সহশিল্পীর অনৈতিক সুবিধা চাওয়া ও মেকআপরুমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা: মীমাংসা সভায় যে সিদ্ধান্ত এল
৪ আগস্ট ঢাকার একটি শুটিং বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সামনে আসে অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের অসদাচরণ, সহশিল্পীর কাছে অনৈতিক সুবিধা চাওয়া, শুটিং সেটে আটকে রাখা, মেকআপরুমে হুমকি দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ। পরে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক একে অন্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে প্রত্যেকে তাঁদের সংগঠনে অভিযোগ করেন। কারণ, সবাই তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অস্বীকার করছিলেন। পরে এ ঘটনা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত গড়ায়। সে ঘটনা নিয়ে অবশেষে গত রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ছোট পর্দার পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন মীমাংসায় বসে। রাত ১০টা পর্যন্ত সেই মিটিং চললেও সেদিন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সংগঠনগুলো। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে গতকাল সোমবার রাতে সংগঠনগুলো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। কী ছিল সিদ্ধান্ত?
ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সভাপতি মনোয়ার হোসেন পাঠান এর সভাপতিত্বে রবিবার শুরু হয় বিচার সভা। এই বিচারসভায় অভিনয়শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিপ্যাবের একাধিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সবার কথা শোনেন তাঁরা। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘কেউ যেন ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় সেই জন্য আমরা সবার কথা আলাদাভাবে শুনেছি। এখানে নারী অভিনয়শিল্পী চমকের কথা শোনার জন্য আমাদের নারী সহকর্মী ছিলেন। যা ঘটেছে সেটা যেন সবাই প্রকাশ করতে সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছিলাম। পরের সব সংগঠনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
গতকাল সোমবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে অভিনয় শিল্পীসংঘ লিখিত আকারে তাদের সাংগঠনিক মতামত পাঠায়। সাংগঠনিক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘শুটিং সেটে উত্তেজিত অবস্থায় চমক যে আচরণ করেছেন, যার কারণে সেটে পুলিশ আসা, শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং পরিচালক আর্থিক ক্ষতি ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মাসুম বাশার মাসুম এবং নির্মাতা আদিব হাসানসহ ইউনিটের সবার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অভিনেত্রী চমকের ভুল ছিল এবং পরবর্তীতে অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।’
আহসান হাবীব নাসিম জানান, পরে সাংগঠনিক ভাবে তারা চমকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন অন্যায়ের শাস্তি সবাইকে পেতে হবে। এতে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হন সেটা গুরত্ব দিয়ে দেখা হয়। সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অভিনেত্রী চমক ক্ষতিগ্রস্ত নাটকের প্রযোজক, পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ অভিনেতা মাসুম বাশারসহ সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করবেন ও ক্ষমা চাইবেন। একই সঙ্গে শুটিং শেষ করার প্রয়োজনীয় অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বাধ্য থাকবেন চমক। এ ছাড়া তাকে অভিনেতা আরশ খান ও পরিচালক আদিব হাসানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে না ঘটে সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে চমককে। এমন ঘটনা আবার ঘটলে সংগঠন কর্তৃক শাস্তি গ্রহণ করতে তরুণ এই অভিনেত্রী বাধ্য থাকবেন। এই নিয়ে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করার কথা বলা হয়েছে চমককে। শুধু তাই নয় আগামী ৬ মাস সকল সংগঠনের পর্যবেক্ষণে থাকবেন চমক। আরও বলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া কোনো সাক্ষাৎকার কখনোই কোনো ঘটনার সুরাহা করতে পারে না। যে কারণে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো পোস্ট বা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না।
কয়েক দিন ধরে তরুণ অভিনয়শিল্পী রুকাইয়া জাহান চমক ও আরশ খান পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে আসছিলেন। আদিব হাসান পরিচালিত ‘শ্বশুর বাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের দ্বিতীয় দিনের শুটিংয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ঘটনার সূত্রপাত। পরে অভিনেত্রী চমক জানান, শুটিংয়ের বাইরে অভিনেতা আরশ খান তাঁর কাছে অনৈতিক সুবিধা চেয়েছেন। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেন আরশ খান। পরে অভিনয়শিল্পী মাসুম বাশারের সঙ্গে মেকআপ রুমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। মাসুম বাশার এই নিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘মেকআপ রুমে মেয়েটি চিৎকার করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছিল।’ সবার অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়াগুলো বিস্তারিত দেখুন এই লিংকে...