগুলো ফেরত চাইলেও তাঁরা দেয়নি। অনেক দেনদরবারের পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুমা তাঁর প্রাক্তন স্বামী বিশ্বজিৎকে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় ২৪টি ছবির মধ্যে ২০টি ফেরত দেন। বাকি চারটি ছবি ফেরত দেননি।
মামলার বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেহের আফরোজ শাওন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের লেখা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর আঁকা ছবিগুলোও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো মনে করি, বইয়ের চেয়েও এই ছবিগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটা বইয়ের অনেক কপি হয় কিন্তু একটা ছবির একটাই পিস। হুমায়ূন আহমেদ যে কয়টা ছবি এঁকেছিলেন, সব কটিতে তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন। আমার কাছে ছবিগুলো আলাদা গুরুত্ব বহন করে, কারণ একজন ক্যানসার রোগী তাঁর ছোট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কেমোথেরাপির কষ্ট ভুলে থাকার জন্য ছবিগুলো এঁকেছিলেন। সেই ছবিগুলো থেকে কয়েকটি যখন কেউ আত্মসাৎ করেন, মানবিকভাবে তাঁকে তো সৎ বলতে পারি না। এত দিন ধরে তাঁরা বলে আসছিলেন, ছবিগুলো চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু না দেওয়া চারটি ছবির একটি তাঁদের আয়োজন করা প্রদর্শনীতে দেখলাম! একটা ছবি যেহেতু এখন সামনে আনা হয়েছে, আমাদের ধারণা, বাকি ছবিগুলোও তাঁদের কাছে আছে। বছরের পর বছর ছবিগুলো চেয়ে না পেয়ে বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।’
মামলার মেহের আফরোজ শাওনের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, ‘এক জীবনে হুমায়ূন আহমেদ তো খুব বেশি ছবি আঁকেননি। যেহেতু খুব বেশি আঁকেননি এবং তিনি এখন প্রয়াত—তাঁর এসব ছবির মূল্যমান অনেক বেশি। কদরও বেশি। আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টিকে আমলে নিয়ে শিগগিরই ছবিগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দেবেন। অন্যথায় এসব ছবি তাঁরা সরিয়েও ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি।’