১৭ বছর আগে আজকের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে কেন চিঠি দিয়ে চঞ্চলকে পাঠিয়েছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান
১৭ বছর আগের কথা। সেই দিন হঠাৎ চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে কিছুটা চমকে ওঠেন গুণী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। তাঁর অবস্থা দেখে সেই সময় শামসুজ্জামান তাঁর বন্ধুর কাছে চিঠি লিখে পাঠান। তাঁর সেই বন্ধু ছিলেন আজকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। বর্তমানে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ টি এম শামসুজ্জামানের প্রয়াণদিবসে সেই চিঠি ফেসবুকে পোস্ট করেই তাঁকে স্মরণ করেছেন চঞ্চল চৌধুরী।
আজ গুণী দুই অভিনয়শিল্পীদের প্রয়াণদিবস—গোলাম মুস্তাফা ও এ টি এম শামসুজ্জামান। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চঞ্চল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘গভীর শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি। গোলাম মুস্তাফা সাহেবের সঙ্গ লাভ বা তাঁর সঙ্গে অভিনয় করবার সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকে তাঁর অভিনয় ও আবৃত্তির একনিষ্ঠ ভক্ত আমি।’
খুব কাছ থেকে এ টি এম শামসুজ্জামানকে পেয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে। জনপ্রিয় ‘ভবের হাট’ নাটকে চঞ্চল দীর্ঘ সময় মামা চরিত্রে এ টি এমকে পেয়েছেন। সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় সেই নাটকে আরও অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত হুমায়ূন ফরীদি, ফজলুর রহমান বাবু, মোশারফ করিম, বন্যা মির্জা, আ খ ম হাসান, শামীম জামানসহ আরও অনেকে। এ টি এমকে ঘিরে তাঁদের সবার সঙ্গে জমে উঠত আড্ডা।
সেই স্মৃতি স্মরণ করে চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমাদের সবারই অসংখ্য ভালো লাগার এবং আনন্দের স্মৃতি রয়েছে এ টি এম ভাইয়ের সঙ্গে। “ভবের হাট” ধারাবাহিকের শুটিংয়ের তখন দৃশ্যধারণ চলছিল। দৃশ্যধারণের মধ্যে এ টি এম ভাই হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কপালে কী হয়েছে চঞ্চল?” বললাম, “কোনো একটা আঘাত পাওয়ার পর থেকে টিউমারের মতো শক্ত কী একটা যেন হয়েছে। অনেক দিন হয়ে গেল, কমছে না।”’
তখন চঞ্চলের কপালের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকেন। তখন এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘সে কি! তোমার তো এখন কপাল খোলার সময়, কপালের যত্ন নাও। আমার বন্ধু ডাক্তার সেন, সে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের প্রধান। আমি সেন মহাশয়কে একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। তুমি তাড়াতাড়ি দেখা করো তাঁর সঙ্গে। তিন-চার দিনের মধ্যে কপালটা ফাটিয়ে, জোড়া লাগিয়ে আবার আগের মতো ফ্রেশ কপাল বানিয়ে দেবে।’
সেই সময়ে যথারীতি এ টি এম শামসুজ্জামান একটা চিঠি লিখে চঞ্চলের হাতে দেন। পরে সেই চিঠি নিয়ে চঞ্চল ডাক্তার সেনের সঙ্গে দেখা করেন। চঞ্চল লিখেছেন, ‘সেন স্যার হলেন বিখ্যাত ডাক্তার সামন্ত লাল সেন। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেন স্যার আমাকে দেখেই চিনে ফেললেন। তারপর এ টি এম ভাইয়ের লেখা চিঠিটা পড়ে হাসতে লাগলেন।’
সেই চিঠিতে এ টি এম শামসুজ্জামান বন্ধু সেন অনেকটা রম্য লিখেছিলেন। বন্ধু বলে কথা। ১৭ বছর আগের সেই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘সেন, প্রীতস্তি কুশল রইল। চঞ্চলকে পাঠালাম। ও ইদানীং ওর অভিনয়ে আমাদের সবাইকে চঞ্চল করে তুলেছে। কপাল জোড় কদমে দৌড়াচ্ছে। সেই কপালে কী যেন হয়েছে। দেখে যদি মনে করেন ফাটিয়ে দেবেন। একবার ফাটলে আর ধরে কে ওকে। ভালো আছেন। ভালো থাকবেন। বউদিকে নমস্কার। বাকি পরিবারের সবাইকে ভালোবাসা।’ এ টি এম শামসুজ্জামান, ২৯ শে শ্রাবণ, ১৪১৩ বাংলা।
চঞ্চল লিখেছেন, ‘তারপর সত্যিই আমার কপালটা ফাটিয়ে দিলেন সামন্ত লাল সেন। এ টি এম ভাই যখন খুব অসুস্থ হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, একদিন বৃন্দাবনদা, খুশি আর আমি তাঁকে দেখতে গেলাম। আমাদের দেখে তিনি আনন্দে কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘আল্লাহর রহমতে, সকলের দোয়ায় আমি সুস্থ হইয়া যামু। আবার অভিনয় করমু, তোমরা রেডি হও।’ আমরা সত্যিই রেডি ছিলাম তাঁর অভিনয়ে ফেরার আশায়। কিন্তু প্রস্তুত ছিলাম না তাঁর চিরবিদায় নেওয়ার সংবাদ শোনার জন্য। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে সেই শেষ দেখা। আর সেন স্যারকে লেখা তাঁর হাতের লেখা চিঠিটা আগলে রেখেছি অনেক যত্নে, পরপারে শান্তিতে থাকুন হে কিংবদন্তি।’